বরিশাল সরকারি বিএম কলেজের বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রী নিবাসের সহকারী সুপার ও বিএম কলেজ শিক্ষক পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে হলের ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ উঠেছে। জানানোর পরও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় হলের দেড়শতাধিক ছাত্রী সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে হল চত্বরে বিক্ষোভ করেন।
পরে বিষয়টি নিয়ে ছাত্রীদের সাথে আলোচনায় বসেন কলেজ অধ্যক্ষ ও শিক্ষক পরিষদের নেতারা। কিন্তু সেখানে বসেও শিক্ষক নেতা আব্দুর রহিম ছাত্রীদের দেখে নেয়ার হুমকি দিলে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয় ছাত্রী নিবাসে। এ সময় ছাত্রীরা শিক্ষক রহিমকে অপসারণের দাবি জানান।
জানা গেছে, মেয়েদের দিকে কু-নজর, রাত ১১টার পর মেয়েদের রুমে প্রবেশ করা, রাতে টয়লেট থেকে মেয়েদের ডাকা, ছাত্রীদের সাথে আপত্তিকর কথা বলা, ছাত্রীদের সার্চ করার নামে আপত্তিকরভাবে শরীরে হাত দেয়াসহ ২১টি অভিযোগ করা হয় সহকারী হল সুপার ও শিক্ষক নেতা আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে। বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রী নিবাসের আবাসিক ছাত্রীরা কলেজ অধ্যক্ষর কাছে অভিযোগগুলো উপস্থাপন করেন।
এ ছাড়া বিষয়টি হল সুপার আবু সাদেক মো. শাহ আলমকে একাধিকবার জানানো হলেও তিনি এতে কর্ণপাত করেননি। এরপরই কলেজ অধ্যক্ষর কাছে শিক্ষক আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে ২১টি অভিযোগ তুলে ধরে এর সমাধানের জন্য ছাত্রী নিবাসের আবাসিক ছাত্রীরা দরখাস্ত দেন।
সোমবার রাতে কলেজ অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান সিকদার, শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আলামিন সরোয়ারসহ অন্যান্য সিনিয়র শিক্ষকরা বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনায় বসেন। সেখানে অভিযোগগুলো উত্থাপিত হওয়ার পর শিক্ষক আব্দুর রহিম উত্তেজিত হয়ে ছাত্রীদের দেখে নেয়ার হুমকি দিলে ছাত্রীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুনরায় কলেজ অধ্যক্ষর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয় বলে দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানিয়েছেন বনমালী গাঙ্গুলী ছাত্রী নিবাসের বেশ কয়েকজন ছাত্রী।
ছাত্রী নিবাসের বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানিয়েছে, শুক্রবার হলের এক ছাত্রীর রুমে প্রবেশ করে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা চালায় সহকারী হল সুপার আব্দুর রহিম। এরপরে বিষয়টি নিয়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি হলে কলেজ কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ধামা চাপা দিতে সোমবার রাতে ছাত্রী নিবাসে মীমাংসা বৈঠকে বসে। সেখানে বসেও কলেজের শিক্ষকরা এই বিষয় কাউকে না বলার জন্য ছাত্রীদের বলে।
এই বিষয়ে জানতে সহকারী হল সুপার আব্দুর রহিমকে কল করা হলে তিনি দৈনিক শিক্ষাডটকমকে জানান, ছাত্রীরা রুমে হিটার ব্যবহার করতো। তাদেরকে হিটার ব্যবহার করতে নিষেধ করা হয়। এ কারণে তারা ক্ষুব্ধ হয়ে এই অভিযোগগুলো করছে।
বিষয়টি সম্পর্কে জানতে কলেজ অধ্যক্ষ শফিকুর রহমান সিকদারকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ বিএম কলেজের এক ছাত্রলীগ নেতার ভাইয়ের সাথে সুসম্পর্কের কারণেই আব্দুর রহিম বিএম কলেজ শিক্ষক পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদ লাভ করেন। আর এর প্রভাব খাটিয়ে ছাত্রী নিবাসের সহকারী হল সুপারের দায়িত্বও পান তিনি। এরপর থেকেই তিনি ছাত্রীদের নানাভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিলেন। ওই ছাত্রলীগ নেতার ভাইয়ের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় ভয়ে আব্দুর রহিমের বিরুদ্ধে এতদিন কেউ মুখ খোলেনি বলে দাবি শিক্ষার্থীদের।