নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার আমাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ঝুঁঁকিপূর্ণ ভবনের পলেস্তারা খসিয়া আহত হইয়াছে অষ্টম শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী। ঘটনাটি ঘটিয়াছে গত সোমবার দুপুরে। অল্পের জন্য বড় ধরনের বিপদ হইতে এই দুই শিক্ষার্থী রক্ষা পাইলেও ইহা অনস্বীকার্য যে, সারা দেশে শত শত শিক্ষার্থীকে অনুরূপ উদ্বেগ-আতঙ্ক ও ঝুঁকির মধ্যে বিদ্যালয়ে ক্লাস করিতে হইতেছে। কোথাও সংস্কারের অভাবে ভবন জরাজীর্ণ হইয়া পড়িয়াছে, কিন্তু সেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলিতেছে পাঠদান। কোথাও-বা সম্পূর্ণ ভবনটিই ব্যবহারের অনুপযোগী হইয়া পড়িয়াছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তাহা পরিত্যক্তও ঘোষণা করিয়াছেন। কিন্তু বিকল্প কোনো ব্যবস্থা গৃহীত না হওয়ায় পরিত্যক্ত ভবনেই চলিতেছে শিক্ষা কার্যক্রম। ভবন নির্মাণে অনিয়ম ও নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হইয়া পড়িয়াছে সদ্যনির্মিত কিছু কিছু ভবনও। ভূমিকম্প কিংবা সিডর-আইলার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হইয়াছে—এমন বিদ্যালয় ভবনের সংখ্যাও একেবারে কম নহে। কিন্তু মুশকিল হইল, যাহাদের এই ব্যাপারে সর্বাগ্রে উদ্যোগী হওয়া দরকার—সেই জনপ্রতিনিধিরা অনেক ক্ষেত্রে এইদিকে নজর দেন না বা দেওয়াটা জরুরি বলিয়া মনে করেন না। ফলে বত্সরের পর বত্সর ধরিয়া চরম ঝুঁকি ও উত্কণ্ঠার মধ্যে বিদ্যালয়ে পাঠ গ্রহণ করিতে হয় কোমলমতি শিক্ষার্থীদের—যাহা দুঃখজনক শুধু নহে, অগ্রহণযোগ্যও বটে।
নড়াইলের আমাদা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চিত্রও ভিন্ন নহে। একতলা ভবনটি ঝুঁঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে প্রায় পাঁচ বত্সর যাবত্। বৃষ্টি হইলে ছাদ দিয়া পানি পড়ে। প্রায়শ ভাঙিয়া পড়ে ছাদের পলেস্তারা। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, দীর্ঘদিন সংস্কার না করার কারণেই ১৯৯৫ সালের দিকে নির্মিত ভবনটি ব্যবহার অনুপযোগী হইয়া পড়িয়াছে। বৃহস্পতিবারের সংবাদপত্রে বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার যে খবরটি প্রকাশিত হইয়াছে, তাহা আরও হতাশাব্যঞ্জক। সেখানে খোলা আকাশের নীচে পাঠদান চলিতেছে ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের। আর চরম ঝুঁকির মধ্যে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো হইতেছে—এমন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যাও অর্ধশতাধিক। বলা বাহুল্য, ইহা কোনো বিচ্ছিন্ন চিত্র নহে। দেশের প্রায় প্রতিটি উপজেলায় এই ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যালয়ের অস্তিত্ব রহিয়াছে এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের তাহা অজানা থাকিবার কথা নহে। সেইখানে ইউনিয়ন পরিষদ আছে, উপজেলা পরিষদ আছে, আছেন একজন সংসদ সদস্যও। এত এত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির নজর এড়াইয়া উপজেলা পর্যায়ে বত্সরের পর বত্সর ধরিয়া এতগুলি বিদ্যালয় ভবন জরাজীর্ণ কিংবা সংস্কারবিহীন থাকে কীভাবে—তাহা আমাদের বোধগম্য নহে।
প্রশ্ন হইল, সমাজ ও অর্থনীতির প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশ যখন দৃপ্ত পায়ে আগাইয়া চলিয়াছে, বাস্তবায়িত হইতেছে পদ্মা সেতুর মতো বেশকিছু মেগা প্রকল্প—তখন বিদ্যালয়গুলির এই জরাজীর্ণ দশা বাস্তবিকই অত্যন্ত বেমানান। সর্বোপরি, শিক্ষার প্রতি সরকারের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক মহলের সুদৃঢ় অঙ্গীকারের বিষয়টিও সুবিদিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের শীর্ষ অবস্থান মূলত সরকারের শিক্ষাবান্ধব নীতিরই প্রতিফলন। ফলে বিদ্যালয়গুলির এই বেহাল দশার জন্য অর্থাভাব কিংবা সরকারের সদিচ্ছার অভাবকে কোনোভাবেই দায়ী করা যাইবে না। সন্দেহাতীতভাবে এই দায়িত্ব স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপরই বর্তায়।
সৌজন্যে: ইত্তেফাক