বদলি-পদায়ন নিয়ে চরম অসন্তোষ - দৈনিকশিক্ষা

বদলি-পদায়ন নিয়ে চরম অসন্তোষ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বদলি ও পদায়ন নিয়ে শিক্ষা ক্যাডারে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। নিয়ম ভেঙে পদায়ন করায় চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) মহাপরিচালকসহ প্রশাসনের বিভিন্ন দফতর ও বোর্ডের ঊর্ধ্বতন পদে সম্প্রতি কিছু জুনিয়র শিক্ষককে পদায়ন করা হয়েছে। রোববার (৩১ মার্চ) দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ কথা জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন  মুসতাক আহমদ।

কয়েকদিন আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে অভিযুক্ত কয়েকজন শিক্ষককে বসানো এবং সরকারি দলের ঘনিষ্ঠ কয়েকজনকে ওএসডি করায় পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়েছে। এছাড়া জুনিয়রদের দিয়ে শ’ শ’ সিনিয়র কর্মকর্তার এসিআর লেখানোর পথ খোলা হয়েছে। বদলি, পদায়ন ও ওএসডির ঘটনায় শিক্ষা ক্যাডারে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে কোনো কথা বলার মতো অবস্থায় আমি নেই।’

অপরদিকে, শিক্ষা ক্যাডারের সংগঠন ‘বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি’র সভাপতি অধ্যাপক আইকে সেলিমউল্লাহ খোন্দকার 

বলেন, মাউশির মহাপরিচালক, পরিচালক এবং বিভিন্ন বোর্ড ও দফতর-অধিদফতরের পদগুলোতে সাধারণত সিনিয়র শিক্ষকদের পদায়নের রেওয়াজ আছে।

বহু বছর ধরে সাধারণ শিক্ষকরা এটা দেখতে অভ্যস্ত। ওইসব পদের কর্মকর্তারা কলেজ অধ্যক্ষ-উপাধ্যক্ষ, সিনিয়র অধ্যাপকদের এসিআর লেখা, কাজের নির্দেশনা দেয়া ও সমন্বয় করাসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকেন। এ কারণে এসব পদে সিনিয়র অধ্যাপকদের আশা করে সাধারণ শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষা ক্যাডারের সর্বোচ্চ পদ ধরা হয় মাউশি মহাপরিচালককে। আর মাউশির কলেজ ও প্রশাসন শাখার পরিচালক পদটি এ ক্যাডারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদ ধরা হয়। দুটি পদেই ১৪তম বিসিএসের দুই কর্মকর্তাকে বসানো হয়েছে।

অথচ বর্তমানে সপ্তম, অষ্টম, নবম, দশম, একাদশ ও ত্রয়োদশ বিসিএসের কমপক্ষে দেড় হাজার কর্মকর্তা চাকরিতে আছেন। সাধারণত দুই কর্মকর্তা অধ্যাপক এবং কলেজের অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষের এসিআর (বার্ষিক গোপনীয় প্রতিবেদন) স্বাক্ষর করেন।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন সরকারি অধিদফতর, দফতর, বোর্ডগুলোর মূল সংস্থা মাউশি। সেই হিসেবে জুনিয়র এসব কর্মকর্তা একদিকে সিনিয়রের এসিআর স্বাক্ষর ও প্রতিস্বাক্ষর করবেন। অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় আবির্ভূত হবেন। বিষয়টি নিয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাদের মধ্যে অসন্তোষ ও হতাশা তৈরি হয়েছে।

এছাড়া অসংখ্য সিনিয়রকে ডিঙিয়ে জুনিয়রকে শীর্ষ পর্যায়ে পদায়ন করায় নেতিবাচক দৃষ্টান্তও তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। এর ফলে জুনিয়রদের মধ্যে ‘যে কোনো উপায়ে’ ঊর্ধ্বতন পদে বসার প্রবণতাও তৈরি হবে। পাশাপাশি কলেজ ও শিক্ষা বিভাগের দফতরে এসব কর্মকর্তার বন্ধু ও ঘনিষ্ঠদের আধিপত্য সৃষ্টি হতে পারে। সব মিলে প্রশাসন ও ক্যাডারের ‘চেইন অব কমান্ড’ ভেঙে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।

বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির একাধিক নেতা জানান, জুনিয়রদের সিনিয়র কর্মকর্তাদের পদে বসানোর আরও অনেক ধরনের ‘প্রতিক্রিয়া’ আছে। ২০১৫ সালে ঘোষিত জাতীয় বেতন স্কেল ঘোষণার পর বিভিন্ন ক্যাডার সম্মিলিতভাবে আন্দোলন গড়ে তুলেছিল।

তখন সরকার অন্য ক্যাডারের পাশাপাশি শিক্ষা ক্যাডার থেকে বৈষম্য নিরসনের লক্ষ্যে প্রস্তাব নেয়। সেই প্রস্তাব অনুযায়ী মাউশি মহাপরিচালক পদ গ্রেড-১ এবং পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন) গ্রেড-২ হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মোট অধ্যাপক পদের ৫০ শতাংশ গ্রেড-৩ করার প্রস্তাবও আছে। ওই প্রস্তাব বর্তমানে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আছে।

কিন্তু মহাপরিচালক ও পরিচালক পদে এভাবে জুনিয়রদের পদায়ন করা হলে প্রস্তাব অনুমোদন যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে, তেমনি প্রস্তাব পাস হলে ‘জুনিয়ররা পদে থাকতে পারবেন না’- এমন আশঙ্কা থেকে তা (প্রস্তাব) অনুমোদন তদবিরও ধীরগতি পেতে পারে।

আর এসবের যেটিই ঘটুক না কেন, ক্যাডার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। নেতারা আরও বলেন, মহাপরিচালকসহ শীর্ষপদে যারা আসীন আছেন তারা বর্তমানে চতুর্থ গ্রেডের কর্মকর্তা। তাদের গ্রেডেশন (জ্যেষ্ঠতা) এতই নিচে যে, সরকার ৫০ শতাংশ অধ্যাপককে তৃতীয় গ্রেড দিলেও তারা এটা পাবেন না। জুনিয়র কর্মকর্তাকে ঊর্ধ্বতন পদে পদায়ন করায় সিনিয়রদের বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হবে। দাফতরিক কাজ ও যোগাযোগ নিয়েও বিব্রতকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

২৪ মার্চ শিক্ষা বিভাগে বড় ধরনের রদবদল করা হয়। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার কাজের কেন্দ্রবিন্দু মাউশির পরিচালক (কলেজ ও প্রশাসন), বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ ঊর্ধ্বতন পদ এবং প্রকল্পের পরিচালকসহ ২৬টি গুরুত্বপূর্ণ পদে আকস্মিক বদলির আদেশ দেয়া হয়।

আদেশে অপেক্ষাকৃত ‘প্রাইজ পোস্টিং’ পাওয়া কর্মকর্তাদের বেশির ভাগই শিক্ষা ক্যাডারে বিদ্যমান পাঁচটি গ্রুপের একটির (বিসিএস সাধারণ শিক্ষা আন্তঃফোরাম সমন্বয় কমিটি) সদস্য বলে জানা গেছে।

এ গ্রুপের কর্মকর্তারা শিক্ষা ক্যাডারের বিখ্যাত ‘ফেমাস বাড়ৈ’র অনুসারী হিসেবে পরিচিত। ফেমাস বাড়ৈ সাবেক এক মন্ত্রীর পদচ্যুত এপিএস, যার বিরুদ্ধে শিক্ষা প্রশাসন নিয়ন্ত্রণসহ নানা দুর্নাম আছে। উল্লিখিত বদলির আদেশের পর সন্তোষ প্রকাশ করে তাকে ফেসবুকে পোস্ট দিতে দেখা গেছে।

২৪ মার্চের নতুন বদলির আদেশ পাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আছে। আছে সরকারবিরোধী প্রচারণা এবং সরকারি সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে সভা-সমাবেশ করার অভিযোগও।

এ কারণে বদলির আদেশ জারির পর থেকে ক্ষুব্ধ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে লেখালেখি করছেন। পাশাপাশি শিক্ষামন্ত্রী এবং সচিবের কাছে প্রাইজ পোস্টিং পাওয়া কর্মকর্তাদের ‘জীবনবৃত্তান্ত’ তুলে ধরে চিঠি লিখেছেন অনেকে। কয়েকজনকে আওয়ামীবিরোধী আদর্শের এমনকি ছাত্রজীবনে ছাত্রশিবির, ছাত্রদল ও বাসদসহ অন্য সব সংগঠনের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত ছিলেন বলে দাবি করা হয়েছে। নতুন বদলির ফলে শিক্ষা ভবনে আওয়ামীবিরোধী কর্মকর্তাদের আধিক্য বেড়েছে বলেও তাতে দাবি করা হয়।

সংশ্লিষ্টরা জানান, মাদ্রাসা বোর্ডের পরিদর্শক থেকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হয়েছেন নবীন অধ্যাপক আবুল বাসার। মাদ্রাসা বোর্ডে পদায়নের আগে তিনি ঢাকা বোর্ডেরই উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ছিলেন। কয়েক বছর আগে এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপক অভিযোগ উঠার পর তাকে বদলি করা হয়েছিল। ঢাকা বোর্ডে পদায়নের আগে তাকে মাউশির সহকারী পরিচালকের পদ থেকে নোয়াখালীর একটি কলেজে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছিল।

মাদ্রাসা বোর্ডের রেজিস্ট্রার হিসেবে পদায়ন পাওয়া কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমানকে গত কয়েক বছরে একাধিকবার বিভিন্ন পদে বদলি করা হয়েছে। তবে তিনি ঘুরেফিরে ঢাকায়ই তুলনামূলক ‘প্রাইজ পোস্টিং’ পেয়েছেন।

মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক কামালউদ্দিন একই বোর্ডের উপ-রেজিস্ট্রার ছিলেন। দু’জনই তুলনামূলক জুনিয়র কর্মকর্তা। এভাবে নতুন পদায়ন পাওয়া অধিকাংশই গত ১০ বছর তুলনামূলক প্রাইজ পোস্টিং পেয়েছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে, ২৪ মার্চ পৃথক আদেশে রেকর্ডসংখ্যক ১৮ জনকে একযোগে ওএসডি করা হয়। ওএসডির আদেশপ্রাপ্তদের বেশির ভাগের বিরুদ্ধে নানা দুর্নাম আছে। সেই হিসেবে ওই আদেশকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা।

এতে অনেকে সন্তোষও প্রকাশ করেছেন। কিন্তু সেই ঝড়ে আউট হয়ে গেছেন ক্লিন ইমেজের কর্মকর্তা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সময়ের তুখোড় ছাত্রলীগ নেতা মুহাম্মদ জাকির হোসেন ও কামরুন নাহার। জাকির হোসেন সাধারণ প্রশাসন সহকারী পরিচালক এবং কামরুন নাহার গবেষণা কর্মকর্তা ছিলেন।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072088241577148