রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারীদের ওপর হামলায় হতভম্ভ হয়ে পড়েছেন শিক্ষকরা। কারো সঙ্গে কোনো বিরোধে না থাকার পরও চাকরির কারণে শুধু সরকারি দায়িত্ব পালনে গিয়ে তারা হামলার শিকার হয়েছেন। হতাহতদের মধ্যে শিক্ষকদের সঙ্গে আনসার ভিডিপিও রয়েছেন। সোমবার উপজেলা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ শেষে রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার তিনটি কেন্দ্র থেকে নির্বাচনকর্মীরা ফেরার পথে তাদের ওপর সশস্ত্র হামলা হয়। মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) বিডিনিউজে২৪ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাঘাইছড়ি-দিঘিনালা সড়কের নয় মাইল এলাকায় ওই হামলায় দুই পোলিং কর্মকর্তা, চার আনসার-ভিডিপি সদস্যসহ সাতজন নিহত হন, গুলিবিদ্ধ হন আরও অন্তত ১১ জন। সারাদেশে দ্বিতীয় পর্যায়ে শতাধিক উপজেলায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মধ্যে এ হামলা পুরো দেশকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে।
দেশের জাতীয় বা যেকোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচনে সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য কর্মচারীদের সঙ্গে সবচেয়ে বেশি সংখ্যায় দায়িত্ব পালন করেন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং কলেজ শিক্ষকরা।
নিহত অন্যদের মধ্যে দুইজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। এরা হলেন বাঘাইছড়ির নিউ লাল্যাঘোণা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবু তৈয়ব এবং কিশলয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমির হোসেন।
তারা দুইজনই ভোটের দিন কংলাকপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। আমির হোসেন মারা যান বাঘাইছড়িতে, আবু তৈয়ব মারা যান চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে।
অন্যদিকে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন বেটলিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফুলকুমারি চাকমা, চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে রয়েছেন পাকুজ্জ্যাছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কাঞ্চন কুমার দে এবং বাঘাইহাট মুখ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সোহেল চাকমা। কাঞ্চন ও সোহেল কংলাক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে পোলিং অফিসারের দায়িত্ব পালন করেছেন।
কাঞ্চন সহকারী শিক্ষক সমিতির বাঘাইছড়ি উপজেলা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সোহেল ওই কমিটির অর্থ সম্পাদক।
পুরো ঘটনায় হতাশ, ক্ষুদ্ধ ও ব্যথিত রাঙামাটির শিক্ষক সমাজ। মঙ্গলবার বাঘাইছড়ির প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ছিল না বললেই চলে। শিক্ষকদের চোখে মুখে বিষাদ আর ক্ষোভ। এমন ঘটনাকে কল্পনায়ও রাখেননি তারা।
বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি রিপানজু চাকমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের তো কোনো দোষ নেই। আমরা সরকারি চাকরি করি, চাকরির দায়িত্ব পালন করতেই গেছি। আমাদের উপর কেন হামলা হবে? এভাবে তো কাজ করা সম্ভব নয়।”
রিপানজু চাকমা সরকারের কাছে ভবিষ্যতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় দায়িত্বে পাঠানোর আগে শতভাগ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে বলেন, “নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে কোনো কাজই করা সম্ভব নয়। আমার তো মনে হয় এইভাবে ভবিষ্যতে কোনো শিক্ষকই এসব এলাকায় নির্বাচনী কাজ করতে যেতে চাইবেন না।”
তিনি হতাহতদের পরিবারকে পুনর্বাসন এবং তাদের সন্তানদের পড়াশুনার ব্যয় নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান।
বাঘাইছড়ি উপজেলা প্রধান শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি ইউনুস বাবুল বিডিনিউজকে বলেন, “এরা সবাই আমাদের সহকর্মী, আমরা সবাই সবার পরমাত্মীয়। আমরা সরকারি দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি জীবন হারাই, এর দায় কার? আমাদের স্ত্রী সন্তানের জীবন কে চালাবে? কেন এই বর্বরতা?”
শিক্ষক সমিতির জ্যেষ্ঠ এই নেতা আবেগজড়িত কণ্ঠে বলেন, “মানুষ গড়ার কারিগরদের যারা নির্মমভাবে হত্যা করতে পারে তারা কি আদৌ মানুষ?”
শিক্ষক সমিতির এই দুই নেতাই সহকর্মীদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে কর্মসূচি দেবেন বলে জানিয়েছেন।