মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিসংবাদী ভূমিকা পালনকারী ও তৎকালীন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান সেনাপতি বঙ্গবীর জেনারেল মুহাম্মদ আতাউল গণি ওসমানীর ৩৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ রোববার (১৬ জানুয়ারি)। ১৯৮৪ সালের এই দিনে তার জীবনাবসান ঘটে।
দিবসটি উপলক্ষে পরিবারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক দল ও সংগঠন আজ বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছে।
তাঁর জন্ম ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর। সিলেটের তৎকালীন বালাগঞ্জ উপজেলার দয়ামীর এলাকায় পৈতৃক বাড়ি হলেও তাঁর বাবা খান বাহাদুর মফিজুর রহমান কর্মসূত্রে সুনামগঞ্জ থাকায় সেখানেই তাঁর জন্ম হয়েছিল। তাঁর মায়ের নাম জোবেদা খাতুন।
দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিন সবার ছোট। ১৯৩১ সালে জে. ওসমানী আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৪১ সালে ক্যাপ্টেন ও ১৯৪২ সালে মেজর পদে উন্নীত হয়েছিলেন।
মাত্র ২৩ বছর বয়সে একটি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক মনোনীত হয়ে সামরিক ইতিহাসে অনন্য কীর্তি তৈরি করেছিলেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী গঠনে তাঁর অবদান ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সময় তিনি লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হন। ১৯৫৭ সালে কর্নেল পদে উন্নীত হন। ইপিআর প্রতিষ্ঠায় তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর তাঁর ওপর যুদ্ধ পরিচালনার দায়িত্ব পড়ে। তিনি সেটি খুবই দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলার সময়ে সিলেট শহরের ধোপাদিঘিরপাড় এলাকায় অবস্থিত তাঁর বাসভবনটি পাকিস্তানের হানাদার বাহিনী ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিল।
১৯৮৭ সালের ৪ মার্চ তৎকালীন সরকার এ বাড়িটিতে ওসমানী জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৭০ ও ১৯৭৩ খ্রিষ্টাব্দে দুবার জাতীয় সংসদের সাংসদ নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল ঘোষিত মুজিবনগর সরকারে ওসমানীকে মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি নির্বাচিত করা হয়। যুদ্ধ চলাকালে তাঁর নেতৃত্বেই নৌ ও বিমানবাহিনী গঠিত হয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধের পর ২৬ ডিসেম্বর এম এ জি ওসমানীকে বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সের জেনারেল পদে নিয়োগ দেয়া হয়। ১৯৭২ সালে অবসর গ্রহণের পর তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন।
১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ডাক, তার, টেলিযোগাযোগ, অভ্যন্তরীণ নৌ যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নেন। ১৯৭৪ সালে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন এবং ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় জনতা পার্টি নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন।
১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এরপর তাঁর মৃতদেহ দেশে এনে শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী সিলেট শহরের শাহজালাল (রহ.)-এর দরগাহ-সংলগ্ন কবরস্থানে মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।