ফেসবুক কর্মীদের চাপের মুখে প্লাটফর্মে বিতর্কিত পোস্ট ও মন্তব্যসংক্রান্ত নীতিমালায় পরিবর্তন আনার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন মার্ক জাকারবার্গ। গত শুক্রবার ফেসবুকের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) বলেন, শিগগিরই ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনা হবে। খবর রয়টার্স।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিতর্কিত ফেসবুক পোস্ট মুছে না দেয়ার সিদ্ধান্ত জানিয়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন মার্ক জাকারবার্গ। শুধু তা-ই নয়; বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্য ঘিরে প্রতিদ্বন্দ্বী সোস্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম টুইটারের স্বচ্ছ অবস্থান ও টুইটার প্রধান জ্যাক ডরসির গৃহীত সিদ্ধান্তের প্রকাশ্যে প্রশংসা করেছেন ফেসবুকের বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক। কিন্তু মার্ক জাকারবার্গ তার সিদ্ধান্তে অনড় থাকায় ফেসবুক কর্মীদের মধ্যে ওয়াকআউটের ঘটনাও ঘটে।
ফেসবুকের পক্ষ থেকে ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এক পোস্টে মার্ক জাকারবার্গ বলেছিলেন, তিনি মনে করেন, মন্তব্যটি গভীরভাবে আপত্তিজনক হলেও তা সহিংসতার জন্য উসকানি দেয়ার বিরুদ্ধে কোম্পানির নীতিমালা লঙ্ঘন করেনি এবং জনগণকে জানতে হবে যে সরকার বল প্রয়োগ করার পরিকল্পনা করছে কিনা।
মার্ক জাকারবার্গ এর আগে টুইটার ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে যুদ্ধে ফেসবুককে না জড়ানোর কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ফেসবুক হোয়াইট হাউজকে তাদের নীতিমালার কথা জানিয়েছে।
ফেসবুকসহ বৈশ্বিক সার্চ জায়ান্ট গুগল ও ই-কমার্স জায়ান্ট অ্যামাজনের মতো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের এখন অনেক সামাজিক ন্যায়বিচারের ইস্যুতে সক্রিয়ভাবে অবস্থান নিতে দেখা যায়। অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানকে অভ্যন্তরীণ নীতিমালা পরিবর্তন করে সুষ্ঠু ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে চলমান বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কোনো ফেসবুক পোস্ট সরানো হবে না বলে মন্তব্য করেছিলেন মার্ক জাকারবার্গ। ফেসবুকে চলমান বিক্ষোভ নিয়ে নানা বিতর্কিত ও উসকানিমূলক পোস্ট দিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। ফেসবুকের কনটেন্ট নীতিমালা সবার জন্য সমান হওয়া উচিত। যে কারণে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকের শীর্ষ পর্যায়ের সাত জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপকের মধ্যে তিনজন প্রকাশ্যে জাকারবার্গের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। এরপর ফেসবুকের বাকি কর্মীরাও মার্ক জাকারবার্গের হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা করে ও ওয়াকআউটের ঘটনা ঘটে।
গত সপ্তাহে ফেসবুকের নিউজ ফিডের পণ্য নকশা বিভাগের পরিচালক রায়ান ফ্রেইটিস বলেন, মার্ক ভুল করেছেন। আমি তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের চেষ্টা চালাব। তিনি ৫০ জনের বেশি সমমনা কর্মীকে এ কাজে পাশে পাচ্ছেন বলে জানান। প্রয়োজনে ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ নীতিমালা পরিবর্তনের জন্য লবিং চালাবেন।
ফেসবুকের পণ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচালক জেসন টফ বলেন, আমি ফেসবুকে কাজ করি। আমাদের যেভাবে তুলে ধরা হচ্ছে, এতে আমি গর্বিত নই। বেশির ভাগ সহকর্মী একই রকম অনুভূতির কথা বলেছেন। আমরা আমাদের কণ্ঠস্বর জোরালো করব।
ফেসবুকের আরেক মুখপাত্র অ্যান্টি স্টোন বলেন, আমাদের বেশির ভাগ লোক বিশেষত আমাদের কৃষ্ণাঙ্গ সম্প্রদায় যে কষ্ট অনুভব করছে, তা আমরা স্বীকার করি। আমরা কর্মীদের নেতৃত্বের সঙ্গে একমত না হলে প্রকাশ্যে কথা বলতে উৎসাহিত করি।
মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটার গত শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি টুইটে সতর্কীকরণ লেবেল সেঁটে দিয়েছিল। ওই টুইটে ট্রাম্প বলেন, লুটতরাজ হলে গুলিও চলবে। টুইটার বলে, ট্রাম্পের ওই টুইট তাদের সহিংস নীতিমালা ভেঙেছে। নীতিমালার পরিপন্থী হওয়ায় সতর্কীকরণ লেবেল সেঁটে দেয়া হয়েছে।
সম্প্রতি আমেরিকার মিনেপোলিসে শ্বেতাঙ্গ পুলিশের নির্যাতনে জর্জ ফ্লয়েড (৪৬) নামে এক কৃষ্ণাঙ্গের মৃত্যু হয়। নিহত ব্যক্তি একজন সাবেক বাস্কেটবল খেলোয়াড় ছিলেন। জর্জ ফ্লয়েডের মৃত্যুতে বিক্ষোভে উত্তাল পুরো আমেরিকা। বর্ণবাদবিরোধী ক্ষুব্ধ মানুষের উত্তাল বিক্ষোভ চলমান রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমেরিকার অন্তত ৪০টির বেশি শহরে কারফিউ জারি করতে হয়েছে। বিক্ষোভ দমনে ন্যাশনাল গার্ড মোতায়েন করা হয়েছে।
বর্তমান পরিস্থিতিতে ফেসবুকের অনেক কর্মী টুইটারের ভূমিকার প্রশংসা করছেন। ফেসবুকের পণ্য ব্যবস্থাপক ডেভিড গিলিস বলেন, টুইটারের স্বচ্ছতা টিমের প্রতি সম্মান বিশেষ করে তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে তার জন্য।
বাক স্বাধীনতা নিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর চলমান বিতর্কের মধ্যেই গত শুক্রবার ফেসবুক প্রধান মার্ক জাকারবার্গ ট্রাম্পের সঙ্গে ফোন কলে কথা বলেছেন বলে দাবি করেন বিষয়টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি। ওই ফোন কলে ঠিক কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। তবে এ আলোচনা ফলপ্রসূ হয়েছে বলে জানিয়েছে দুই পক্ষই।