স্থায়ী উপাচার্য না থাকায় দক্ষিণ বঙ্গের অন্যতম বিদ্যাপীঠ গোপালগঞ্জ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। দীর্ঘ ১০ মাস ধরে ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যে চলছে বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম পিছিয়ে পড়া, শিক্ষকদের পদোন্নতি ও শিক্ষার্থীর ফলাফল আটকে থাকার অভিযোগ উঠেছে। তবে এরই মধ্যে গুঞ্জন উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি পেতে যাচ্ছে স্থায়ী উপাচার্য।
জানা যায়, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ১২ দিনের কঠোর আন্দোলনের মুখে ২০১৯ খ্রিষ্টাব্দের ৩০ সেপ্টেম্বর বাধ্য হয়ে পদত্যাগ করেন সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।
এরই ধারাবাহিকতায় ৮ অক্টোবর চলতি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকশনস ইঞ্জিনিয়ারিং (ইটিই) বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. শাহজাহান। তারপর থেকে শুরু হয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং কর্মচারীদের ত্রি-মুখী আন্দোলন। সবকিছু ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যের পক্ষে সামাল দেয়া দুরূহ ব্যাপার হয়ে পড়ে।
অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীদের ফল আটকে আছে, যথাসময়ে পরীক্ষা না নেয়ায় অসম্পূর্ণ ফল নিয়ে করোনাভাইরাসের অবরুদ্ধ সময়ে চরম হতাশায় রয়েছেন অনেকে। ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে উদ্বিগ্ন-উৎকণ্ঠায় ভুগছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে দীর্ঘ ১০ মাসে বশেমুরবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের নামকরা অধ্যাপকরা।এঁদের মধ্যে প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান, প্রফেসর ড. একিউএম মাহবুব, প্রফেসর ড. অসীম সরকার, প্রফেসর ড. মো. আবু নাঈম শেখ, প্রফেসর ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান, প্রফেসর ড. মো. জাকারিয়া মিয়া এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. শাহজাহান উল্লেখযোগ্য।
প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত আছেন। তিনি ২০০৫ খ্রিষ্টাব্দে কুমামোতো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। তরুণ বিজ্ঞানী হিসেবে বাংলাদেশে স্বর্ণপদকসহ আরও ৪টি গুরুত্বপূর্ণ বিদেশি সম্মাননা অর্জন করেন তিনি।
প্রফেসর ড. একিউএম মাহবুব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল এবং পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। এছাড়াও ২০১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৃথিবী এবং পরিবেশ বিজ্ঞান অনুষদের কার্যক্রম সমন্বয়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ক্যানটারবুরি বিশ্ববিদ্যালয় (নিউজিল্যান্ড) থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
প্রফেসর ড. অসীম সরকার ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। তিনি ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের সংস্কৃত বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন। সংস্কৃত বিষয়ে তার লিখা ৫টি গ্রন্থ ও ৯টি আর্টিকেল রয়েছে।
প্রফেসর ড. মো. আবু নাঈম শেখ ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন।
প্রফেসর ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। তার লেখা ‘উয়ারী বটেশ্বর : শেকড়ের সন্ধানে’ নামক রচিত গ্রন্থটি বেশ জনপ্রিয়তা ও সম্মাননা অর্জন করেন।
প্রফেসর ড. মো. জাকারিয়া মিয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অণুজীব বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত আছেন। তিনি ২০০৪ খ্রিষ্টাব্দে জাপানের নাইজিটা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেছেন। এছাড়াও তিনি দেশ বিদেশে ৮টি গুরুত্বপূর্ণ ফেলোশিপ অর্জন করেন।
বশেমুরবিপ্রবিতে ভিসি নিয়োগ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রকিবুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় অতিসত্ত্বর নিয়মিত উপাচার্য নিয়োগের বিকল্প নাই। একাডেমিক এবং প্রশাসনিক কাজ কার্যত অচল রয়েছে। এই করোনা সংকটকালে শিক্ষার্থী বিষয়ক অনেক জরুরি সিদ্ধান্তসমূহ চলতি দায়িত্বের উপাচার্য নিতে পারেনি। শতাধিক শিক্ষকের পদোন্নতি আটকে আছে। যদিও চলতি দায়িত্বের উপাচার্য বিশেষ অনুমতি নিয়ে কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করে যাচ্ছেন যেটা প্রশংসনীয়, কিন্তু করোনা পরবর্তী বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর যে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ আসবে সেটা মোকাবেলা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।
তিনি আরও বলেন, চলতি ১০ মাসে বিশ্ববিদ্যালয় অনেক খানি পিছিয়ে পড়েছে, উন্নয়ন কার্যক্রম থমকে আছে, সেশনজটের শঙ্কা রয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষক সমাজের দাবি এবং অনুরোধ বঙ্গবন্ধুর নামাঙ্কিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে গুণগত এবং অবকাঠামোগত মানোন্নয়নের জন্য একজন দক্ষ, যোগ্য এবং স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ দেবেন।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের মেম্বার দিল আফ্রোজা দৈনিক শিক্ষাডটকমকে বলেন, দীর্ঘদিন যাবত বশেমুরবিপ্রবিতে স্থায়ী উপাচার্য নেই। যত দ্রুত সম্ভব স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ দেয়া হবে।