বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি কিছু বিষয়ের প্রতি—১. পুরোনো যত অভিধান বাংলা ভাষায় বেরিয়েছে, সেগুলো পুনঃপ্রকাশের ব্যবস্থা করুন। ২. পুরোনো অথচ উল্লেখযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ যত ব্যাকরণ বই বাংলা ভাষায় বের হয়েছে, তা পুনরায় প্রকাশের ব্যবস্থা করুন। ৩. বাংলা ভাষার প্রাচীন লেখকদের বইগুলো ধারবাহিকভাবে প্রকাশ করুন। ৪. বিশেষ করে বলতে চাই, ইন্দোইউরোপীয় ভাষা থেকে আধুনিক বাংলা ভাষা পর্যন্ত ভাষার ক্রমিক বিবর্তনের ওপর ভিত্তি করে চার রঙা সচিত্র ভাষা মানচিত্র বের করা খুব গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। রোববার (১৮ আগস্ট) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন তোফায়েল হোসেন খান।
এই ভাষাম্যাপে কেন্তুম ও শতম গোষ্ঠীর ভাষা-এলাকা মানচিত্র আকারে দেখানো হবে। ইন্দোইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর যাবতীয় কতটুকু ভৌগোলিক এলাকা জুড়ে বিস্তৃত ছিল, তার বর্ণনা ম্যাপের মাধ্যম প্রদর্শিত হবে। আকার সেই প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষা যখন তা মধ্য ভারতীয় আর্য ভাষায় রূপ নিল, সেইটুকুও ভাষা ম্যাপে সচিত্র প্রদর্শিত হবে। এভাবে ক্রমান্বয়ে আসতে আসতে প্রাচীন বাংলা, মধ্যযুগের বাংলা থেকে ক্রমিক বিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক বাংলা ভাষায় প্রবেশ পর্যন্ত এলাকাটি মানচিত্রে ধামে ধাপে সচিত্র প্রদর্শিত হবে। এভাবে একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষাম্যাপ বই আকারে প্রকাশ করতে পারলে ছাত্র-শিক্ষক সবার কাছে বিষয়টি সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ছবি ফুটে উঠবে।
বর্তমানে বিষয়টি পড়াতে গেলে এলাকার বিস্তৃতি সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার সময় ওসবের ওপর মানচিত্র না থাকায় বিষয়টি চক্ষুগ্রাহ্য হয়ে ওঠে না মোটেও। কার্যত আন্দাজে ঢিল ছোড়া বিষয়টির ওপর ভাসা ভাসা ধারণা অর্জিত হয় কেবল। তাই ভাষার মানচিত্র থাকাটা একান্ত জরুরি মনে করি।
আমাদের জানামতে, ভাষার ওপর নির্ভুল-নিখুঁত মানচিত্র বাংলাদেশ তো দূরের কথা, পশ্চিম বাংলা বা ত্রিপুরায়ও নেই। বাংলা একাডেমি এমন একটি মহতি উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশসহ বাংলাভাষী মানুষ অশেষ উপকৃত হবে। বাংলা ভাষার ক্রমিক বিবর্তনের রূপটি সবার কাছে সহজে দৃশ্যমান করে তুলতে ভাষাম্যাপ হবে যুগান্তকারী এক মাইলফলক।
লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, সরকারি আনন্দমোহন কলেজ, ময়মনসিংহ।