বরগুনার স্কুল ভবন ধসের পর অভিভাবকদের উদ্বেগ - Dainikshiksha

বরগুনার স্কুল ভবন ধসের পর অভিভাবকদের উদ্বেগ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বরগুনার একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন ধসে এক ছাত্রীর মৃত্যুতে আলোচনায় এসেছে স্কুল ভবনের নিরাপত্তার বিষয়টি।

দুর্ঘটনার পর ওই স্কুলের শিশুরা বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আতঙ্কে অন্যান্য স্কুলের জরাজীর্ণ ভবনেও ক্লাস নেয়া বন্ধ করার খবর পাওয়া গেছে।নিহত মানসুরার বাড়ি গেন্ডামারা গ্রামে। স্কুল থেকে তার বাড়ির দূরত্ব মাইল খানেক। কাঁচা রাস্তা মাড়িয়ে তার বাড়ি গিয়ে দেখা যায় এখনও শোকের আবহ। পরিবেশ থমথমে। দরিদ্র পরিবারটিকে সমবেদনা জানাতে পাড়া প্রতিবেশিরা এখনো ভিড় করছে মানসুরার বাড়িতে। শুক্রবার (১২ এপ্রিল) বিবিসি  বাংলার এক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা যায়।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সেখানে কথা বলে বোঝা গেল স্থানীয়রা অনেকেই এখন উদ্বিগ্ন তাদের ছেলেমেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে। তাদের মধ্যে একজন বলছিলেন, "আমরা তো পোলাপান স্কুলে মানুষ হবার জন্য পাঠাই, আমরা তো লাশ হইয়া ফেরার জন্য পাঠাই না।

"এহন তো সবাই খোঁজ নেবে স্কুল ঠিক আছে কিনা। ভয়ে আমরা তো পোলাপান পাঠাই না স্কুলে।"

মানসুরার স্কুলের নাম ছোটবগী পি কে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তালতলী উপজেলার ওই স্কুলটিতে গিয়ে দেখা যায় দুর্ঘটনা কবলিত ভবনটির চারটি কক্ষে সিলগালা করা। 

প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, একতলা পাকা ভবনটির একটি কক্ষে দেখা যায়, ছাদের বিমের অংশবিশেষ ধসে পড়ে আছে। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ভাঙা কংক্রিট, বই খাতা। মেঝেতে রক্তের দাগ। এলোমেলোভাবে পড়ে আছে শিশুদের পায়ের স্যান্ডেল। 

শনিবার এ কক্ষেই ছাদের বিম মাথায় পড়ে মারা যায় তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী মানসুরা, আর আহত হয় দশ ছাত্রছাত্রী।

ঘটনার দিন ওই ক্লাসেই বাংলা পড়াচ্ছিলেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কুলসুম আক্তার। তিনি নিজেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। বলছিলেন, কোনো কিছু বোঝার আগেই হঠাৎ ছাদের বিমের অংশ ভেঙে ছাত্রছাত্রীর মাথায় পড়ে।

তিনি বলেন, "সব বাচ্চারাই সন্তানের মতো। যেহেতু এই হৃদয়বিদারক দৃশ্যটা আমার চোখের সামনেই ঘটেছে, অন্য কেউ ভুলতে পারলেও আমি সারা জীবনেও ভুলতে পারবো না।"  

স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাকেরিন জাহান দুই মাস হয়েছে এই স্কুলে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, "স্কুলের মোট ছাত্র-ছাত্রী ১৬৩ জন। ঘটনার পর থেকে কেউ স্কুলে আসে নাই।

"ছেলেমেয়েদের আবার স্কুলে নিয়ে আসার জন্য আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে অভিভাবকদের বোঝাবো" - বলছিলেন তিনি।

স্কুলটির এমন অবস্থা আগে থেকে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে কিনা এ প্রশ্নে প্রধান শিক্ষক বলেন, ভবনটির বয়স মাত্র পনের বছর। ধসে পড়ার আগে ভবনের বিমে ফাটল ছিল কিন্তু এতটা ঝুঁকিপূর্ণ ধারণা করা যায়নি।

"এ ভবনটি জেএসসি এবং এসএসসি পরীক্ষার সেন্টার। এ বছরও এখানে এসএসসি পরীক্ষা হইছে। অনেক অফিসার আসছে তারাও তো বলে নাই যে এটা ঝুঁকিপূর্ণ। আমিও বুঝতে পারি নাই।"

বরগুনার এ দুর্ঘটনায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে অন্যান্য স্কুল নিয়েও। প্রাথমিক বিদ্যালয় লাগোয়া হাই স্কুলেরও একটি ভবনে শিক্ষার্থীরা এখন ক্লাস করা বন্ধ করে দিয়েছে।

উপজেলার উত্তর গেন্ডামারা প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় সেখানে অল্প কয়েক জন শিক্ষার্থীকে অস্থায়ী টিনশেডে ক্লাস করছে।

ওই স্কুলের পরিত্যক্ত ভবনের ছাদ ধসে গত বছর দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্র মারা যায়। বিদ্যালয়ের জন্য যে নতুন ভবন উঠছে সেটির নির্মাণে সমস্যা আছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

তবে ঠিকাদারের দাবি, তিনি নিয়ম মেনেই কাজ করছেন। কিন্তু ভবন নির্মাণে ২০ মি.মি. রডের পরিবর্তে ১৬ মি.মি. রড ব্যবহারের প্রমাণ পাওয়া গেছে।

জনগণের অভিযোগের পর কর্তৃপক্ষ সেটি ঠিকাদারকে শোধরাতে বাধ্য করেছেন।

এদিকে, তালতলি উপজেলার স্কুলে দুর্ঘটনা এবং বিদ্যালয় ভবনগুলোর বর্তমান পরিস্থিতির কারণে শিক্ষা কার্যক্রমে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী মনিরুজ্জামান রিপন জানান এলাকার বেশিরভাগ স্কুল জরাজীর্ণ।

"উপজেলার ৭৯টি স্কুল তার মধ্যে ৬৭টি ভবন ঝূঁকিপূর্ণ। মেরামতের ক্ষেত্রে আমরা সরাসরি গিয়ে দেখি, তদারকিও করতে পারি। আর নতুন ভবনে আমাদের তদারকি অতটা জোরালো নয় এটা প্রকৌশলী দেখে।"

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ, অনুমোদন দেয়া এবং কীভাবে নির্মাণ হচ্ছে সেটি দেখার দায়িত্ব স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের।

সেখানে দায়িত্বরত উপজেলা প্রকৌশলী আহাম্মদ আলী বলেন, এ অঞ্চলে লবণাক্ততা ভবনের স্থায়ীত্বের ওপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু মাত্র পনেরো বছরে একটি ভবন এভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভেঙে পড়লো কীভাবে - সেটি তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

মি. আলী বলেন, "এখন প্রযুক্তির আপডেট হচ্ছে। এখনকার যে বিল্ডিংগুলা হচ্ছে সেগুলা ইটের খোয়ার পরিবর্তে স্টোন হচ্ছে। ৪০ গ্রেডের রডের পরিবর্তে ৬০ গ্রেডের রড ব্যবহার হচ্ছে। এগুলা অবশ্যই অবশ্যই আয়ু বেশি পাবে।"

এদিকে, শুধু বরগুনা নয়, সারা দেশে অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়েরই ভবনগুলোর অবস্থা জরাজীর্ণ ।

বরগুনার ঘটনার পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৫ দিনের মধ্যে সারাদেশের অতি ঝুঁকিপূর্ণ স্কুল ভবনের চিহ্নিত করে জানানোর নির্দেশনা দিয়েছে।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল বলেন, সরকার বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।

"ঝুঁকিপূর্ণ স্কুলগুলো চিহ্নিত করে ইতোমধ্যে সেখানে পাঠদান থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে। আমাদের হাজার হাজার স্কুল আছে। ৬২ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে কাঁচা-পাকা মিলিয়ে প্রায় দশ হাজার স্কুল আমাদেরকে নতুন করে নির্মাণ করে দিতে হবে"।

বরগুনার মানসুরা যে স্কুলে দুর্ঘটনায় মারা গেল সেটি যে খুব পুরোনো তা নয়। তাই শুধু স্কুল নির্মাণ করলেই হবে না সেগুলো কতটা মানসম্পন্ন এবং ঝুঁকিমুক্ত হচ্ছে কিনা প্রশ্নটা সেখানেই।

প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ - dainik shiksha প্রাথমিকের শিক্ষকদের ফের অনলাইনে বদলির সুযোগ তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার - dainik shiksha তীব্র তাপপ্রবাহের ভেতরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলছে রোববার দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা - dainik shiksha নতুন শিক্ষাক্রম ও কিছু কথা কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার - dainik shiksha স্কুলে দুই শিফটের ক্লাস চালু রাখার সভা রোববার শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য - dainik shiksha শিক্ষা কর্মকর্তার আইডি ভাড়া নিয়ে প্রধান শিক্ষকের বাণিজ্য শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন - dainik shiksha নিষিদ্ধ, মৌলবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিন please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0077648162841797