বছর পেরোলেও এক ছাতার নিচে আসেনি সব উপবৃত্তি - দৈনিকশিক্ষা

বছর পেরোলেও এক ছাতার নিচে আসেনি সব উপবৃত্তি

মুসতাক আহমদ |

এক বছর আগে সিদ্ধান্ত হলেও এক ছাতার নিচে আনা সম্ভব হয়নি সরকারের উপবৃত্তি কার্যক্রম। উপকার ভোগী নির্বাচনে অনিয়ম, আলাদা হারে অর্থ প্রদানসহ নানা বিশৃঙ্খলার কারণে চারটির পরিবর্তে এক প্রকল্পের মাধ্যমে ষষ্ঠ থেকে স্নাতক শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের সমতার ভিত্তিতে উপবৃত্তি দেয়ার কথা। এ ব্যাপারে প্রণীত কর্মকৌশল গত বছরের অক্টোবরে অনুমোদন হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকদের অনীহা ও অদক্ষতার কারণে তা এক বছরে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক) নাজমুল হক খান বলেছেন, শুধু উপবৃত্তি দেয়া প্রকল্পগুলোই নয়, শিক্ষার সব প্রকল্প এক ছাতার নিচে আনা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতিমধ্যে মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (এসইডিপি) নামে একটি কর্মসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। ওই কর্মসূচির অধীনে উপবৃত্তি দেয়া একটি (সেকায়েপ) এসেছে। আগামী জুনের পর আসবে আরেকটি (সেসিপ)। এভাবে বিদ্যমান মেয়াদ শেষে বাকিগুলোও একীভূত করা হবে। তিনি বলেন, তবে খুশির খবর হচ্ছে, এক ছাতার নিচে উপবৃত্তি কার্যক্রম পরিচালনার কর্মকৌশল চূড়ান্ত করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, উপবৃত্তি দেয়ার কাজ চারটি আলাদা প্রকল্পে বাস্তবায়িত হওয়ায় জনবল, অফিসসহ নানা ব্যয় অযথাই হচ্ছে। এক ছাতার নিচে চারটি চলে এলে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় রোধ হবে। এ ছাড়া বাস্তবভিত্তিক আরও কিছু সমস্যা আছে। উপবৃত্তি প্রদানের হার, শিক্ষার্থী নির্বাচনের ভিত্তি, শ্রেণীভিত্তিক শিক্ষার্থীর হারের ভিন্নতার কারণে সুবিধাভোগীর সংখ্যা ও উপবৃত্তি প্রাপ্যতার ক্ষেত্রে পরিমাণগত পার্থক্য তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে এক প্রকল্পের সঙ্গে আরেকটির মানদণ্ডগত পার্থক্য থাকায় এই সমস্যা বেশি হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, ছাত্র ও ছাত্রী নির্বাচনে আলাদা হার। এর মধ্যে সেসিপে ২০ শতাংশ ছাত্র ও ৩০ শতাংশ ছাত্রী উপবৃত্তি পায়। এসইএসপি থেকে ১০ শতাংশ ছাত্র ও ৩০ শতাংশ ছাত্রী এবং এইচএসএসপি থেকে ১০ শতাংশ ছাত্র ও ৪০ শতাংশ ছাত্রী উপবৃত্তি পায়। সেকায়েপ প্রকল্প থেকে পিএমটি পদ্ধতিতে সুবিধাভোগী নির্ধারণ করা হয়। গবেষণায় বলা হয়েছে, ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সেসিপ, সেকায়েপ ও এসইএসপি থেকে ১০০ টাকা করে উপবৃত্তি পান। সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীরা সেসিপ ও এসইএসপি থেকে ১০০ করে হলেও সেকায়েপ থেকে পান ১২৫ টাকা করে। অষ্টম শ্রেণীতে তিন প্রকল্প থেকে তিন ধরনের অর্থ দেয়া হয়। এর মধ্যে সেসিপ দেয় ১২৫ টাকা, সেকায়েপ ১৮০ ও এসইএসপি দেয় ১২০ টাকা। নবম শ্রেণীতে সেসিপ দেয় ১৭০ টাকা, সেকায়েপ দেয় ১৮০ টাকা ও এসইএসপি দেয় ১৫০ টাকা। দশম শ্রেণীতে সেসিপ ২১০ টাকা, সেকায়েপ ২০০ ও এসইএসপি ১৫০ টাকা দেয়। এই তিন প্রকল্প থেকে পরীক্ষা ফি বাবদ ৭৫০ টাকা করে দেয়া হচ্ছে। অপর দিকে উচ্চ মাধ্যমিকে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা এইচএসএসপি থেকে পায় ১৭৫ টাকা করে, আর অন্য বিভাগের শিক্ষার্থীরা ১২৫ টাকা করে। পরীক্ষার ফি বিজ্ঞানে ৯০০ এবং অন্যান্য বিভাগে ৬০০ টাকা দেয়া হয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এক ছাতার নিচে কার্যক্রম এলে সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে সারা দেশে অভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হবে। উপবৃত্তিধারী নির্বাচন, উপবৃত্তির শর্ত, হার, ব্যবস্থাপনা, উপবৃত্তি বিতরণ প্রক্রিয়া, বাজেট ও অর্থ ছাড়, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ইত্যাদি একক ও অভিন্ন প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হবে। শিক্ষার্থীরা ভর্তি হওয়ার পর উপবৃত্তিভোগী নির্বাচনে শ্রেণী শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধানে শ্রেণীকক্ষে নতুন ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীরা আবেদন ফরম পূরণ করবে। স্থানীয় পর্যায়ের শিক্ষা প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করে গঠিত একাধিক কমিটি পূরণকৃত আবেদনগুলো বাছাই করে অনলাইনে তথ্য প্রক্রিয়ার জন্য প্রেরণ করবে। এরপর সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উপবৃত্তিধারী নির্বাচন চূড়ান্ত করা হবে। বর্তমানে দারিদ্র্য, শিক্ষার্থীর অভিভাবকের বার্ষিক আয়, বেকার পিতামাতা, এতিম, অক্ষম, ভূমিহীন প্রতিবন্ধী ইত্যাদি দেখা হয় শিক্ষার্থী নির্বাচনে। তবে এসব ক্ষেত্রে প্রকৃত উপকারভোগী নির্বাচন কর্তৃপক্ষের সততা ও নিরপেক্ষতার ওপর নির্ভর করে।

তবে প্রস্তাবিত নীতিমালায় উপবৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অর্থের হার দ্বিগুণ করার কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবিত সমন্বিত হার অনুযায়ী, ষষ্ঠ শ্রেণীতে ২৫০ টাকা, টিউশন ফি মাসিক ৩৫ টাকা ও ইউনিফর্ম বাবদ এক হাজার টাকা করে বার্ষিক মোট চার হাজার ৪২০ টাকা, সপ্তম শ্রেণীতে বার্ষিক চার হাজার ৪২০ টাকা, অষ্টম শ্রেণীতে পাঁচ হাজার ২০ টাকা, নবম শ্রেণীতে ছয় হাজার ৪০০ টাকা, দশম শ্রেণীতে সাত হাজার ৪০০ টাকা, একাদশ বিজ্ঞানে আট হাজার ৭৮০, অন্যান্য বিষয়ে আট হাজার ৭৮০ এবং দ্বাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞানে ৯ হাজার ৪৬০ ও অন্যান্য বিভাগের জন্য আট হাজার ৯৮০ টাকা দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।

এ ছাড়াও ২০২৮ সাল পর্যন্ত বর্তমান হারের ৩০ শতাংশ বাড়িয়ে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ পর্যন্ত উপবৃত্তি ৩২৫ থেকে ৬৫০, টিউশন ফি মাসিক ৪৫ থেকে ১০০ এবং ইউনিফরমের জন্য এক হাজার ৩০০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এসডিজি-৪ বাস্তবায়নে ২০২৮ সালের পরে সর্বনিম্ন সাত হাজার ৩০০ থেকে ১৫ হাজার ৭৪০ টাকা করারও প্রস্তাব করা হয়েছে।

এসডিজি-৪ এর সাতটি আউটকাম ও লক্ষ্যমাত্রা ও তিনটি প্রধান বাস্তবায়ন লক্ষ্যমাত্রার মাত্র রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম নির্দিষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে-২০৩০ সালের প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট ও ফলপ্রসূ শিখন ফল অর্জনের লক্ষ্যে সব শিক্ষার্থীর জন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা সম্পূর্ণ বিনা ব্যয়ে শিক্ষা নিশ্চিত করা।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক হিসাবে দেখা গেছে, চার প্রকল্পে প্রায় ৪০ লাখ ছাত্রছাত্রী উপবৃত্তি পাচ্ছে। এসব শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬৮ শতাংশ ছাত্রী, ছাত্র ৩২ শতাংশ। প্রস্তাবিত সমন্বিত উপবৃত্তি পদ্ধতিতে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ দরিদ্র শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তি প্রদানের কথা বলা হয়েছে। এ ছাড়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, তৃতীয় লিঙ্গ, প্রতিবন্ধী, প্রাক্তন ছিটমহল অধিবাসী শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে শতভাগ উপবৃত্তি প্রদানের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে।

জানা গেছে, ১৯৯৪ সালে দেশে উপবৃত্তি কার্যক্রম শুরু হয়। লেখাপড়ায় শিক্ষার্থী বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গত আড়াই দশকে উপবৃত্তি কার্যকর ও পরীক্ষিত কর্মসূচি হিসেবে স্বীকৃত। এখন পর্যন্ত চারটি প্রকল্পের মাধ্যমে মাধ্যমিক থেকে পরবর্তী স্তরের শিক্ষার্থীরা উপবৃত্তি পাচ্ছে। এগুলো হচ্ছে, সেকেন্ডারি এডুকেশন কোয়ালিটি অ্যান্ড অ্যাকসেস এনহ্যান্সমেন্ট প্রজেক্ট (সেকায়েপ), সেকেন্ডারি এডুকেশন সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট প্রোগ্রাম (সেসিপ), মাধ্যমিক শিক্ষা উপবৃত্তি প্রকল্প (এসইএসপি) এবং উচ্চ মাধ্যমিক উপবৃত্তি প্রকল্প (এইচএসএসপি)। এগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি মাধ্যমিক এবং শেষেরটি উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দিয়ে থাকে।

 

সৌজন্যে: সমকাল

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0075819492340088