এমপিওভুক্তির দাবিতে আমরণ অনশনে ১৫৪ শিক্ষক অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সোমবার (২ জুলাই) অসুস্থ শিক্ষকদের সুস্থতা কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয়। এসময় অনশনরত শিক্ষকরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। গত ২৫ জুন থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীতে পাশের সড়কে অনশন শুরু করেন ননএমপিও শিক্ষকরা। টানা ৮দিন রোদ, বৃষ্টি উপেক্ষা করে শিক্ষকরা খোলা আকাশের নিচেই অবস্থান করছেন। এ সময় দেখা গেছে, তাদের কেউ কেউ মাথার ওপর পলিথিন ও ছাতা ধরে বসে আছেন। অনেক শিক্ষক অসুস্থ হয়ে স্যালাইন নিয়ে শুয়ে আছেন। গুরুতর অসুস্থ ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলারসহ ২১ শিক্ষক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
আমরণ অনশনের আগে একই দাবিতে গত ১০ জুন থেকে তাঁরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন। বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে দাবি পূরণ না হওয়ায় গত ২৫ জুন থেকে আমরণ অনশন শুরু করেন।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রোববার (১ জুলাই) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, নীতিমালা অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। সম্পন্ন হলে জুলাই থেকে শিক্ষকেরা এমপিও প্রাপ্য হবেন। মতিঝিলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের তিনটি পাঠ্যপুস্তক (বাংলা সাহিত্যপাঠ, বাংলা সহপাঠ এবং ইংলিশ ফর টুডে) বাজারজাতকরণ ও বিতরণ কার্যক্রম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
এদিকে, এমপিওভুক্তির দাবিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দুটি প্রস্তাব দিয়েছেন ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। দাবি দুটি হলো সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির আওতায় এনে আংশিক বেতন চালু করে পরবর্তী অর্থবছরে তা সমন্বয় করা। এ ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে এমপিওভুক্ত না হওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য এমপিওভুক্তির পর তিন বছর সময় দেয়া। আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া ননএমপিও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক বিনয় ভূষণ রায়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আমরণ অনশনের সপ্তম দিনে রোববার (১ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে এই প্রস্তাব দিয়ে আসেন।
বর্তমানে সারাদেশে এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ২৮ হাজার। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন প্রায় ৫ লাখ। তাদের বেতন-ভাতা বাবদ মাসে খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৯০০ কোটি টাকা। এর বাইরে স্বীকৃতি পাওয়া ননএমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আছে ৫ হাজার ২৪২টি। এগুলোতে শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ৭৫ থেকে ৮০ হাজার। স্বীকৃতির বাইরে আছে ২ হাজারেরও বেশি ননএমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সূত্রমতে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করা হলে এবং ওই সব প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৮০ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীকে এমপিওভুক্ত করলে মাসে আরও প্রায় দেড়শ কোটি টাকা খরচ হবে। যদিও সরকারের পরিকল্পনা হলো হাজারখানেক প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা।