বাংলা আমাদের প্রিয় মাতৃভাষা। এই ভাষা রক্ষার জন্য মানুষ প্রাণ দিয়েছেন। বাংলা ভাষায় কথা বলেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ৩০ কোটি। কিন্তু শুদ্ধ বানানে কত মানুষ এই ভাষা লিখতে পারেন? বানান নিয়ে নানা পণ্ডিতের রয়েছে নানা পরামর্শ।
একটা ভাষা হচ্ছে বহতা নদীর মত। এর মুখে বাধ দিয়ে দিলে তা হ্রদে পরিণত হবে, বহমানতা থাকবে না। বাংলা ভাষা সংস্কৃতের গর্ভ থেকে উৎপত্তি হয়ে বহু বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে বর্তমান পর্যন্ত এসেছে।
ভাষা বিজ্ঞানী ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ(১৮৮৫-১৯৬৯) বলেছেন, "পাঁচ কোটি বাঙালির অধিকাংশই বানান ভুল করে।"
তাঁর আমল থেকে এখন পৃথিবীতে বাঙালির সংখ্যা বেড়েছে অনেক। বর্তমানে বাঙালি পৃথিবীর মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠী (প্রথম চাইনিজ, দ্বিতীয় আরব)। বাঙালির সংখ্যা বর্তমান বিশ্বে ৩০ কোটি মিলিয়ন হলেও কিন্তু তারা তাদের ভাষার শব্দগুলোর বানান সম্পর্কে এখনো একমত হতে পারেনি!
ইংরেজি ভাষার বর্ণমালা মাত্র ২৬টি। তাই দিয়ে ইংরেজিতে সব কিছু লেখা যায়। সে তুলনায় বাংলা ভাষার বর্ণমালার আকার বেশ বড়। স্বরবর্ণ ১১টি, ব্যঞ্জনবর্ণ ৩৯টি। মোট ৫০টি। এর পর আছে কার চিহ্ন, যুক্তবর্ণ ইত্যাদি নানা বিষয়।
বাঙালিরা এখনও তাদের ভাষার লিখিত রূপ বা বানান নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে আছে। ই, ঈ, হ্রস্ব-ইকার, দীর্ঘ-ঈ-কার, উ, ঊ, হ্রস্ব-উ-কার,দীর্ঘ-ঊ-কার, ন, ণ, স, শ, ষ, জ, য ইত্যাদি বর্ণ, কার চিহ্ন নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়ে বহু মানুষ বানান ভুলের আশঙ্কায় বাংলা লেখে না। অনেকে ইংরেজি হরফে বাংলা ভাষা লিখে মনের ভাব প্রকাশ করেন। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ও বাংলা ভাষাকে গণমানুষের ভাষা হিসেবে গ্রহণযোগ্য এবং বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বাংলা ভাষার লৈখিক রূপের কিছু পরিবর্তন এখন সময়ের দাবি।
বাংলাভাষা লেখ্য রূপ যদি বাঙালিদের কাছেই স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ না হয় তাহলে বিদেশীদের কাছে তা কী ভাবে জনপ্রিয়তা পাবে? স, শ, ষ এর যে কোন একটা, ই,ঈ এর মধ্যে যে কোন একটা, হ্রস্ব-ইকার, দীর্ঘ-ঈ-কার এর মধ্যে যে কোন একটা উ, ঊ এর যে কোন একটা, হ্রস্ব-উ-কার, দীর্ঘ-ঊ-কার এর যে কোন একটা, ন, ণ, এর যে কোন একটা, স, শ, ষ এর মধ্যে যে কোন একটা, জ, য এর মধ্যে একটা, ত, ৎ এর মধ্যে একটা হলে কী ক্ষতি?
একটু উদার দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে আমরা নিশ্চিত ভাবে বাংলা ভাষাকে আরও সহজভাবে লেখার ব্যবস্থা করতে পারি বৈকি।
ভাষার লিখিত রূপ সহজ সরল করতে পারলে জাতিকে সহজে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব হবে, ব্যবসা, বাণিজ্যসহ সকল বিষয়ে যোগাযোগ সহজতর হবে।
নিচের দু'টো বাক্য লক্ষ্য করুনঃ
১। বাঙালি একটি মহান জাতি।
২। বাঙালিরা জাতি দিয়ে সুপারি কাটে।
উপরের বাক্য দু'টোতে "জাতি" শব্দটা একই বানানে দুটো ভিন্ন অর্থ বহন করে। যাতি" এর স্থলে " জাতি" দৃষ্টিকটু হলেও বুঝতে কোন সমস্যা হচ্ছে না কিন্তু!
আসুন, আমরা উদার দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ভাষার লিখিত রূপ সংস্কারের জন্য উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ গ্রহণ করি, বাঙালির প্রাণের ভাষায় বাঙালি পৌছে যাক বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের কাছে স্বচ্ছন্দে।