বিদেশি শিক্ষার্থী পাচ্ছে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় - দৈনিকশিক্ষা

বিদেশি শিক্ষার্থী পাচ্ছে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়ার্ল্ড র‌্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলেও নানা কারণে বিদেশি শিক্ষার্থী পাচ্ছে না দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। নেই বিদেশি শিক্ষার্থী টানতে প্রচার। বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সারা বিশ্বে তুলে ধরতে বিষয়ভিত্তিক তথ্যসহ নেই হালনাগাদ ওয়েবসাইট। বিশ্বের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা নিজস্ব ওয়েবসাইটে ঘটা করে প্রকাশ করলেও বাংলাদেশে নেই এ চর্চা। বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শামীম আহমেদ ও জয়শ্রী ভাদুড়ী।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিদেশি মেধাবী শিক্ষার্থী টানতে নেই নিজস্ব বৃত্তি কার্যক্রম। ভর্তির ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, অনেক বিভাগে শুধু বাংলায় পাঠদান, ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সেশনজটের কারণেও সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আগ্রহ হারাচ্ছে বিদেশিরা। ফলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়লেও কাক্সিক্ষত হারে বাড়ছে না সরকারিতে। উল্টো অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ২০১৮ সালের বার্ষিক প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ না করলেও শীর্ষ সারির কয়েকটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর বেহাল চিত্র পাওয়া গেছে। বিগত বছরের তুলনায় ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে বিদেশি শিক্ষার্থী নামমাত্র বাড়লেও শূন্যের কোঠায় চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্যমতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে একজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হলেও পরের তিন শিক্ষাবর্ষে কাউকে পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে চারজন বিদেশি শিক্ষার্থী ভাষা কোর্সে ভর্তি হলেও ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে কাউকে পাওয়া যায়নি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে ১৭ জন ও পরের বছর ১৮ জন ভর্তি হন। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আগের বছরের চেয়ে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে দ্বিগুণ বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন বলে জানান প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক ছাত্রবিষয়ক দফতরের ডেপুটি রেজিস্ট্রার শিউলি আফসার। তিনি বলেন, এ শিক্ষাবর্ষে কমনওয়েলথ বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীসহ ৮০ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। আগের বর্ষে ভর্তি হন ৩৫ জন। পুরনো মিলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০০। তবে বিদেশি শিক্ষার্থীর বেশির ভাগ ডেন্টাল ও মেডিকেলে পড়তে আগ্রহী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বিভিন্ন ডেন্টাল ও মেডিকেলে প্রায় ৫ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী পড়ছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিদেশি শিক্ষার্থী টানতে যেভাবে প্রচারের ব্যবস্থা করেছে, নিজেদের ওয়েবসাইট ডেভেলপ করেছে, আমরা সেভাবে করতে পারিনি। তাদের কারিকুলাম ইংরেজিতে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগে এখনো বাংলায় পাঠদান করা হয়। শিক্ষকদের ইংরেজি দক্ষতা নিয়েও সংশয় আছে। আমাদের শিক্ষা ও শিক্ষকের মানোন্নয়ন দরকার। এতে শুধু বিদেশি নয়, আমাদের দেশের শিক্ষার্থীরাও উপকৃত হবে।’

ইউজিসির সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত কয়েক বছর ধরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়লেও এক বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে সরকারিগুলো। ২০১৭ সালে ৯৫টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৩২টিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ১ হাজার ৯৭৭ জন। ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯২৭, ২০১৫ সালে ছিল ১ হাজার ৫৪৮। প্রতি বছরই বেড়েছে। অন্যদিকে ২০১৫ সালে ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ১৮টিতে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ৫৯৩ জন, যা ১০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরের বছর তা কমে দাঁড়ায় ৩৫৫ জনে। ২০১৭ সালে আবার বেড়ে হয় ৪৬১ জন। সারা দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট বিদেশি শিক্ষার্থী এখন পর্যন্ত ৬০০ পার হয়নি। অথচ চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েই (ইউএসটিসি) ২০১৭ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ৬১৮ জন।

ঢাকার বনানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২১। উচ্চতর ডিগ্রিধারী মেধাবী শিক্ষক, মনোরম বৃহৎ ক্যাম্পাস, সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও বিদেশি শিক্ষার্থী টানতে পারছে না পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। কিউএস বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিং-২০১৯-এর ৪ নম্বরে থাকা যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা গেছে ১৪০টি দেশের শিক্ষার্থী সেখানে লেখাপড়া করছেন। ২৩ হাজার ৯৭৫ শিক্ষার্থীর মধ্যে আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী ৬ হাজার ৪১৯ জন (২৬.৭৭%)। বাংলাদেশি ২৯ জন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের শিক্ষার্থী আছেন প্রায় ৪ হাজার। ৬৪ ভাগ গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যের বাইরে থেকে আসা। অন্যদিকে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৩৭ হাজার ১৮ শিক্ষার্থীর মধ্যে বিদেশি শিক্ষার্থী আছেন সাকল্যে ২০০ জন (দশমিক ৫৪%)। কিউএস র‌্যাংকিংয়ে ঢাবির অবস্থান যৌথভাবে ৮০১তম। অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরও করুণ। অক্সফোর্ড বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করলেও বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্ষেত্রে তেমনটা দেখা যায়নি।

সাবেক ইউজিসি চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘বিদেশি শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করে। তাদের আগ্রহী করতে গবেষণা ও শিক্ষার মান উন্নয়নের পাশাপাশি তা প্রচারের ব্যবস্থা করতে হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সে ক্ষেত্রে পিছিয়ে যাচ্ছে। এজন্য শিক্ষক নিয়োগে মেধার মূল্যায়ন জরুরি। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিবাচক কর্মকা- তুলে ধরতে হবে। তাহলে বিদেশি শিক্ষার্থী আসবে। র‌্যাংকেও উন্নতি হবে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী বাড়ছে তাদের সহজ ভর্তি প্রক্রিয়ার কারণে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে নির্দিষ্ট স্কোর পূরণ করতে হয়। ভালো শিক্ষার্থী আনতে এটা দরকার আছে।’ বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ গবেষক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ‘একসময় মালয়েশিয়া, ইরান থেকে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসত। এখন শুধু মেডিকেলে পড়ার জন্য নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ থেকে শিক্ষার্থী আসে। আমাদের দেশে যে শিক্ষা দেওয়া হয় তা বিশ্বমানের নয়। পাঠদানে কোনো সৃজনশীলতা নেই, আছে শুধু মুখস্থ বিদ্যা আর কোচিংয়ের রমরমা ব্যবসা। দেশের লাইব্রেরি ব্যবস্থাপনা নড়বড়ে, গবেষণায় বরাদ্দ নামমাত্র। অথচ উপজেলা চেয়ারম্যানদের গাড়ি কেনায় দেওয়া হয় বিশাল বরাদ্দ! আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে গর্ব করি অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এত ভুল বানান এবং অসম্পূর্ণ তথ্য দেওয়া যা হাস্যকর। এ অবস্থায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়ার আগ্রহ বোধ করবে কেন? শিক্ষার মান উন্নত না করলে বিদেশি শিক্ষার্থী তো আসবেই না, নিজের দেশের শিক্ষার্থীরাও সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে না।’

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0069079399108887