বদলে যাচ্ছে কাজাখদের বর্ণমালা - দৈনিকশিক্ষা

বদলে যাচ্ছে কাজাখদের বর্ণমালা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আধুনিক পৃথিবীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মেলাতে নিজেদের বর্ণমালা পালটে ফেলছে কাজাখস্তান। সোভিয়েত ছায়াতল ছেড়ে আসা দেশটি ‘সিরিলিক’ থেকে সরে ‘লাতিন’ বর্ণমালা তৈরি করেছে। সাত বছরের চেষ্টায় ৩২টি বর্ণ নিয়ে তৈরি হয়েছে তাদের বর্ণমালা।

লাতিন হরফের পাশাপাশি ৯টি বর্ণ আছে, যা সম্পূর্ণ আলাদা। এগুলো কাজাখদের উচ্চারণের সঙ্গে মিলিয়ে রাখা হয়েছে বর্ণমালায়।

এই প্রচেষ্টা সাত বছরের হলেও, বর্ণমালা রূপান্তরে রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে। সেই সময় ফরমান জারি করে সিরিলিক থেকে লাতিন বর্ণমালায় যাওয়ার কথা জানান তৎকালীন প্রেসিডেন্ট নুরসুলতান নজরবায়েভ।

২০২৫ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে স্কুলের পাঠ্যবই, সাহিত্য, সরকারি নথি, সড়ক নির্দেশক তথা দেশের সবকিছু লেখা হবে নতুন হরফে। কাজাখাস্তানের 'আধ্যাত্মিক আধুনিকায়নে' এই পরিবর্তনটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন দেশটির নতুন শাসক প্রেসিডেন্ট কাসিম-জমার্ট তোয়াকেভ। তার মতে, বিশ্বের ৯০ ভাগ তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে লাতিন বর্ণে, সেখানে নিজেদের বিচ্ছিন্ন রাখার সুযোগ নেই। 

দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, এই বর্ণমালা রূপান্তরের বাজেট ধরা হয়েছে ৫০৫ মিলিয়ন ইউরো। এর মধ্যে গত এপ্রিলে নতুন বর্ণমালা খচিত কয়েন ছেড়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০২১ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে এটিকে দেশটির অফিসিয়াল বর্ণমালা ঘোষণা দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। শুরু হয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ।

শহুরে জীবনের এই পরিবর্তন খুব একটা প্রভাব না ফেললেও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য জটিলতা হতে পারে। এ আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। শহরের প্রথম সারির ২৫টি স্কুল ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীরা মনোযোগ দিয়ে শেখার চেষ্টার করছে নতুন বর্ণমালা। বর্ণগুলোকে লিখতে শেখা, বাঁকগুলো নিপুণভাবে আয়ত্ব করা নিয়ে বেশ মনোযোগী তারা। কিন্তু আলমাতি শহরের কাছের কাইনজর গ্রামের স্কুলগুলোতে বিপরীত চিত্র বিরাজ করছে। প্রান্তিক এলাকার শিশুরা এখনো সিরিলিক বর্ণমালা শিখছে। সরকারের এমন সিদ্ধান্তের কারণে আবারো নতুন করে নতুন বর্ণমালা শিখতে হবে কোমলমতি এসব শিক্ষার্থীদের।

শিক্ষকদেরও নতুন বর্ণমালা নিয়ে ধাপে ধাপে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আগামী বছর থেকে শ্রেণিকক্ষে পুরোদমে এই বর্ণমালায় ক্লাশ নিতে হবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

বদলে যাওয়া বর্ণমালা নিয়ে শুরুতে কিছুটা ঝক্কি থাকলেও দীর্ঘ মেয়াদে দেশের জন্য ভালো মনে করছেন কাজাখরা। কাইনজরের গ্রামীণ স্কুলের পরিচালক তাবিজখান তাতোকানোভিচ বলেন, আমি মনে করি এটি সময়ের দাবি। তথ্য-প্রযুক্তির এই যুগে এটা খুবই ইতিবাচক পরিবর্তন। 

তার মতে, লাতিন বর্ণমালার কারণে শিক্ষার্থীরা খুব সহজে ইংরেজি ভাষাটাও শিখে ফেলতে পারবে। ফলে, বিজ্ঞানের পড়াশোনা আর সাহিত্য পাঠ সহজ হবে বলেও মনে করেন তিনি।

কাজাখস্তানের এই পরিবর্তনকে 'রাশিয়া বলয়' থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা হিসেবেও দেখছেন অনেকে। যদিও কাজাখ কর্তৃপক্ষ মনে করে মধ্য এশিয়ার জন্য রাশিয়া গুরুত্বপূর্ণ মিত্র। রাজনৈতিক বিশ্লেষক আইডস স্যারাম এই রূপান্তরকে 'কাজাখ ভ্যালু' প্রতিষ্ঠার চেষ্টা হিসেবে দেখছেন। তার মতে, সিরিলিক থেকে ফিরে আসার এই সিদ্ধান্ত দেশটির জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত আকাঙ্ক্ষার বহিঃপ্রকাশ। 

আইডস স্যারাম বলছেন, কয়েক বছর ধরে দেশটিতে কাজাখ ভাষায় কথা বলা লোকের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। আর তাই দেশটির সরকারও এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শত বছরের ইতিহাসে এ নিয়ে তিনবার বর্ণমালা পরিবর্তন করলো দেশটি। সোভিয়েত ইউনিয়নের সেক্যুলার শিক্ষার বলি হয়ে ১৯২৯ খ্রিষ্টাব্দে আরবি বর্ণমালা ছেড়ে লাতিন বর্ণমালা গ্রহণ করে কাজাখরা। ১৯৪০ খ্রিষ্টাব্দে এসে আরও এক দফা রূপান্তর। নিজ ভাষায় শিক্ষার অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং সোভিয়েত ইউনিয়নকে একীভূত করার লক্ষ্য পূরণের ধোঁয়া তুলে লাতিন ছেড়ে কাজাখদের ফিরতে হলো সিরিলিক বর্ণমালায়। আড়ালে এই প্রক্রিয়াকে অনেকেই ‘রাশিয়াকরণের’ অংশ হিসেব দেখেছেন।

সাম্প্রতিক বিশ্ব ইতিহাসে এমন আরও কিছু উদাহরণ আছে৷ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে সিরিলিক ছেড়ে লাতিনে ফেরে আজারবাইজান। আর ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দে এসে উজবেকিস্তান আর তুর্কমেনিস্তানও নিজেদের বর্ণমালা হিসেবে লাতিনকে বেছে নেয়।

সূত্র: ডয়চে ভ্যালে

শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha শিক্ষায় বরাদ্দ বেড়েছে, আরো বাড়বে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না - dainik shiksha সমাবর্তনের অজুহাতে সনদ আটকে রাখা যাবে না হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে স্কুলছাত্রীর মৃত্যু চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু - dainik shiksha চুয়েটে আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় - dainik shiksha প্রাথমিকের প্রশ্ন ফাঁসে অল্পদিনে কয়েকশ কোটি টাকা আয় রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট - dainik shiksha রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম সংবিধানবিরোধী নয়: হাইকোর্ট কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034470558166504