বিদায় একুশ-স্বাগত বোশেখ এবং ইনক্রিমেন্ট ও নববর্ষ ভাতা - Dainikshiksha

বিদায় একুশ-স্বাগত বোশেখ এবং ইনক্রিমেন্ট ও নববর্ষ ভাতা

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

ভাষার মাস ফেব্রুয়ারি । অধিকার প্রতিষ্ঠার মাস । আন্দোলন-সংগ্রামের শপথ নেবার মাস ।একুশ এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস । সে আমাদের চেতনার বহ্নিশিখা । অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত একটি গৌরবের দিন । সার্বজনীন অধিকার রক্ষায় প্রাণ বিসর্জন দেবার অনন্য উৎসর্গের মাইল ফলক । ‘ সবুরে মেওয়া ফলে ‘ – সে এক অন্য সান্ত্বনার বহিঃপ্রকাশ বটে । কিন্তু, নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে সান্ত্বনার এ বাণীটি রপ্ত করার  অর্থ – ‘পান না তাই খান না’ । দেশে কয়েক লক্ষ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর ও কী হয়েছে তা-ই ?

৫২’র মাতৃভাষা সংগ্রাম আমাদের যে শিক্ষা দিয়েছে, সেটি অধিকার প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ত্যাগের শিক্ষা। নিজের অধিকার ও মর্যাদা থেকে বার বার বঞ্চিত হয়ে দেশের  এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীর জন্য সে শিক্ষা গ্রহণের আজ বড় বেশী প্রয়োজন দেখা দিয়েছে । শহীদ মিনারে দাঁড়িয়ে বজ্রকন্ঠে ইনক্রিমেন্ট ও বৈশাখী ভাতার দাবী জানাবার এই তো উপযুক্ত সময় এসেছে ।

অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলের লক্ষ্যনীয় দিক-বৈশাখি ভাতা প্রবর্তন । বর্তমান সরকারের অনেক সৃজনশীল কর্মের মধ্যে এটি নিঃসন্দেহে ভিন্ন মাত্রার । এ  সৃষ্টিধর্মী কাজটি সম্পাদন করে জননেত্রি শেখ হাসিনা ইতিহাসে অনেক দুর পথ এগিয়ে গেছেন । বাবার যথার্থ অনুগামী হতে পেরেছেন । কিন্তু, কেন জানিনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রির সে আশীর্বাদটুকু এ দেশের ভাগ্যাহত এমপিও শিক্ষক- কর্মচারীর কপালে আজো জুটেনি । তারা জানেন না, কী তাদের দোষ ? তবে যারাই শিক্ষক-কর্মচারীদের  এগুলো না দেবার ষড়যন্ত্র করছে , তাদের কারণে  মধ্যম আয়ের দেশের স্বপ্ন কিংবা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (SDG)  ও সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (MDG) সবই পিছিয়ে পড়ছে ।  বর্ষবরণ তো বছরে একবারই হয় । বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও কর্মচারীর হৃদয় থেকে  ‘এসো হে বৈশাখ ‘ গানটির সুরের ব্যঞ্জনায় পহেলা বোশেখে এক রকম আলোড়িত হয়ে ওঠে প্রিয় স্বদেশ। বাঙ্গালি জাতির সার্বজনীন একমাত্র উৎসব এ বোশেখ । এর আনন্দ থেকে এমপিওভুক্ত বাঙ্গালি শিক্ষক-কর্মচারীদের বঞ্চিত করে রাখা চরম অন্যায় বটে । অনুরুপ, তাদের একান্ত প্রাপ্য ইনক্রিমেন্টটি ও আটকিয়ে দেবার কোন হেতু   খুঁজে পাওয়া যায় না । জাতীয় বেতন স্কেলের অন্তর্গত যে কেউ এ দু’টো সুবিধা প্রাপ্য হয় । কোন অজুহাতে এ থেকে তাদের বঞ্চিত করার অবকাশ নেই । এগুলো যাদের প্রাপ্য , তাদের ও নীরব ভাবে নিরাশ হয়ে বসে থাকার  মানে হয় না । একটা সময় একুশ কেবল এ দেশের মানুষকে অধিকার প্রতিষ্ঠার দীপ্ত সংগ্রামে অনুপ্রাণিত করেছে । এখন সারা দুনিয়ার অধিকার বঞ্চিত মানুষের

আস্থার বাতিঘর আমাদের একুশ।   শহীদ মিনার আজ বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের আস্থা বিশ্বাসের অনন্য ঠিকানা ।

একুশ যে গৌরবের ইতিহাসটি রচনা করেছে, সেটি না পাওয়ার যন্ত্রণা থেকে । একান্ত নিজের অধিকার হেরে যাবার আশংকা থেকে । ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার করণীয় বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয় ফেব্রুয়ারি ।

একুশের প্রতিটি মুহুর্ত মা, মাতৃভাষা আর মাতৃভুমিকে সবার ওপরে তুলে ধরে । এ তিনটি বিষয় যে কোন মানুষের যাবতীয় অধিকারের আজন্ম প্রতিনিধি । এক কথায় নির্দেশ করে মানবাধিকার । যে কোন পেশাজীবির পেশাগত অধিকার -মানুষ হিসেবে সে তার মানবাধিকার । এক জনের অধিকার অন্য জনের কর্তব্য । কিন্তু কেউ তার কর্তব্য বুঝে ও না বুঝার ভান করলে-যার অধিকার তাকেই আদায় করে নিতে হয় । অধিকার কেউ কাউকে না দিলে সেটি নিজে থেকে আদায় করার সর্বোচ্চ চেষ্ঠা লাগে । এর জন্য প্রয়োজন আত্মদান, আত্মত্যাগ ও আত্মবিসর্জন । একুশ তো তাই বলে । শহীদ মিনার ও তাই শিখিয়ে দেয় । শহীদ মিনারের প্রতিটি ইট বালুর গাঁথুনিতে কেবলি সে এক কথার প্রতিধ্বনি ।

এমপিওভুক্ত শিক্ষকগণ কেবল মানুষ নন , মানুষ গড়ার কারিগর ও । তাদের যে কোন অধিকার মানবাধিকারের চেয়ে ও বেশী কিছু । তাদের সব অধিকার অগ্রাধিকারে পুরণ করে দেয়া রাষ্ট্রের যেমন দায়, তেমনি সে অধিকারটি যাদের -তাদের ও সেটি আদায়ে তৎপর হওয়া প্রয়োজন ।

একুশের পথ ধরে সম্প্রতি এগিয়ে গেলে কেবল এমপিও শিক্ষক-কর্মচারীদের অন্তর্দৃষ্টিতে চোখে পড়ে সদ্য সবচে’ বড় দু’টি অবহেলার ক্ষত চিহ্ন ।  একটি ইনক্রিমেন্ট আর অন্যটি বোশেখি ভাতা । একুশের পথে হেঁটে হেঁটে সে ক্ষত চিহ্ন দুর করার প্রয়াস চালিয়ে যাবার শিক্ষা মেলে । একুশের অনুপ্রেরণায় এগিয়ে গিয়ে কেউ কোনদিন হেরে যায়নি । সে কথাটি কারো জানা না থাকলে ও শিক্ষকদের ভাল জানা থাকার কথা ।

এবারের ফেব্রুয়ারি এই তো আর ক’দিন বাকি । ফাগুন পেরিয়ে চৈত্র । এর পর বোশেখ । বোশেখের আগেই নববর্ষ ভাতা ও ইনক্রিমেন্টের প্রিয় সংবাদটি যাতে পাঁচ লক্ষ এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারী জানতে পারেন সে প্রত্যাশায় একুশকে শুভ বিদায় আর বোশেখকে স্বাগত । এ  মুহুর্তে দেশের সবচে’ বেশী মানুষের এক সঙ্গে এটিই সবচে’ বড়  প্রত্যাশা ।

[ মুজম্মিল আলী: অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ, কানাইঘাট, সিলেট ও দৈনিকশিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।]
এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0080859661102295