কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনাবাসিক ছাত্রীরা ভাড়া বাসায় থাকতে গিয়ে বছরের পর বছর বাড়তি ভাড়া গুনছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। একই এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতে গেলে যে দামে বাসা ভাড়া দেয়া হয় ছাত্রীরা নিতে গেলে গুনতে হয় তার তিনগুণ। সিটি করপোরেশন থেকে বাসা ভাড়া নির্দিষ্ট করে না দেয়ায় বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ ছাত্রীদের।
বর্তমানে এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের জন্য একটিমাত্র আবাসিক হল রয়েছে। যেখানে তাদের জন্য বরাদ্দ মাত্র ৩০৩টি সিট। তাই বাধ্য হয়ে অধিকাংশ ছাত্রীকে বাসাভাড়া করে থাকতে হয়। তবে মেয়েদের নিরাপত্তা বেশি দিতে হয় বলে ছাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া নেয়ার কথা জানান বাড়িওয়ালারা।
কুমিল্লা শহর থেকে প্রায় ১১ কিলোমিটার দূরে অবস্থান হওয়ার পরও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বাসা নিতে বাড়তি ভাড়া গুনতে হয় এখানকার ছাত্রীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ২৪নং ওয়ার্ডের সালমানপুর এলাকায় ৩০টির বেশি ছাত্রী মেস আছে। যেখানে ছাত্রীরা এক রুমে তিনজন থাকেন। সিটপ্রতি তাদের গ্যাস বিলসহ গুনতে হয় এক হাজার ৫০০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা। রুমভেদে সাড়ে চার হাজার থেকে ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ রয়েছে বাসা মালিকদের বিরুদ্ধে। তবে বাসা মালিকরা বলছেন, ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য একটু বেশি ভাড়া নেয়া হয়। প্রায় পাঁচজন বাসা মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রীদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতে গেলে তিন রুমের বাসাভাড়া গ্যাস বিলসহ পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন প্রবাসী হাউসে তিন রুমের একটি ফ্যামিলি বাসা পাঁচ হাজার টাকা থেকে আট হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া হয়। বাসার মালিক জানান, নিচতলায় বাসা ভাড়া বেশি থাকলেও পাঁচতলায় তিন রুমের বাসা পাঁচ হাজার টাকায় ভাড়া দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রওনক জাহান লোরা থাকেন নিরিবিলি ছাত্রীনিবাসে। তিনি বলেন, আমাদের ক্যাম্পাসের আশপাশে মেয়েদের মেসগুলোর ভাড়া ফ্যামিলি বাসা থেকে প্রায় দ্বিগুণ। আমাদের বেশিরভাগ মেসেই সিট ভাড়া ও অন্যান্য খরচসহ প্রায় এক হাজার ৬০০ টাকা খরচ হয়। ছাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া নেয়ার বিষয়ে আরও এগিয়ে সুফিয়া প্লাজা। এখানে সিটপ্রতি একজন শিক্ষার্থীকে দুই হাজার টাকা গুনতে হয়। সে হিসাবে এখানে রুমপ্রতি ভাড়া ছয় হাজার টাকা গুনতে হয়।
এই তো গেল এক বাসার চিত্র। একই চিত্র দেখা যায় জামসেদ ভিলা, নিরিবিলি, সালমা, মালঞ্চা, ফারজানা ছাত্রীনিবাসগুলোতে। এসব বাসায় ছাত্রীদের মাসে প্রায় দেড় হাজার টাকা করে গুনতে হয়।
এলাকাটি সিটি করপোরেশনের আওতায় হওয়ায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বাসা ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এ বিষয়ে ২৮নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ফজল খান বলেন, সিটি করপোরেশন থেকে এখনও বাসাভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি। যারা বেশি বাসাভাড়া নেন, তাদের সঙ্গে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন বলেন, বাড়তি ভাড়া নেয়া অন্যায়। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ করলে আমরা বাড়িওয়ালাদের নিয়ে বসে ভাড়া কমানোর বিষয়ে আলোচনা করব।