বাংলা আমার মায়ের ভাষা। এ ভাষায় কথা বলেই কাটে সারাটি দিন। এ ভাষার জন্য জীবন দিয়েছেন বাংলার দামাল ছেলেরা। পৃথিবীর কোথাও এমন মধুর ভাষা খুঁজে পাওয়া যাবে না। সে ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দে দেশ বিভাগের পর থেকে হায়েনার দল বাংলা ভাষাকে আমাদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু পারেনি। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১ শে ফেব্রুয়ারি মায়ের ভাষা রক্ষা করতে জীবন দিয়েছেন রফিক, শফিক, জব্বার, বরকত, শফিউরসহ আরো অনেকে। রক্তের বিনিময়ে পেয়েছি বাংলা। পৃথিবীর অন্য কোন জাতি ভাষার জন্য জীবন দেয়নি। ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলা ভাষাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকরা। ভাষা আন্দোলন থেকেই জাতীয় চেতনা জাগ্রত হয় এবং এরই ফলে ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে এই দেশ স্বাধীন হয়।
কিন্তু রক্তে ভেজা বাংলা ভাষা কি আমরা ব্যবহার করছি? আদৌ কি বাংলা ভাষার মর্যাদা ধরে রেখেছি? প্রিয় বাংলা ভাষাকে অপারেশন করে ইংলিশ ও হিন্দি ভাষা ঢুকিয়ে হযবরল করে ফেলেছি। বাংলার সাথে ইংলিশ মিশিয়ে কথা না বললে নাকি মর্যাদা বাড়ে না। প্রিন্ট মিডিয়াগুলো মেনে চললেও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াগুলো বাংলিশ ব্যবহার করেই চলছে। ফলে আগামী প্রজন্ম না বুঝে বিকৃত বাংলা ভাষাই আয়ত্ত্ব করছে। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ভাষার ব্যাপারে এমন ঔদাসীন্য মেনে নেওয়া যায় না। শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; ভাষাকে উপলব্ধি করতে হবে। ইংরেজি আন্তর্জাতিক ভাষা। জ্ঞানার্জনের জন্য নিঃসন্দেহে তাকেও রপ্ত করতে হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, 'ইংরেজি আমাদের জ্ঞানের ভাষা আর বাংলা হলো ভাবের ভাষা।' ইংরেজির মাধ্যমে আমরা জ্ঞানার্জন করতে পারি; কিন্তু আমাদের ভাব তথা সৃজনশীল চিন্তাচেতনা প্রকাশের মাধ্যম হবে অবশ্যই বাংলা। একইভাবে ইংরেজি ভাষা শেখা বা বলাটা অন্যায় নয়; কিন্তু বাংলার সঙ্গে মিশিয়ে শেখা বা মিশিয়ে বলতে গিয়ে বাংলিশ করে বলাটা অন্যায়। বাংলা ভাষার স্বাতন্ত্র্য আমাদেরই রক্ষা করতে হবে।
বাংলার মেয়েরা হিন্দি অনুষ্ঠান দেখে বাংলা ভাষাকে বিকৃত করছে যার প্রভাব পড়ছে কোমলমতি শিশুদের ওপর। কেন এমন হচ্ছে? এমন দৃশ্য দেখার জন্যতো ভাষার জন্য জীবন দেয়নি। বর্তমানে রেডিও, টেলিভিশনে যেভাবে অনর্গলভাবে বাংলিশ চলছে, তা কি কখনো বন্ধ হবে না? ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তজার্তিক মাতৃভাষা দিবস দিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। বাঙালির এ এক অসাধারণ পাওয়া। পৃথিবীর সকল দেশ বাংলা ভাষাকে শ্রদ্ধা করছে, মর্যাদা দিচ্ছে অথচ আমরাই বাংলাকে অবজ্ঞা করছি।
২০১২ খ্রিস্টাব্দে বিকৃত বাংলা ব্যবহার নিষিদ্ধ করে হাইকোর্ট রুল জারি করেছিল। কিন্তু সে আদেশ এখনও মানা হয়নি। আমাদের শেকড়কে কখনো ভোলা যাবে না। সকল সরকারি, আধা সরকারি অফিস, যানবাহন, শহর-নগর-গ্রাম সর্বত্র সঠিক বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে সরকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে জনগণকে সচেতন করতে পদক্ষেপ নিয়ে বাংলিশ দূর করে সঠিক বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করবে এটাই জাতির প্রত্যাশা।
লেখক : সহকারী শিক্ষক (ইংরেজি),মোহাম্মদ নগর উচ্চ বিদ্যালয়, ফুলবাড়ীয়া, ময়মনসিংহ।
[মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নয়]