জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা উপলক্ষে গত ২৫ অক্টোবর থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ দিন সারা দেশে সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সরকারের সেই সিদ্ধান্তকে বৃদ্ধাঙ্গুল দেখিয়ে কৌশলে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরের বেশির ভাগ কোচিং সেন্টার চালু রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব কোচিং সেন্টারের পরিচালনা পর্ষদে আবার সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা রয়েছেন বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে গত বুধবার বিকেলে পৌর সদরের রূপনগর এলাকার ‘আলফা কোচিং’ সেন্টারে গিয়ে দেখা গেছে, কোচিং সেন্টারের সাইনবোর্ডটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে। নিচতালায় বাসাবাড়ি আর ওপরের তলায় কোচিং সেন্টার। ওপরের তলায় গোপনে একটি কক্ষের মধ্যে অষ্টম শ্রেণির আটজন শিক্ষার্থীকে কোচিং করানো হচ্ছিল। ওই কক্ষে মেহেদুল ইসলাম নামের এক শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। তিনি জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার মাহমুদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। কোচিং সেন্টারের পরিচালক ও ওই বাড়ির মালিক ছানাউল ইসলাম। তিনিও ক্ষেতলাল উপজেলার বড়াইল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলা সদরে প্রায় ১৫-২০টি কোচিং চালু রয়েছে। এর মধ্যে মাস্টারপাড়া এলাকায় ‘সাকসেস কোচিং সেন্টার’-এর পরিচালনায় রয়েছেন মেহেদী হাসান। ওই কোচিং সেন্টারের অন্য শিক্ষকরা হলেন শামীম হোসেন, মাসুদ হোসেন এবং বিহারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুল জলিল। একই এলাকায় ‘সূর্য কোচিং সেন্টার’-এর পরিচালনায় রয়েছেন অমিত কুমার মণ্ডল।
এই কোচিং সেন্টারের শিক্ষক হচ্ছেন সুব্রত কুমার, নিশু হোসেন, আভি, হামিদুল ইসলাম, প্রশান্ত, চয়ন, জয়, রাজু ও জুলেখা। একই এলাকার শিক্ষক দারাজ হোসেন তাঁর বাড়ির গেটে তালা দিয়ে ঘরের ভেতরে কোচিং চালু রেখেছেন। থানা মোড় এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় কোচিং চালু রেখেছেন ফেরদৌস হোসেন। এ ছাড়া উপজেলা সদরে এবং ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রশাসনের চোখ এড়াতে নানা কৌশল অবলম্বন করে বেশ কিছু কোচিং সেন্টার চালু রয়েছে।
আলফা কোচিং সেন্টারের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী হাবিবা জানায়, স্যারেরা কোচিং বন্ধ রাখেননি। এ কারণে তারা প্রতিদিন এখানে পড়াশোনা করতে আসে।
সূর্য কোচিং সেন্টারের পরিচালক অমিত কুমার মণ্ডল বলেন, ‘এবার প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোচিং বন্ধ রাখার বিষয়ে এলাকায় মাইকিং করা হয়নি। অমরা এ বিষয়টি জানি না। তা ছাড়া সব জায়গাতেই কোচিং চালু রয়েছে। আমাদের এখানে শুধু তৃতীয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করানো হয়।’
শিক্ষক দারাজ হোসেন বলেন, ‘আমি আমার বাসায় প্রাইভেট পড়াই। এখানে কোনো কোচিং করানো হয় না।’
আক্কেলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকিউল ইসলাম বলেন, ‘এলাকায় কোচিং চালু রয়েছে—এটি আমার জানা ছিল না। শিগগিরই আমি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেব।’