সারাদেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া অব্যাহত রাখতে এবার শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি পাঠানোর আদেশে শিক্ষকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে শিক্ষকরা প্রতি সপ্তাহে লেখাপড়ার খোঁজ নেবেন। পাশাপাশি সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে পাঠদানের আলোকে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের জন্য মাসে একবার প্রশ্নপত্র দিয়ে আসবেন। ছাত্রছাত্রীরা নিজের খাতায় উত্তর লিখে রাখবেন। পরে শিক্ষকরা তা সংগ্রহ করে মূল্যায়ন করবেন। তবে এই উদ্যোগের পর সারাদেশের শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাকে তাদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
এদিকে ৫ জুন রাতে দৈনিক শিক্ষার লাইভে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. আবুল কাশেম বলেন, সারাদেশের ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ শিক্ষক বাড়ি বাড়ি গিয়ে ক্লাস পরীক্ষা নিতে চাচ্ছেন না। শিক্ষকরা ভয় পাচ্ছেন। তারা ঝুঁকির মধ্যে আছে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, এ কার্যক্রম সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে করতে হবে না। তাই মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে শিক্ষকদের প্রতি সহনশীল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
দৈনিক শিক্ষাডটকমের সম্পাদক ও এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ইরাব) এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান খানের সঞ্চালনায় ফেসবুক লাইভে যুক্ত হয়ে এ শিক্ষক নেতা আরও বলেন, এর আগে বিস্কুট বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে গিয়ে অনেক প্রাথমিক শিক্ষক করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। তাই বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির পক্ষ থেকে বিষয়টি আবারও ভেবে দেখার আহ্বান জানাচ্ছি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রতি।
বাড়ি বাড়ি যাওয়া কর্মসূচির কথা নিশ্চিত করে পিরোজপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জেছের আলী দৈনিক শিক্ষা ডটকমকে বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম-আল-হোসেন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম তদারকি করতে শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। সে প্রেক্ষিতে অ্যাকশন প্ল্যান হাতে নেয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় আলাদা আলাদা উপজেলায় দেয়া অ্যাকশন প্ল্যান অনুযায়ী শিক্ষকরা সপ্তাহে একবার শিক্ষার্থীদের সাথে সাক্ষাৎ করে নিজে পড়ালেখা তদারকি করবেন। আর মাসেনএকবার প্রশ্নপত্র তৈরি করে তাদের বাড়ি পৌঁছে দেবেন। শিক্ষার্থীরা উত্তর লিখে রাখবেন এবং সেই উত্তর পত্র পরবর্তীতে শিক্ষক সংগ্রহ করে মূল্যায়ন করবেন।
তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে আরও বলেন, বেশ কিছু উপজেলায় অ্যাকশন প্ল্যান ইতিমধ্যে হাতে নেয়া হয়েছে শিক্ষক-শিক্ষা কর্মকর্তারা একত্রিত হয়ে বসে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করেছেন এ ব্যাপারে আদেশ জারি করা হয়েছে অনেক উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শিক্ষকরা দৈনিক শিক্ষাকে জানিয়েছেন, বাড়ি বাড়ি যাওয়া ঝুঁকিপূর্ণ। তবে কোনো কোনো শিক্ষক বলছেন, উদ্যোগটি ভালো। এতে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় ফিরে আসার পাশাপাশি মানসিকভাবেও চাঙ্গা হবে। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ফসিউল্লাহ বলেন, শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন শ্রেণি কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন। তাদের বিকল্প প্রক্রিয়ায় পাঠদান চলছে। এখন আমরা সেই পাঠদানের ওপর মূল্যায়ন করতে চাই।
১৭ মার্চ থেকে বন্ধ আছে দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ওই মাসের শেষের দিকে শিক্ষার্থীদের টেলিভিশন পাঠদান শুরু হয়। পরে বেতারে পাঠদান প্রক্রিয়া শুরু করতে এগিয়ে আসে ইউনেস্কো। এ নিয়ে সংস্থাটির তত্ত্বাবধানে কাজ চলছে। এরইমধ্যে মোবাইল ফোন হটলাইনে বিশেষজ্ঞ শিক্ষকের পরামর্শ সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিশেষ হেল্পলাইন নম্বর-৩৩৩৬ এ ফোন করে ভালোমানের শিক্ষকদের কাছ থেকে শ্রেণিপাঠ ও পরামর্শ নিতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এতে পাঁচ মিনিট পর্যন্ত বিনা খরচে কথা বলা যাবে। উদ্যোগটি সফল হলে তা কোচিং সেন্টারের বিকল্প হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই) প্রকল্পের সম্মিলিত উদ্যোগে এ কার্যক্রম নেয়া হয়েছে। সচিব আকরাম-আল-হোসেন বলেন, মোবাইলের মাধ্যমে অন্তত ৯৮ ভাগ শিক্ষার্থী বা অভিভাবকের কাছে শিক্ষা পরামর্শ ও শ্রেণিপাঠ পৌঁছানো সম্ভব হবে। এ কারণেই এই হেল্পলাইন চালুর উদ্যোগ।