বিএনপি-জামাত ও স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে ডজনেরও বেশি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত - দৈনিকশিক্ষা

বিএনপি-জামাত ও স্বাধীনতাবিরোধীদের নামে ডজনেরও বেশি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমানসহ বিএনপির কয়েকজন নেতা এবং স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির নামে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। জামাতসংশ্লিষ্ট এনজিও প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত হয়েছে। যদিও এমপিওভুক্তিতে রাজনৈতিক পরিচয় বিবেচনা করা হয়েছে মর্মে কোনও কোনও গণমাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে। তবে, শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপুমনি সাফ বলে দিয়েছেন এমপিওভুক্তিতে রাজনৈতিক বিবেচনার অভিযোগ মিথ্যা। কোনও রাজনৈতিক বিবেচনা করা হয়নি। 

শিক্ষাবিদরা বলেছেন, স্বাধীনতা বিরোধীদের নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম পরিবর্তন করে মুক্তিযোদ্ধাদের নামে নামকরণ করলেই ভালো হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তো সবাই পড়াশোনা করে। 

দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, জিয়াউর রহমান ও প্রয়াত অর্থমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা এম সাইফুর রহমান ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ এক ডজনেরও বেশি প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়েছে। এছাড়াও কম পরিচিত অনেক বিএনপি নেতার নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত হয়েছে।   

দৈনিক শিক্ষার প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যমতে এ প্রতিষ্ঠানগুলো নাম: ১. বগুড়া সদরের শহীদ জিয়াউর রহমান টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ । ২. নেত্রকোনার কমলাকান্দা হিলফুল ফুজুল দাখিল মাদরাসা। ৩. ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলার শহীদ জিয়া ইসলামিয়া আলিম মাদরাসা। ৪. পঞ্চগড় সদর উপজেলার হাজী খমির উদ্দিন প্রধান আলিম মাদরাসা। ৫. বগুড়ার গাবতলীর শহীদ জিয়াউর রহমান গার্লস হাইস্কুল। ৬. কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার নৈয়ার ড. খন্দকার মোশাররফ হোসান হাইস্কুল। ৭. পটুয়াখালী সদরের হিলফুল ফুজুল টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ। ৮. সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার এম সাইফুর রহমান টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম কলেজ। ৯. সাতক্ষীরার তালার শহীদ জিয়াউর রহমান মহাবিদ্যালয়। ১০. ঝালকাঠির নলছিটির প্যালেস্টাইন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ১১. বগুড়ার গাবতলীর শহীদ জিয়াউর রহমান হাইস্কুল। ১২. কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সোনাকান্দা ড. মোশাররফ হোসান ইসলামিয়া রহমানিয়া দাখিল মাদরাসা ১৩. ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের হিলফুল ফুজুল টেকনিক্যাল ও বিএম কলেজ। ১৪. ঝিনাইদহের মশিউর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়।   

জানা যায়, পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা ৭১'এর শান্তি কমিটির সদস্য খামির উদ্দীন প্রধানের নামে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসাটির আলিম স্তর এবার এমপিওভুক্ত হয়েছে। এতে এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে চাকলা খামির উদ্দীন দাখিল মাদরাসাটি  প্রতিষ্ঠার এক বছরের মাথায় ১৯৯৫ খ্রিষ্টাব্দে এমপিওভুক্ত হয়। মাদরাসা  ২০০২ খ্রিষ্টাব্দে আলিম শাখার একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। 

এ নিয়ে এলাকার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের জনমানুষ ও মুক্তিযোদ্ধারা তীব্র সমালোচনা করছেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শান্তি কমিটি'র অন্যতম সদস্যের নামে কীভাবে এই প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হলো? সারাদেশে যখন স্থানীয়ভাবে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদর, আল সামসদের তালিকা সরকার প্রকাশের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ঠিক ওই সময় চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর নামে প্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তি!

পঞ্চগড়ের যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, খামির উদ্দীন শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য পাকিদের কাছে সরবরাহ করতেন। অনেক টাকা পয়সার মালিক ছিলেন খামির। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর আগেই মারা গেছেন। নইলে ফাঁসি হতো নিশ্চিত। 

জহিরুল বলেন, যুদ্ধ চলাকালে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ কয়েকবার খামিরের বাড়ী ঘেরাও করলেও পাকড়াও করতে পারেনি। ১৬ই ডিসেম্বরের পর খামিরকে ধরা আনা হয়।  

এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা সায়খুল ইসলাম বলেন, খামির একটা আস্ত শান্তি কমিটির নেতা ছিলেন। কুখ্যাত স্বাধীনতাবিরোধী ছিলো। এলাকা ঘৃণিত ব্যক্তি। 

এমপিওভুক্তি বাতিল অথবা এর নাম পরিবর্তন করে একজন মুক্তিযোদ্ধার নামে করার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।  

হিলফুল ফুজুল জামাত ইসলামী এনজিও হিসেবে পরিচিত। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ তদন্ত করছে দুর্নীতি দমন কমিশন। 

ঝিনাইদেরর বিএনপির সাবেকে এমপি ও বর্তমানের জেলা বিএনপির সভাপতি মশিউর রহমান নামে প্রতিষ্ঠিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি এমপিওভুক্ত হওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন এলাকাবাসী। 

ঝালকাঠির নলছিটির প্যালেস্টাইন টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা এলাকার সুলতান আহমেদ। তিনি জামাতপন্থী প্রশাসন ক্যাডার হিসেবে পরিচিত। বিএনপি আমলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে চার বছর চাকরি করার সময় প্রতিষ্ঠানটি তৈরি করেন। ক্ষমতা খাটিয়ে তিনি শিক্ষার্থী ভর্তিতে বাধ্য করান। পরীক্ষার আগে ধরে এনে নিবন্ধন করান।  ২০০৬ খ্রিষ্টাব্দে তিনি হবিগঞ্জের ডিসি নিযুক্ত হন। ২০০৭ খ্রিষ্টাব্দে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এসেই যে কয়জন ডিসি ও এসপিকে ওএসডি ও প্রত্যাহার করে তাদের মধ্যে সুলতান একজন। জামায়াতে সংশ্লিতার অভিযোগে তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়নি। বর্তমানে তিনি অবসরে। সুলতানের আরেক আত্মীয় শাহেদুল ইসলাম চৌধুরী কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের রাজাকার পরিবারের সন্তান হিসেবে পরিচিত। তার বিরুদ্ধে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকাকালে শিবির করার অভিযোগ রয়েছে। 

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0042951107025146