কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারে আমূল পরিবর্তন হচ্ছে 'বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইন'। ৫১ বছরের পুরনো আইনে চলছে এ বোর্ড। এত বছরে দেশে কারিগরি শিক্ষার আমূল পরিবর্তন হয়েছে। সিলেবাসে যুক্ত হয়েছে নতুন নতুন বিষয়। এসেছে নতুন প্রযুক্তি। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে যুগোপযোগী করতে 'বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড আইন-২০১৮' খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। আগের আইনে ছিল ৪৪টি ধারা, প্রস্তাবিত খসড়ায় ২৭টি ধারা। অনুমোদনের জন্য প্রস্তাবিত এ খসড়া আজ সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে তোলা হতে পারে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা বিভাগ দৈনিকশিক্ষাকে এ তথ্য নিশিচত করেছে।
জানা যায়, আগামী ২০২০ খ্রীস্টাব্দের মধ্যে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা শতকরা ২০ ভাগে উন্নীত করা। সে জন্য এই আগের আইনের অনেক কিছুই পরিবর্তন করতে হচ্ছে।
কী আছে নতুন আইনে : নতুন আইনে কারিগরি শিক্ষার নতুন নতুন কোর্স-কারিকুলাম স্থান পেয়েছে। সংসদে আইনটি পাস হলে বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের সাংগঠনিক কাঠামোতেও বড় পরিবর্তন আসবে। বর্তমানে ১৪ সদস্যের পরিচালনা বোর্ড এটি পরিচালনা করে। নতুন আইনে সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে ২০ জন নির্ধারণ করা হয়েছে। নতুন আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, সরকারের নিযুক্ত উপসচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা প্রেষণে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের সচিব পদে সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, নতুন আইনে বোর্ডের স্বায়ত্তশাসনের ক্ষমতা কিছুটা কমবে। বোর্ডের নতুন পদ-সৃজনে মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে।
খসড়া আইনটি প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্নিষ্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের একজন ঊর্ধ্বতন কমকর্তা বলেন, কারিগরি শিক্ষা বোর্ড পরিচালনা সংক্রান্ত বর্তমান আইনটি ইংরেজিতে প্রণীত। প্রস্তাবিত আইনটি বাংলায় রচনা করা হয়েছে। এ ছাড়া সময়ের চাহিদা অনুসারে এ আইনের সংজ্ঞায়ও পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এই উপসচিব জানান, প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে দেশের বিভিন্ন স্থানে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের আঞ্চলিক কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করা যাবে। এ ছাড়া কারিগরি বোর্ডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে তাতে কৃষি মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর প্রতিনিধি রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগের আইনে বোর্ডের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বলতে ইস্ট পাকিস্তানের গভর্নরকে নির্ধারণ করা ছিল। নতুন আইনে নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বলতে 'সরকার'কে বোঝাবে।
জানা গেছে, নতুন আইনের প্রণীত খসড়ায় কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান নিয়োগ, বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ, চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ও ক্ষমতা নতুন করে নির্ধারণ করা হয়েছে। সার্বিকভাবে বোর্ডের ক্ষমতা ও কার্যাবলিও সুনির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য শিক্ষা বোর্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়সসীমা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০ বছর। বোর্ডের তহবিল ব্যবস্থাপনা, সংরক্ষণ ও বাজেট প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। নিজস্ব জনবল পরিচালনার জন্য নিজস্ব প্রবিধান প্রণয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে বোর্ডকে। এ ছাড়া বোর্ডের অধীনে প্রতিটি কোর্স কারিকুলাম কীভাবে পরিচালিত হবে, কতদিন চলবে, পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা ও সনদ প্রদানের বিষয়গুলোর ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে বোর্ডকে।