বাংলা ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট - দৈনিকশিক্ষা

বাংলা ইশারা ভাষা ইনস্টিটিউট

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

ভাষাকে আশ্রয় করেই বিকশিত হয় মানুষের চিন্তা-চেতনা। সভ্যতা, সমাজ, সংস্কৃতিসব কিছুই ভাষার আশ্রয়ে লালিত-পালিত। তাই তো বলা হয় ভাষার দাবি, জীবনের দাবি, মনুষ্যত্বের দাবি। এ দাবির সংগ্রামে মানুষ কখনও নতি স্বীকার করতে পারেনা। যেমন আমরাও পারিনি বায়ান্নর একুশে ফ্রেরুুয়ারিতে। এই রক্তস্নাত বাংলাভাষাকে কেন্দ্র করেই ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর জাতিসংঘ একুশে ফ্রেরুুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস রূপে ঘোষণা করে; যার মূল উদ্দেশ্য পৃথিবীর প্রতিটি দেশের বিশেষ করে ক্ষুদ্র ভাষাগোষ্ঠীকে রক্ষা ও তাদের বিকাশ। তাই এই দেশ ভাষার অধিকার আদায়ের দেশ। কিন্তু এই ভাষা আদায়ের তীর্থ ভূমিতে বসবাসরত প্রায় ত্রিশ লাখ বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষের মনের গহীনে লুকায়িত ভাবপ্রকাশের একমাত্র মাধ্যম ‘বাংলা ইশারা ভাষার’ দাবি আজও অসম্পূর্ণ। শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এ নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। 

নিবন্ধে আরও জানা যায়,  যদিও দেশে সংখ্যালঘু বিভিন্ন ভাষাগোষ্ঠীর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠের যোগাযোগের মাধ্যম এই ইশারা ভাষা। যাদের ভাষা শিক্ষার পূর্বেই শৈশবে কিংবা মাতৃগর্ভে থাকালীন অবস্থায় কিংবা পরবর্তীতে যে কোন কারণে শ্রবণ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়, তাদের শ্রবণ ও মৌখিক ভাববিনিময়ের পদ্ধতি হিসেবে ইশারার মাধ্যমে শব্দ বা বাক্যাংশ কিংবা আঙ্গুলের সাহায্যে বর্ণ প্রদর্শন করার নামই আন্তর্জাতিক ভাবে ইশারা ভাষা হিসেবে পরিচিত। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে পৃথক পৃথক ইশারা ভাষা এবং আছে রাষ্ট্রীয়ভাবে তার আইনি স্বীকৃতিও। এই ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম দেশ উগান্ডা যারা ১৯৯৫ সালে ইশারা ভাষাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে আইনি স্বীকৃতি দেয়।

বাংলাদেশে ইশারাভাষীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালের ১ ফ্রের্রুয়ারি সর্ব প্রথম একুশে বই মেলার উদ্বোধনী বক্তৃতায় রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বাংলা ইশারা ভাষা চালুর ঘোষণা দেন এবং মানুষের তথ্য প্রাপ্তির অধিকার নিশ্চিত করতে বিটিভিসহ সব টেলিভিশন সংবাদে ইশারা ভাষা চালুর নির্দেশনা দেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার আদায়ে অগ্রভাগে থাকা সংগঠন এসডিএসএলের প্রচেষ্টা এবং সরকারের স্বদিচ্ছায় ২০১২ সালে দেশে প্রথম ৭ ফ্রেরুুয়ারিকে ‘বাংলা ইশারা ভাষা দিবস’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। যদিও গণমাধ্যমসহ সকল প্রায়োগিক ক্ষেত্রে ইশারা ভাষা এখনো চরমভাবে অবহেলিত এবং রাষ্ট্রীয়ভাবেও এই ভাষার উপর গবেষণা ও প্রসারে নেই কোন কার্যকর উদ্যোগ।

ওয়ার্ল্ড ফেডারেশান অব দি ডেফএর তথ্য মতে, সারাবিশ্বে প্রায় ৭ কোটি বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষের প্রথম এবং মাতৃভাষা এই ইশারা ভাষা। বিশ্বের অনেক দেশ যেমন অষ্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, নরওয়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফিনল্যাল্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা তাদের দেশে ইশারা ভাষা আইন, ইন্সটিটিউট ও দোভাষী সনদ প্রাপ্তিসহ বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে এবং দিয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই ভাষার আইনি স্বীকৃতি। তাছাড়া ইতালী, ফ্রান্স, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডাতেও ইশারা ভাষাকে একাডেমিক ও অফিসিয়াল ভাষা হিসাবে স্বীকৃতি প্রদান করেছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার প্রাদেশিক আইনে উল্লেখ আছে ‘একাডেমিক ক্রেডিট’ কোন কোর্সকে গ্রহণ করবেনা যদি সেই প্রতিষ্ঠান ইশারা ভাষাকে স্বীকৃতি না দেয়। এনসিডিপির তথ্য মতে, ইংরেজী ব্যতিত আমেরিকাতে যে ১৩টি ভাষা সবচেয়ে বেশী প্রচলিত তার মধ্যে স্পেনিশ এবং চীনা ভাষার পরই রয়েছে আমেরিকান ইশারা ভাষা। যেখানে প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ এই ভাষায় পারস্পারিক ভাব বিনিময় করে থাকেন। আমাদের পাশ্ববর্তী দেশ ভারত ২০১১ সালে ৪৪ কোটি রুপি ব্যয়ে ইন্দিরা গান্ধী উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতায় ভারতীয় ইশারা ভাষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে নরওয়ে অ্যাসোসিয়েশান অব দি ডেফএর সহযোগিতায় প্রথম বাংলা ইশারা ভাষার অভিধান প্রকাশের উদ্যোগ করে এবং এরই প্রেক্ষিতে ১৯৯৪ সালে সমাজসেবা অধিদফতর ও বাংলাদেশ জাতীয় বধির সংস্থার যৌথ প্রয়াসে প্রথম বাংলা ইশারা ভাষার অভিধান প্রকাশিত হয়। কিন্তু পরবর্তীতে অধিদপ্তর বাক ও শ্রবণ প্রতিবন্ধী মানুষের জীবনযাপন ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ এই ভাষার বিকাশে কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।

আমরা জানি বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিবর্গের অধিকার সনদ অনুসমর্থন করেছে। এই সনদের ২৪ ধারায় ইশারা ভাষা শেখায় সহায়তা করা এবং বাক শ্রবণ প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর ভাষাগত পরিচয়কে সমুন্নত রাখার কথা বলা হয়েছে। এই সনদের ধারাবাহিকতায় গত বছর অক্টোবরে “ প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা আইন ২০১৩ সংসদে পাশ হয়। এই আইনের ধারা ২(৭) এ ভাষা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ‘ প্রমিত বাংলা ইশারা ভাষা প্রণয়ন ও উন্নয়নে প্রাতিষ্ঠানিক কার্যক্রম গ্রহণ, হাসপাতাল, আদালত, থানা ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সর্বত্র ইশারা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং চাহিদার ভিন্নতা বিবেচনা করে বাংলা ইশারা ভাষাকে স্বীকৃতির কথাও বলা হয়েছে। তাই এই ভাষাগোষ্ঠীর দাবী বর্তমানে একীভূত শিক্ষার প্রসারে রিসোর্স শিক্ষক হিসেবে উপজেলা পর্যায়ে অন্তত একজন ইশারা ভাষায় দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ, তাদের বিচারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে আদালতে ইশারা ভাষার দোভাষী পুলের স্বীকৃতি প্রদান, হাসপাতাল ও সরকারী দপ্তরসহ মৌলিক নাগরিক সেবা দানকারী সংস্থায় ইশারা ভাষা ব্যবহারের ব্যবস্থা এবং ইশারা ভাষা ইন্সটিটিউট স্থাপনসহ এই ভাষার আইনগত স্বীকৃতি প্রদান।

লেখক :  ম. মাহবুবুররহমান ভূঁইয়া, উপ-ব্যবস্থাপক (প্রশিক্ষণ), পিকেএসএফ।

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069260597229004