বাঙলা কলেজে ঠিকমতো ক্লাস হয় না - দৈনিকশিক্ষা

বাঙলা কলেজে ঠিকমতো ক্লাস হয় না

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

তখন বেলা পৌনে ১১টা! কলেজের মাঠে অসংখ্য ছাত্রছাত্রী। কেউ আড্ডা দিচ্ছেন, কেউ এদিক-ওদিক ঘুরছেন। দুই ছাত্রের সঙ্গে কথা হলো। দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ে। জানাল, এখন ক্লাসের সময়, কিন্তু ক্লাস না করলেও কোনো চাপ নেই। বেশির ভাগ সময়ই তাদের ক্লাসে উপস্থিতি কম থাকে। দুটি শাখা থাকলেও শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম থাকায় কখনো কখনো দুই শাখার ক্লাস একসঙ্গে হয়। রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মোশতাক আহমেদ।

ক্লাস না করে কীভাবে সিলেবাস শেষ করো? এমন প্রশ্নের জবাবে বিজ্ঞান শাখার এই দুই ছাত্রই বলল, তারা প্রাইভেট পড়ে। এলাকায় বড় ভাইয়ের কাছে বিজ্ঞানের বিষয়গুলো পড়ে। একটি বিষয় পড়ে কলেজের এক শিক্ষকের কাছে।

রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে পড়ুয়া এক ছাত্র বললেন, প্রথম তিন-চার মাস ভালোমতোই ক্লাস হয়েছিল, এরপর খুবই কম ক্লাস হয়েছে।

রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত সরকারি বাঙলা কলেজের চিত্র এটি। ৭ সেপ্টেম্বর সরেজমিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা বলেন, উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে মোটামুটি ক্লাস হয়। কিন্তু ওপরের শ্রেণিতে ক্লাস খুব কম হয়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দুই পক্ষেই ক্লাসের প্রতি গুরুত্ব কম। যদিও কয়েকজন শিক্ষক বলেছেন, তাঁরা ঠিকই ক্লাসে যান, অনেক সময় শিক্ষার্থীরাই ক্লাসে কম আসেন। আবার বিভিন্ন বাস্তবতার কারণে ক্লাসে নির্ধারিত পরিমাণ উপস্থিতি না থাকলেও পরীক্ষার সুযোগ দিতে হয়।

৫৭ বছরের পুরোনো কলেজটিতে মোট শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৩০ শতাংশ ছাত্রী থাকলেও তাঁদের জন্য আবাসিক নিবাস নেই। ফলে ছাত্রীদের থাকা নিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। ছাত্রদের জন্য একটি ছাত্রাবাস থাকলেও আসন (বিছানা) আছে মাত্র ১৭৫টি। থাকেন আরও বেশি। মো. অলি উল্লাহ নামের এক ছাত্র বলেন, চারজনের বিছানায় তাঁরা থাকেন আটজন।

অবশ্য ছাত্রদের জন্য আরও একটি ছাত্রাবাসের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আবাসিক–সংকটের মধ্যে আবার যাতায়াতের জন্য বাস মাত্র একটি। কলেজটিতে শ্রেণিকক্ষ আছে ৪৬টি, যা প্রয়োজনের তুলনায় কম। উচ্চমাধ্যমিকের ফলও ঢাকার অন্যান্য পরিচিত কলেজের চেয়ে অনেক পিছিয়ে।

অবশ্য কলেজের অধ্যক্ষ ফেরদৌসী খান বলেন, আগে ফল আরও খারাপ হতো। এবার জিপিএ-৫ এবং পাসের হার বেড়েছে। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর গত ১০ মাসে শিক্ষাক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। ক্লাসেও উপস্থিতি বেড়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম দেখার জন্য ‘নিবিড় পর্যবেক্ষণ’ কমিটি করে দেওয়া হয়েছে।

১৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিক ছাড়াও ১৮টি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও ১৪টি বিষয়ে স্নাতকোত্তর পড়ানো হয়। শিক্ষার্থী প্রায় ১৮ হাজার। ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দে কলেজটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। আগে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। কলেজ কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, বর্তমানে শিক্ষক আছেন ১৫৩ জন। এর মধ্যে অনুমোদিত পদে আছেন ১১৮ জন। বাকিরা সংযুক্ত বা ইনসিটু (সাময়িক ব্যবস্থা)। দেশের অন্যান্য কলেজের তুলনায় এখানে শিক্ষক একেবারে কম নয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় এখনো কম। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১: ১১৭ জন। অথচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর গড় অনুপাত ১: ২১।

২০১৬ খ্রিষ্টাব্দের নভেম্বরে কলেজটি নিয়ে প্রতিবেদন করেছিল প্রথম আলো। তখনো এই সমস্যাগুলো কমবেশি ছিল। তবে এখন কলেজের মাঠের সামনে দুটি বহুতল ভবন হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা বিভাগের একজন শিক্ষক বলছিলেন, এই ভবনগুলো হলে শ্রেণিকক্ষের সমস্যা অনেকটাই কেটে যাবে। ক্যাম্পাসের পরিবেশ আগের চেয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন দেখা গেছে।

তবে ঠিকমতো ক্লাস না হওয়াকে বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেছেন শিক্ষার্থীরা। ৭ সেপ্টেম্বর ইংরেজি বিভাগে গিয়ে দেখা যায়, ৪০২ নম্বর কক্ষে মাত্র ৯ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ক্লাস করছেন একজন শিক্ষক। ইংরেজি বিভাগে পড়ুয়া ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী তাফসীর উদ্দিন বলেন, তাঁরা দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা দিয়েছেন বেশ কিছুদিন আগে। কিন্তু এখনো তাঁদের তৃতীয় বর্ষের ক্লাস শুরু হয়নি।

বিভাগটিতে শ্রেণিকক্ষ মাত্র দুটি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইংরেজি বিভাগের একজন শিক্ষক বলেন, এখানকার শিক্ষার্থীরা বেশির ভাগই অসচ্ছল পরিবারের সন্তান। ওপরের শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনেকে উপার্জনের পেছনে ছোটেন। আবাসিক–সংকটের কারণে দূরের শিক্ষার্থীদের অনেকে নিয়মিত আসতে পারেন না। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন বিভাগেও কমবেশি একই চিত্র।

এইচএসসির ফলে পিছিয়ে

এ বছর এই কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিলেন ২ হাজার ৬৪৪ জন। পাস করেছেন ১ হাজার ৯০৪ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১৬ জন। গড় পাসের হার ৭২ শতাংশ। অথচ একই মানের শিক্ষক (সবাই বিসিএস ক্যাডার) থাকা ঢাকা কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে পাসের হার ৯৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ এবং জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৯১ জন। এমন শিক্ষক–সংকট থাকা রাজধানীর কবি নজরুল সরকারি কলেজে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৫২ শতাংশ।

তবে বাঙলা কলেজের কয়েকজন শিক্ষক বললেন, তাঁদের কলেজে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হন। এ জন্য ফলও অন্যান্য কলেজের মতো ভালো হয় না।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0034260749816895