বাংলা হোক প্রযুক্তির ভাষা - Dainikshiksha

বাংলা হোক প্রযুক্তির ভাষা

আন্দালিব রাশদী |

আমেরিকানদের রাষ্ট্রভাষা কি? অন্তত জার্মান তো নয়। বাঙালিদের রাষ্ট্রভাষা যেমন উর্দু হওয়ার কথা নয়, হওয়ার যুক্তিসঙ্গত কোনো কারণও নেই, আমেরিকানদের বেলায় জার্মান কিন্তু সেরকমই।

১৭৭৬ সালে আমেরিকা যখন স্বাধীন হয়, অভিবাসী জার্মানদের মধ্য থেকে দাবি উঠে আসছিল, জার্মান হোক আমেরিকার সরকারি ভাষা। হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভে বিল পাসও হয়ে যেত যদি জার্মান বংশোদ্ভূত স্পিকার বাধা না হয়ে দাঁড়াতেন।

আমাদের বেলায় বাঙালি রাজনৈতিক এলিটরাই উর্দুকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং এমনকি ১৯৪৭-উত্তর কেন্দ্রীয় সরকারের বাঙালি শিক্ষামন্ত্রী (সেই মন্ত্রিপরিষদে দু’জন বাঙালি সদস্য ছিলেন- একজন ঢাকার, একজন বরিশালের) আরবি হরফে বাংলা লেখার উদ্যোগ নিতে চেয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভের প্রথম স্পিকার হিসেবে ফ্রেডেরিক মুলেনবার্গকে বেছে নেয়া হয়।

তার বাবা হেনরি মুলেনবার্গের জন্ম জার্মানিতে। ফ্রেডেরিকও জার্মানিতে পড়াশোনা করেছেন। তিনি দু’দফা স্পিকার ছিলেন। তার বিরোধী ভূমিকার কারণেই জার্মানকে সরকারি ভাষা করার বিলটি শেষ পর্যন্ত উত্থাপিত হতে পারেনি। ১৭৯৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সব ফেডারেল আইন জার্মান ভাষায় প্রকাশের একটি প্রস্তাব মাত্র এক ভোটের ব্যবধানে নাকচ হয়ে যায়।

জার্মান অভিবাসীদের ভাষাশিক্ষার ওপর অসন্তুষ্ট হয়ে ১৭৫৩ সালে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন বলেছেন, জার্মান অভিবাসীরা ইংরেজি শিখছে না; জার্মানদের মধ্যে যারা হীনবুদ্ধির শুধু তারাই দেশ ছেড়ে আমেরিকায় আসছে। থিওডোর রুজভেল্ট আমেরিকার জন্য শুধু ইংরেজি ভাষার কথা বলেন, ‘আমাদের একটি পতাকা ও একটি ভাষা।’

উর্দু যে বাঙালিদের জন্য নয়, আমাদের বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের আগে অবাঙালি আগা খান ১৯৫১ সালে লিখেছেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সফর করেছি। কাউকে উর্দু বলতে শুনিনি।

উপরের আলোচনায় যে চারটি ভাষার কথা উঠে এসেছে: ইংলিশ, জার্মান, বাংলা, উর্দু- এ ভাষাগুলোর বৈশ্বিক পরিস্থিতি কি? ইংরেজি ইংল্যান্ড কিংবা আমেরিকার সীমান্ত পেরিয়ে অন্তত ৫০টি দেশের একমাত্র কিংবা প্রধানতম সরকারি ভাষা। জার্মান ছটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সরকারি ভাষা। ১৮টি দেশে কমবেশি জার্মান ভাষা চর্চা করা হয়। বাংলা শুধু বাংলাদেশেই; ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা ও আসামে সরকারি ভাষার মর্যাদা নিয়ে অবস্থান করলেও ক্রমেই সংকুচিত হয়ে আসছে বাংলা ভাষার ব্যবহার, গুরুত্ব ও মর্যাদা।

বাংলা ভাষা নিয়ে আমরা যত অহংকারই করি না কেন, এটা প্রকাশ্য স্বীকৃত যে, চাকরির বাজারে ইংরেজি জানা প্রার্থীরই অগ্রাধিকার। সবচেয়ে শোচনীয় অবস্থা উর্দুর। পাকিস্তান এবং ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর এখনও উর্দু টিকিয়ে রেখেছে। বিহার, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা, উত্তর প্রদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে উর্দু নিভু নিভু অবস্থায় বিরাজ করছে। ভারতের উর্দু মিডিয়াম স্কুলের অধিকাংশই বিলুপ্ত হয়েছে, বাকিগুলোও বিলুপ্তির পথে।

ভাষার বিকাশ ও বিলয়ের মূল কারণটি অর্থনৈতিক। যে ভাষা মানুষকে ভালোভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা দেয়, স্বাভাবিকভাবেই মানুষ সে ভাষার দিকে ঝুঁকবে। জনসংখ্যার বিচারে বাংলা ষষ্ঠ অবস্থানে থাকলেও প্রযুক্তি- ইন্টারনেট ব্যবহারে শীর্ষ ৪০টি ভাষার মধ্যে বাংলা ঠাঁই পায়নি। ফেব্রুয়ারিতে বাংলার জন্য মায়াকান্না বন্ধ রেখে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বাংলাকে প্রযুক্তির ভাষা, অর্থনীতির ভাষায় পরিণত করতে হবে। যতক্ষণ না বাংলা ভাষাকে অর্থকরী ভাষা বলতে পারব- ভাষার সংকোচন ঠেকিয়ে রাখা কষ্টকর হবে।

অনুলিখন : শুচি সৈয়দ

সূত্র: যুগান্তর

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.021539926528931