বিজ্ঞান শিক্ষাই বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনের নিয়ামক শক্তি - দৈনিকশিক্ষা

বিজ্ঞান শিক্ষাই বিজ্ঞানমনস্ক জাতি গঠনের নিয়ামক শক্তি

মো. মেসবাহুল হক |

জ্ঞানই শক্তি আর পরিশীলিত জ্ঞান তথা বিশেষ জ্ঞানই হচ্ছে বিজ্ঞান। বিজ্ঞান বলতে খুব স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের চোখে নানা যন্ত্রপাতি, আবিষ্কার, গবেষণা, ল্যাবরেটরি -এসবের দৃশ্য ফুটে ওঠে; কিন্তু বিজ্ঞানের আসল বিষয় শুধু যন্ত্রপাতি, গবেষণা, ল্যাবরেটরি নয়। বিজ্ঞানের আসল বিষয় হচ্ছে তার দৃষ্টিভঙ্গি। বর্তমান সভ্যতায় সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে বিজ্ঞান। আর সেটি এসেছে পৃথিবীর মানুষের বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে। কোনো কিছুর রহস্য অনুসন্ধানের জন্য কখনো সেটি যুক্তিতর্ক দিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়, কখনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়, আবার কখনো প্রকৃতিতে এই প্রক্রিয়াটিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হয়। সেই প্রাচীনকাল থেকে শুরু করে আজ অবধি অসংখ্য বিজ্ঞানী মিলে বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন।

বিজ্ঞান শিক্ষা বা বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি সাধিত হয়েছে এবং তার প্রভাবে আমাদের জীবনধারায় যে পরিবর্তন এসেছে; দৈনন্দিন কর্মকাণ্ড যেভাবে অধিকতর গতিশীল হচ্ছে, সেই গতির সাথে তাল মিলিয়ে সফলভাবে আরও এগিয়ে যেতে হলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির জ্ঞানে দক্ষতা অর্জন করার কোনো বিকল্প নেই এবং সেই দক্ষতা অর্জনে বিজ্ঞান শিক্ষার যে কোনো বিকল্প নেই সেই উপলব্ধিটুকু আজ অনেক বেশি প্রয়োজন।

মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনামের মতো আরও অনেক দেশ আজ থেকে ৫০ বছর আগেও উন্নয়নের মাপকাঠিতে প্রায় আমাদের কাতারে ছিল। তারা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে অগ্রাধিকার দিয়ে আজ আকাশচুম্বী সাফল্য অর্জন করেছে। কথিত আছে, পাকিস্তান সরকার যখন পিএল ৪৮০ থেকে গম পেয়েই খুশি হতো, তখন ভারত সরকার বিদেশিদের কাছে গম -এর পরিবর্তে বিশ্ব মানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সহায়তা চেয়েছিল। ফলে আইআইটি গুলোর আবির্ভাব এবং সেগুলো আজ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ভারতের পতাকাকে বিশ্বের সামনে উঁচু করে তুলেছে। স্বাধীনতার সময় যে ভারত ভালো মানের ব্লেড প্রস্তুত করতে পারত না, এখন তারা চাঁদে রকেট পাঠিয়ে পানির অস্তিত্ব খুঁজে পায়। শুধু তাই নয় নাসার (NASA) মতো প্রতিষ্ঠানেও ভারতীয়দের বিচরণ বর্তমানে চোখে পড়ার মতো। বলা হয়ে থাকে Indians are every where. আর এটি সম্ভব হয়েছে শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির চর্চাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার কারণে।

শিক্ষা এবং বিশেষ করে বিজ্ঞান শিক্ষায় আমাদের অবস্থান কী তা শুধু বিশ্লেষণই নয়-বাস্তবে এটা নিয়ে আমরা যদি কাজ করতে না পারি তাহলে আমরা শুধু বড়জোর একটি আমদানি নির্ভর পরনির্ভরশীল জাতিতে পরিণত হতে পারব মাত্র। অথচ এই আমাদের দেশেই বিজ্ঞান চর্চা যে একেবারেই হয়নি তাও কিন্তু নয়। বাংলাদেশি কিছু বিজ্ঞানীদের অবদানের কথা না বললেই নয়-

আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু: সবর্প্রথম উদ্ভিদে প্রাণের অস্তিত্ব অনুভব করেছিলেন বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক বিজ্ঞানী আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু৷ বিভিন্ন উদ্ভিদ নিয়ে গবেষণার এক পর্যায়ে তার মনে হলো, বিদ্যুৎ প্রবাহে উদ্ভিদও উত্তেজনা অনুভব করে এবং সাড়া দিতে পারে৷ এর অর্থ, উদ্ভিদেরও প্রাণ আছে৷ ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে বিজ্ঞানী বসু তার গবেষণার পূর্ণাঙ্গ ফলাফল বই আকারে প্রকাশ করেন৷

ড. কুদরাত-এ-খুদা: বিজ্ঞানী হিসাবে তিনি ও তার সহকর্মীদের ১৮টি আবিষ্কারের পেটেন্ট রয়েছে, যার মধ্যে ৯টি পাট সংক্রান্ত৷ এর মধ্যে পাট ও পাটকাঠি থেকে রেয়ন, পাটকাঠি থেকে কাগজ এবং রস ও গুড় থেকে মল্ট ভিনেগার আবিষ্কার উল্লেখযোগ্য৷ দেশে বিদেশে তার ১০২টি গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে৷

সত্যেন্দ্রনাথ বসু: ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে পার্টিকেল স্ট্যাটিস্টিক্স নিয়ে সত্যেন বোসের গবেষণাটি, যেটি আইনস্টাইন নিজে জার্মান ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন, অনেকের ভাষায় ২০ শতকের সেরা ১০ কাজের একটি৷ যদিও তিনি নোবেল পুরস্কার পাননি, কোয়ান্টাম থিওরির অনেক গবেষণার পথ খুলে দেয় তার গবেষণা৷ কোয়ান্টাম ফিজিক্সের অনন্য আবিষ্কার ‘গডস পার্টিকেলস’ বা ‘ঈশ্বর কণা’-র নামকরণ করা হয়েছে, তার ও আরেক পদার্থ বিজ্ঞানী পিটার হিগসের নামে – হিগস-বোসন পার্টিকেল৷

পি সি রায়: বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে ভারতীয় উপমহাদেশের শিল্পায়নে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য৷ ১৮৯৫ খ্রিষ্টাব্দে তিনি মারকিউরাস নাইট্রাইট আবিষ্কার করেন যা বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে৷ এটি তার অন্যতম প্রধান আবিষ্কার৷ তিনি তার সমগ্র জীবনে মোট ১২টি যৌগিক লবণ এবং পাঁচটি থায়োএস্টার আবিষ্কার করেন৷
মেঘনাদ সাহা: মেঘনাদ সাহা পরমাণু বিজ্ঞান, আয়ন মণ্ডল, পঞ্জিকা সংস্কার, বন্যা প্রতিরোধ ও নদী পরিকল্পনা নিয়ে গবেষণা করেন৷ তাপীয় আয়নবাদ সংক্রান্ত তত্ত্ব উদ্ভাবন করে জ্যোতির্পদার্থ বিজ্ঞানে (অ্যাস্ট্রোফিজিকস) উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন৷

আব্দুস সাত্তার খান: নাসা ইউনাইটেড টেকনোলজিস এবং অ্যালস্টমে কাজ করার সময়ে ৪০টিরও বেশি সংকর ধাতু উদ্ভাবন করেছেন বিজ্ঞানী খান৷ এই সংকর ধাতুগুলো ইঞ্জিনকে আরো হালকা করেছে, যার ফলে উড়োজাহাজের পক্ষে আরো দ্রুত উড্ডয়ন সম্ভব হয়েছে এবং ট্রেনকে আরো গতিশীল করেছে৷ তার উদ্ভাবিত সংকর ধাতুগুলো এফ-১৬ ও এফ-১৭ যুদ্ধ বিমানের জ্বালানি সাশ্রয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে৷

ডাক্তার শাহ এম ফারুক: কলেরা রোগের কারণ আবিষ্কার করেছেন ডা. ফারুক৷ কলেরার ঘটক ‘ভিবরিও’ নামে এক ধরনের শক্তিশালী ব্যাক্টেরিয়ার সংস্পর্শে অন্যান্য ব্যাক্টেরিয়া এসে কীভাবে একে আরো কার্যকরী বা শক্তিশালী করে তোলে সেটিই ছিল তার গবেষণা৷ আন্তর্জাতিক কলেরা রোগ গবেষণা কেন্দ্র বা আইসিডিডিআরবি-তে তিনি ও তার গবেষণা দল এ আবিষ্কার করেন৷
ড. মাকসুদুল আলম: পাটের জিনের আবিষ্কারক ড. মাকসুদুল আলম৷ এই বাংলাদেশি জিনতত্ত্ববিদের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ডাটা সফটের একদল উদ্যমী গবেষকের যৌথ প্রচেষ্টায় ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের মাঝামাঝি সময়ে সফলভাবে উন্মোচিত হয় পাটের জিন নকশা৷

ড. জামাল উদ্দিন: বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকর সৌর বিদ্যুৎ কোষ উদ্ভাবনের মধ্য দিয়ে ম্যারিল্যান্ডের কপিন স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক এবং গবেষক বাংলাদেশি বিজ্ঞানী ড. জামাল উদ্দিন ইতিহাস গড়েছেন৷ ড. জামাল উদ্দিন এবং তার গ্রুপ সোলার সেল থেকে শতকরা ৪৩.৪ পুনঃব্যবহার যোগ্য শক্তি উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে যা বিশ্বে এই উৎপাদনের সর্বোচ্চ মাত্রা৷
শুভ রায়: বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম কিডনি তৈরি করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী শুভ রায়৷ এটি চিকিৎসাবিজ্ঞানে অসামান্য কীর্তি৷ ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়ার সহযোগী অধ্যাপক শুভ রায় তার সহকর্মীদের নিয়ে কৃত্রিম কিডনি তৈরির কাজ শুরু করেন৷ চলতি দশকের গোড়ার দিকে দলটি ঘোষণা দেয় যে, তারা কৃত্রিম কিডনি তৈরি করে তা অন্য দেহে প্রতিস্থাপন করে সফল হয়েছে৷

হরিপদ কাপালী: হরিপদ কাপালী ছিলেন এক প্রান্তিক কৃষক৷ কিন্তু তার আবিষ্কার হরিধান কৃষিবিজ্ঞানের এক অনন্য সাফল্য৷ প্রকৃতির কাছ থেকেই শিক্ষা৷ প্রকৃতিতেই তার গবেষণা৷ তার নামে নামকরণ করা এই ধানটি অন্য যে কোনো ধানের চেয়ে উচ্চ ফলনশীল৷ এতে সার ও ওষুধও লাগে অনেক কম৷ সব মিলিয়ে সোনার বাংলার সোনালি আবিষ্কার হরিপদ কাপালীর হরিধান৷

বর্তমানে আমাদের দেশে বিজ্ঞান শিক্ষার অবস্থান কী তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে- আজ থেকে প্রায় ৩০-৪০ বছর আগেও প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বিজ্ঞান শিক্ষার যে সুযোগ ছিল, পরীক্ষণের যে ব্যবস্থা ছিল- এখন পরীক্ষণ এর সুযোগ নাকি সংকুচিত হয়ে এসেছে। ল্যাবরেটরিতে পূর্ণ নম্বর কোনো পরীক্ষণ না করেই পাওয়ার ব্যবস্থা হয়েছে, শিক্ষার্থী তৈরি না করে আমরা পরীক্ষার্থী তৈরি করছি, স্কুল কলেজের পড়ালেখার মান কেমন তা দেখতে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় সর্বোচ্চ গ্রেডধারী (জিপিএ-৫) এর অসহায় পরিণতিও আমরা দেখছি।

আমরা দেখতে পাচ্ছি, আমাদের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে এখন আর তেমন জ্ঞানের চর্চা, নতুন জ্ঞানের সৃষ্টি, গবেষণা হচ্ছে না বললেই চলে। অন্যের থিসিস পেপার/গবেষণা পত্র নাকি নকলও হচ্ছে। শ্রেষ্ঠ ২০০ থেকে ৫০০ অথবা হাজার বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় পৃথিবীর অষ্টম বৃহত্তম জনবহুল দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গণে আমাদের শিক্ষার মান তাই তেমন কোনো দাগ কাটতে পারছে না।

আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিষয়সমূহে ছাত্রদের অনাগ্রহ অত্যন্ত শঙ্কার বিষয়। একসময় দেশের শ্রেষ্ঠ মেধাবী শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞানের Fundamental বিষয়গুলোতে পড়াশোনা করত। এখন সম্ভবত এই ক্ষেত্রে চাকরির অভাব তাদের অন্যান্য বিষয়ের দিকে আকৃষ্ট করছে। তারা আজ বেশি বেশি বিবিএ-এমবিএ করছে। কিন্তু এখন সবার উপলব্ধি হওয়া উচিত হবে যে এ সমস্ত বিবিএ-এমবিএ ডিগ্রিধারীরা যে সমস্ত কোম্পানি/কল-কারখানায় কাজ করবেন, সেই কল-কারখানাই যদি না থাকে তা হলে তারা কাজ করবেন কোথায়?

দেশকে উন্নত করতে হলে উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই, আমাদের উৎপাদনমুখী হতে হবে। কল-কারখানা তৈরি করতে হবে, আমদানি নিরুৎসাহিত করতে হবে, দেশীয় পণ্য ব্যবহারের সংস্কৃতি চালু করতে হবে। এর ফলে বিজ্ঞান ও কারিগরি বিষয়ে কর্মক্ষেত্র তৈরি হবে। বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করতে হলে শ্রেষ্ঠ মেধাবীদের বিজ্ঞান শিক্ষায় আকৃষ্ট করতে হবে। শুধু ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার তৈরিই যেন বিজ্ঞান শিক্ষার একমাত্র উদ্দেশ্য না হয়। বিজ্ঞানের গবেষণাধর্মী বিষয়গুলোতে যারা অবদান রাখবেন, সমাজে তাদের পুরস্কৃত এবং মর্যাদার ব্যবস্থা করতে হবে। তবে শুধু সোনালি আস্তরণে লোহার টুকরা পুরস্কার দিয়ে মানুষকে সে ভাবে বিজ্ঞান শিক্ষায় আকৃষ্ট করা যাবে না।

সাংহাইয়ের জিয়াওটং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত একটি কনফারেন্সে অংশ নেয়া স্বনামধন্য শিক্ষাবিদের স্লোগান ‘বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে’। এর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানে গবেষণার জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ করতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অর্জন এর ওপর ভিত্তি করে গণমাধ্যমে প্রচার নিশ্চিত করে তাদের র‌¨vঙ্ক প্রকাশ করা এবং সেই অনুযায়ী পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিজ্ঞানসহ অনেক বিষয়ের যোগ্য এবং অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে এর সমাধানের জন্য টিভিতে শিক্ষা চ্যানেলের মাধ্যমে সকল শ্রেণি ও সকল বিষয়ের জন্য শ্রেষ্ঠ শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করা উচিৎ, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্র-ছাত্রীরা টিভি কক্ষে বসে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে দেখবে ও পাঠ গ্রহণ করবে। শ্রেয়তর কাজের উপযোগী মস্তিষ্ককে যাতে করে তথ্যের সংরক্ষণাগার হিসেবে ব্যবহার করা না হয় তার জন্য পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়নে সারা বছর ধরে গবেষণা করতে হবে। আমাদের ছাত্রদের দুর্বলতা চিহ্নিত করতে হবে। এমন সকল প্রশ্ন করতে হবে যার উত্তর মুখস্থ করে দেয়া সম্ভব না হয় এবং ছাত্রদের জিজ্ঞাসু হতে বাধ্য করবে। প্রশ্নপত্র প্রণয়নের জন্য উপযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সম্মানী রাখতে হবে।

বর্তমানে প্রচলিত উত্তাপহীন শিক্ষায় আগ্রহী করতে ব্যর্থ জিপিএ সিস্টেমের উন্নয়ন সাধন করতে হবে। যেন আমরা একই সাথে অধিক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মেধাকে চ্যালেঞ্জ করতে পারি। আন্তর্জাতিক গণিত, পদার্থবিজ্ঞান ও ইনফরমেটিক্স অলিম্পিয়াডের কঠিন আসর থেকে আমাদের ছাত্ররা যে নিয়মিতভাবে পদক আনতে পারছে তা থেকে প্রতীয়মান যে আমাদের ছাত্ররা সফলতার সঙ্গে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে সক্ষম।

সুতরাং অধিক সংখ্যক জিপিএ সিস্টেম ও চ্যালেঞ্জিং প্রশ্নপত্র দিয়ে আমাদের তরুণদের মেধা শাণিত করে তুলতে হবে। এর পাশাপাশি শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যোগ্য করে গড়ে তোলা উচিত। স্কুল কলেজের ভৌত অবকাঠামো বিনির্মাণেও তৎপর হওয়া উচিৎ। ছাত্রদের সর্বদা জ্ঞানার্জনে আকৃষ্ট করার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অত্যন্ত উদ্দীপনামূলক পরিবেশ সৃষ্টি করা উচিত।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির পথটি’ই আমাদের উন্নয়নের একমাত্র পথ, এটি ভাবতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত জনসংখ্যার এই দেশে একমাত্র মানবসম্পদ উন্নয়নেই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। আমাদের এই দেশকে এগিয়ে নিতে হলে বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং কারিগরি শিক্ষায় এগিয়ে যেতে হবে। আমদানি নির্ভর দেশ না হয়ে প্রযুক্তিসহ সর্বক্ষেত্রে রপ্তানিমুখী দেশে পরিণত করতে সুবিশাল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। আর এটি সৃষ্টি হতে পারে তখনই, যখন বিজ্ঞান শিক্ষায় কিংবা চর্চায় আমরা অনুরাগ সৃষ্টি করতে পারব। বিজ্ঞান শিক্ষা বা বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যমেই প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধিত হলেই গড়ে ওঠতে পারে একটি বিজ্ঞানমনস্ক জাতি।

 

 

লেখক: অধ্যক্ষ, ছমির উদ্দিন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নীলফামারী।

প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha প্রাথমিকে ১০ হাজার শিক্ষক নিয়োগ জুনের মধ্যে: প্রতিমন্ত্রী পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের - dainik shiksha পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা দাবি মাধ্যমিকের শিক্ষকদের ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার - dainik shiksha ঝরে পড়াদের ক্লাসে ফেরাতে কাজ করছে সরকার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার - dainik shiksha প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতি, ভাইবোন গ্রেফতার ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি - dainik shiksha ভিকারুননিসায় ৩৬ ছাত্রী ভর্তিতে অভিনব জালিয়াতি শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় - dainik shiksha শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন প্রায় শূন্যের কোটায় ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে - dainik shiksha ‘চার আনা’ উৎসব ভাতা: প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী সমীপে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0058619976043701