বাংলাদেশের নার্সিং শিক্ষা ও সার্ভিসের সম্ভাবনার এক নতুন দিক উন্মোচিত হয়েছে। বিশ্বায়নের যুগে আধুনিক ও উন্নতমানের নার্সিং বা সেবার চাহিদা এখন বিশ্বব্যাপী। আর এই উন্নতমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের দায়িত্ব প্রশিক্ষিত ও দক্ষ নার্সদের। ব্রিটেনে বাংলাদেশের নার্সদের কর্মক্ষেত্র তৈরির এক বিশেষ সুবিধা রয়েছে। বর্তমানে ব্রিটেনে কমপক্ষে চল্লিশ হাজার প্রশিক্ষিত নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্তি থেকে বৃটেন বেরিয়ে আসার প্রেক্ষিতে ব্রিটেন থেকে প্রচুর ইউরোপিয়ান নার্স চাকরিতে অব্যাহতি পত্র জমা দিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে পুরো ব্রিটেনে নার্স সংকট চরমে পৌঁছেছে। ব্রিটেন ইংরেজি ভাষার IELTS বিকল্প OET চালু করেছে। এই OET হলো Occupational English Test। OET 6.00-6.5 পেলে এদেশ থেকে প্রচুর নার্স ব্রিটেনে চাকরির সুযোগ পাবে।
OET মেডিক্যাল প্রফেশনালসেদর জন্য বিশেষভাবে তৈরি একটি ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষণ কোর্স। এই কোর্সে ডাক্তার, নার্স, ডেনটিস্ট, মেডিক্যাল টেকনোলজিষ্ট, নিউট্রিশনিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিষ্ট, সাইকোলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজিস্ট, ফিজিক্যাল থেরাপিস্ট, ক্যান্সার থেরাপিস্ট এসব ডিসিপ্লিনে যারা অভিজ্ঞ তারা সকলেই করতে পারেন।
নতুন প্রজন্মের যারা মেডিক্যাল, নার্সিং বা অন্যান্য হেলথ্ প্রফেশনালস্ ডিগ্রি করছেন তারা তাদের ক্যারিয়ার গঠনের জন্য OET কোর্স করে বিশ্বের কমপক্ষে ১২টি দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিতে পারেন। বাংলাদেশ একটি সম্ভাবনাময়ী দেশ। এদেশের শুধু খনিজ সম্পদ নয়, রয়েছে বিপুল মানবসম্পদ— আমাদের তরুণ-তরুণীদের সম্ভাবনাময়ী ভবিষ্যত্ ক্যারিয়ার গঠনের জন্য হেলথ্ প্রফেশনের কোনো বিকল্প নেই। আমরা আমাদের সীমিত গন্ডির মাঝে এভাবে দক্ষ মানব সম্পদ গড়ে তুলতে পারি। এই দক্ষ জনসম্পদ বিশ্বের উন্নত দেশসমূহে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলে তারা এদেশকে সোনার বাংলাদেশে উন্নীত করতে পারবে। এক্ষেত্রে নার্সিং পেশাজীবীদের জন্য রয়েছে অবারিত সুযোগ। এদেশে বর্তমানে প্রচুর সংখ্যক নার্সিং, কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে, যার থেকে প্রতি বছর ১২০০০-১৩০০০ নার্স প্রশিক্ষণ নিয়ে বেরিয়ে আসছে। তারা বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল থেকে রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত হয়ে সরকারি বা বেসরকারি পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই প্রাপ্য সুযোগ-সুবিধা ও সম্মান পাচ্ছে না।
বাংলাদেশে ডিগ্রিপ্রাপ্ত নার্সদের কোনো সুনির্দিষ্ট ক্যারিয়ার নেই। তাদের মূল পদ সিনিয়র স্টাফ নার্স। একই পদে দীর্ঘ ৩০-৩৫ বছর চাকরি করে অনেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডেপুটেশনে চাকরি করে কর্মজীবন পার করছেন। এতে তাদের আর্থিক কিছু লাভ হলেও প্রশাসনিক পদে তারা সুবিন্যস্ত হতে পারছেন না। এর ফলে এদেশে নার্সদের কর্মস্পৃহা কমে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে যারা উদীয়মান তাদের জন্য প্রয়োজন বৈদেশিক কর্মসংস্থান। এ লক্ষ্যে ভারত, ফিলিপাইন, শ্রীলংকা ও চীন অনেক এগিয়ে আছে। আমাদের দেশে নার্সদের কর্মস্পৃহা ও ইংরেজি ভাষা প্রশিক্ষণ বাড়লে তারা ভবিষ্যতে অনেক উন্নতির রাস্তা খুঁজে পাবে এবং বৃটেনসহ অনেক উন্নত দেশে চাকরির সুযোগ পাবে এতে কোনো সন্দেহ নেই।
লেখক :সাবেক অধ্যক্ষ, ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজ, গাজীপুর ও বেগম রাবেয়া খাতুন চৌধুরী
নার্সিং কলেজ, সিলেট