শুধু ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে অতিমাত্রায় রেডিও থেরাপি দেয়ার সময় সুস্থ কোষ রক্ষায় রেডিয়েশনের মাত্রা পরিমাপই নয়, যে কোনো পারমাণবিক এলাকার তেজস্ত্রিয়তা পরিমাপের বিশেষ ধরনের ডিজিটাল যন্ত্র উদ্ভাবন করে আন্তর্জাতিক স্বর্ণপদক পান বাংলাদেশের তরুণ পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি এবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট পাচ্ছেন।
বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপের আওতায় পিএইচডি গবেষণার বিশেষ এই কৃতিত্ব অর্জন করায় মিজানুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আগামীকাল এই সম্মাননা প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার গবেষণার নাম হচ্ছে ‘তেজস্ক্রিয়তা পরিমাপ যন্ত্র এল এস-১০০০ ডজিমেটারি সিস্টেম’।
ইতোমধ্যে ব্রিটেন, মালয়েশিয়াসহ কয়েকটি দেশে তার গবেষণায় উদ্ভাবিত ডিজিটাল যন্ত্রটি ক্যান্সার হাসপাতালে এবং রেডিয়েশন আওতাভুক্ত এলাকায় ব্যবহারের বিষয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। রেডিয়েশন সঠিক মাত্রা প্রয়োগ ও নিয়ন্ত্রণে ব্যবহারের ডিজিটাল যন্ত্রটি ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের মে মাসে মালয়েশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইনভেনশন অ্যান্ড টেকনোলজি এক্সিবিশনে (আইটেক্স) মালয়েশিয়ার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় কর্তৃক স্বর্ণপদক লাভ করেছে। পরমাণু বিজ্ঞানী মিজানুর রহমানের এই গবেষণা কাজে অতুলনীয় ভূমিকার জন্য মন্ত্রণালয়ে ডেকে অভিনন্দন জানান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।
বিজ্ঞানী মিজানুর রহমানের বাড়ি পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলায়। সাঁথিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং সাঁথিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে স্কুল শিক্ষা শেষ করে তিনি পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাস করেন। এর পর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থ বিদ্যায় প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করেন। পরে পিএইচডি করেন। বর্তমানে ৪৬ বছর বয়স্ক এই বিজ্ঞানী বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের ঢাকার পরমাণু শক্তি কেন্দ্রে স্বাস্থ্য ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা।
সূত্রমতে, বর্তমানে ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীকে যে রেডিয়েশন দেয়া হয়, তা অতিমাত্রার। রেডিও থেরাপি বা রেডিয়েশন দেয়ার সময় কিছু সুস্থ কোষ বা টিস্যু নষ্ট বা ধ্বংস হয়ে যায়। ডক্টর মিজানের গবেষণা কীভাবে রেডিয়েশনে সুস্থ কোষগুলো রক্ষা করা যায় তা নিয়ে। তার গবেষণায় রেডিয়েশনে সুস্থ কোষগুলো রশ্মির আওতায় না এসে তা কার্যকর থাকে। এ ছাড়া গবেষণালব্ধ রিয়াল টাইম রেডিয়েশন ডজিমেটারি সিস্টেম দ্বারা ক্যান্সার রোগীর রেডিও থেরপি প্রয়োগের সময় প্রয়োগকৃত তেজস্ক্রিয়তার সঠিক মাত্রা সরাসরি যাচাই করা সম্ভব। আবিষ্কৃত যন্ত্রটি অতি ক্ষুদ্রাকৃতির অপটিক্যাল ফাইবার সেন্সর ব্যবহার করে মেডিকেল লাইনার এক্সিলেটর দ্বারা প্রয়োগকৃত ডোজ সরাসরি অপারেটিং রুম থেকে পর্যবেক্ষণ করে তাৎক্ষণিকভাবে ক্যান্সার চিকিৎসার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে সক্ষম।
জানা গেছে, ডক্টর মিজানের উদ্ভাবিত আধুনিক যন্ত্রটি তার ডক্টর অব ফিলোসফির (পিএইচডি) গবেষণার একটি অংশ ছিল। গবেষণাটি বাংলাদেশ সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় প্রদত্ত বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ অব সায়েন্স অ্যান্ড আইসিটি প্রকল্পের আওতায় মালয়েশিয়ার মাল্টিমিডিয়া ইউনিভার্সিটি থেকে শেষ করেন। গবেষণায় সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন প্রফেসর হাইরুল আজাহার আবদুর রশীদ ও ব্রিটেনের প্রফেসর ডেভিড এন্ড্রু ব্রাডলি। এই গবেষণা স্পেন, চীন, গ্রিস, আয়ারল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশে উপস্থাপিত হয়েছে। ড. মিজানের স্ত্রী ডক্টর মাহফুজা বেগমও বাংলাদেশ আনবিক শক্তি কমিশনের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা। তিনি সংবাদ সাংবাদিক-কলামিস্ট হাবিবুর রহমান স্বপনের অনুজ।
এই গবেষণা কাজে নানামুখী সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন ড. মিজানুর রহমান। তার আশা এই গবেষণা ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বময়। সবাই এর দ্বারা উপকৃত হবে এটাই তার চাওয়া।