বরগুনায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে অর্ধশতাতিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে আহত হয়েছেন অন্তত পাঁচজন। এছাড়া অসুস্থ হয়ে আশ্রয়কেন্দ্র এক বৃদ্ধা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে বরগুনা সদর উপজেলার নন্দীগ্রামের নজরুল ইসলামের মালিকানাধীন এফবি তরিকুল ট্রলারের নিখোঁজ ১৫ জেলের কোনো খোঁজ এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
নিহত নারীর নাম হালিমা খাতুন (৬৫)। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে তিনি সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের ডিএল কলেজ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার বানাই গ্রামে। এ বিষয়ে এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. শাহনেওয়াজ দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, হালিমা খাতুন আগে থেকেই অসুস্থ ছিলেন। শনিবার রাতে তার মৃত্যু হয়।
এদিকে বরগুনায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাস অব্যাহত রয়েছে। রোববার (১০ নভেম্বর) সকাল থেকেই বরগুনা জেলার ৬টি উপজেলায় প্রচণ্ড দমকা হাওয়া বইতে থাকে। এসময় নদ-নদীতে জোয়ারের পানি ও বাড়তে থাকে। এর আগে শনিবার মধ্যরাত থেকে বরগুনায় শুরু হয় বুলবুলের তান্ডব। টানা ঝোড়ো হাওয়ার পাশাপাশি ভারী বর্ষণে বরগুনা জেলার বিভিন্ন স্থানের অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি ধসে গেছে।
শনিবার রাত ২টার দিকে ঘণ্টাব্যাপী ৮০ থেকে ৮৫ কিলোমিটার বেগে বাতাসের সাথে ভারী বর্ষণ হয়। রাত ৩টার দিকে ঝড় ও বর্ষণ থেমে যায়। ফের রাত সোয়া ৪টার দিকে থেমে থেমে ভারী বর্ষণ ও ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার বেগে টানা ঝোড়ো বাতাস বইতে শুরু করে। ঝড়ের তান্ডবে গাছপালা ভেঙে গেছে। নিম্নাঞ্চলের রাস্তাঘাট পানিতে ডুবে গেছে। পাশাপাশি রোপা আমন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও বিষখালী বলেশ্বর ও পায়রা নদীর অন্তত ১০ পয়েন্টের বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। জেলার আমতলী, তালতলী, পাথরঘাটা, বেতাগী ও বামনা উপজেলায় এখন পর্যন্ত ক্ষয়ক্ষতির তেমন কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া এলাকায় একটি বেড়িবাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানিতে একাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
বরগুনার পাথরঘাটায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেছেন, এলাকার বেশ কিছু গাছপালা ভেঙে গেছে এবং ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এছাড়া গাছ পড়ে কয়েকজন আহত হয়েছেন। জানা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উপড়ে পড়া একটি গাছ কাটার সময় অপর একটি গাছ পড়ে তিনজন আহত হন।
পাথরঘাটা সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষখালী নদী তীরের বাদুড়তলা আবাসনের চাল উড়ে গেছে। অপরদিকে পদ্মা বেড়িবাঁধ নাজুক থাকায় ভেতরে পানি ঢোকার উপক্রম হয়েছে।
কাকচিরা ইউপির চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন পল্টু দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিষখালী নদীর পানি বেড়ে কাকচিড়া বাজার তলিয়ে গেছে।
কালমেঘা ইউপির চেয়ারম্যান আকুল মোহাম্মাদ দৈনিক শিক্ষডটকমকে বলেন, স্বাভাবিকের চেয়ে নদীর পানি তিন থেকে চার ফুট বেড়েছে। এখন নদীতে জোয়ার রয়েছে। ওই জোয়ারের পানিতে কালমেঘার কুবদন বেড়িবাঁধে নাজুক অবস্থায় আছে।
বরগুনার বেতাগীতে ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতে বেশ কয়েকটি কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে, বেড়ীবাঁধের অনেক জায়গা ক্ষতি হয়েছে। রোপা আমন ধান ও রবি মৌসুমের কৃষি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।