শিক্ষার্থীদের রান্না করা খিচুড়ি কীভাবে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে জ্ঞান নিতে কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠানো হবে বলে যে খবর বের হয়েছে, তাতে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।
তিনি বলছেন, সাংবাদিকতায় আসা বিএনপি-জামায়াতের লোকজনের কোনো জ্ঞান নেই বলে তারা হুট করে লিখে দিচ্ছে; সরকারের ভাবমূর্তি নিয়ে তারা চিন্তা করে না।
সচিবালয়ে বুধবার এক ব্রিফিংয়ে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আপনারা (উপস্থিত সাংবাদিক) মাইন্ড করবেন না, আপনাদের এই সাংবাদিকতায় কিছু বিএনপি, জামায়াতের লোকজন নানা ধরনের সাংবাদিকতার পেশা নিয়ে এখানে আসছে।”
“তাদের কোনো জ্ঞান-গরিমা নেই, একটা হুট করে লিখে দিয়েই বোধহয় হয়ে গেল। সরকারের ভামমূর্তি কোথায় গেল না গেল এরা তা দেখে না।”
বিএনপি-জামায়াতের এসব সাংবাদিক নতুন করে সাংবাদিকতায় এসেছেন দাবি করে জাকির বলেন, “আমার এলাকায় দেখছি সমস্ত বিএনপির, ছাত্রদল, যুবদলের ছেলেরা এখন সাংবাদিকতা করে ভ্রান্ত রিপোর্ট করে। এদিকে আপনারা একটু নজর রাখবেন, আমাদের সরকারের যেন বদনাম না হয়।
‘খিচুড়ি রান্না শিখতে কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানো হবে’ শিরোনামে খবর প্রকাশ করায় মন্ত্রণালয় ও সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলেও মনে করেন তিনি।
‘অভিজ্ঞতা নেওয়ার দরকার আছে’
প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের দুপুরে রান্না করা খিচুড়ি কীভাবে দেওয়া হবে, সেই ব্যবস্থাপনা নিয়ে অভিজ্ঞতা নিতে কর্মকর্তাদের বিদেশে পাঠানোর প্রয়োজন আছে বলেই মনে করেন গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির।
তিনি বলেন, বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের বিস্কুট দেওয়া হয়। তাদের দুপুরে খাবার দেওয়ার চিন্তাভাবনা করেছি। ১৯ হাজার ২৮২ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব করা হয়েছে, ১৬ উপজেলায় এই কর্মসূচি পাইলটিং করা হয়।
“ডব্লিউএফপি আমাকে ভারত নিয়ে যায়। আমরা যখন পাইলটিং করতে চাই তখন চিন্তা করছিলাম সিস্টেমটা কী? দুই কোটি বাচ্চাকে জিনিসটি দিতে গেলে সিস্টেম কী? এই ধারণা নিতে আমি নিজে কেরালায় যাই।
“আপনারা এখানে যারা সাংবাদিক আছেন, প্রথম যখন সাংবাদিকতায় এসেছেন তখন কি সিনিয়র সাংবাদিকের কাছে বুদ্ধিপরামর্শ নেননি? তারা কীভাবে সংবাদ সংগ্রহ করে, সেই অভিজ্ঞতা কি নেননি?”
১৯৪১ সাল থেকে কেরালায় স্কুলমিল চালু আছে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সেই অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য আমি সেখানে যাই, তাদের বিভিন্ন প্রোগ্রাম দেখেছি। কীভাবে পরিচালনা করে তা দেখেছি। সেটা দেখে আমি এখানে পাইলটিং করেছি।
“এই কারণে ডিপিপিতে কিছু শিক্ষা নেওয়ার জন্য, খিচুরি পাকের শিক্ষা নয়, ব্যবস্থাপনা জানার জন্য, শেখার জন্য কীভাবে করছে কিছু টাকা ধরা আছে। এনিয়ে হৈ চৈ…।
“বিএনপির রিজভী আহমেদ নানা ধরনের কথা বলছেন। তারা দেখেইনি, পড়েনি কিছু। ২০০৫ সাল থেকে শুরু করে কোনো সরকারের ইতিহাস নেই, জিয়াউর রহমানের নেই, খালেদা জিয়ার নেই, কেউ শিক্ষা নিয়ে কথা বলেনি।”
জাকিরের ভাষ্য, “আপনাদের (সাংবাদিক) সাথে মেলামেশার কারণে আমার কি জ্ঞান বাড়েনি? এটার প্রয়োজন আছে। প্রত্যেকেরই সিনিয়রদের কাছে শিখবার প্রয়োজন আছে। যে কারণে এ বিষয়ে কিছু টাকা ধরা আছে। এটি বিশাল কোনো ক্ষতিকর ব্যবস্থা না, এটা প্রস্তাব। পরিকল্পনা কমিশন ও একনেক দেখবে, সংস্কার করবে। এটা নিয়ে হৈ চৈ করার মত কোনো অবস্থা নেই।”
প্রতিমন্ত্রী জানান, কেরালায় শিক্ষার্থীদের মিড-ডে মিল দিতে সরকার কিছু অর্থায়ন করে, বাকীটা সেখানকার অন্যরা দেয়। এজন্য বাইরে গিয়ে কিছু অভিজ্ঞতা নেওয়া দরকার।
বিএনপি মানুষকে উস্কে দিচ্ছে দাবি করে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, এদের থেকে মুক্তি পেতে হবে এবং মানুষকে জানাতে হবে শেখ হাসিনার সরকার কখনো জনকল্যাণ ব্যতীত কোনো কাজ করে না। এখানেও মিড-ডে মিলের ভালো দিকের জন্য এটা করেছি। বাইরে গিয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার দরকার আছে কি নেই?
“প্রাইমারী স্কুলের অধিকাংশ শিক্ষার্থী গ্রামে বসবাস করে। খেটে খাওয়া মানুষের বাচ্চারাই বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। অনেক বাচ্চা আছে পুষ্টিহীনতায় ভুগে, নানা অসুখ-বিসুখে ভুগে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন।”