নড়বড়ে চৌচালা টিনের ঘর, ঢুলি বাঁশের বেড়া, ভাঙা দরজা-জানালা, চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চি। এ যেন ডিজিটাল যুগের বটতলার পাঠশালা। বেমানান শিক্ষার পরিবেশ, বান্ধবহীন দাগনভূঞার হামিদুল হক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকরা পাঠদান করছেন শিক্ষা প্রসারের মহান ব্রত নিয়ে আর শিক্ষার্থীরা নড়বড় ঘরে পাঠ নিচ্ছেন ভবিষ্যতে আলোকিত মানুষ হওয়ার আশায়।
বিদ্যালয়ের ভবন হবে, শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাবে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশে শিক্ষার, শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের আলোকিত মানুষ করার পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এ আশায় বুক বেঁধে বিনা বেতনে দীর্ঘ ২০ বছর শিক্ষকতা করছেন। এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের বাদামতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের হামিদুল হক প্রাথমিক বিদ্যালয়। হাল ছেড়ে দিয়েছেন দীর্ঘ ২০ বছর পাঠদানে ব্রতি শিক্ষকরা। বিদ্যালয়ে কর্মরত শিক্ষকরা বেতন পান না দীর্ঘ ২০ বছর। জাতীয়করণের আশায় পাঠদান চালালেও আদৌ হবে কিনা তা নিয়ে হতাশ শিক্ষক ও অভিভাবকরা। জীবনযাত্রার ঊর্ধ্বগতিতে বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
জানা যায়, দাগনভূঞা উপজেলার ইয়াকুবপুর ইউনিয়নের বাদামতলী আশ্রয়ণ প্রকল্পে হামিদুল হক প্রাথমিক বিদ্যালয়টি এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ১৯৯৮ সালের জানুয়ারি মাসে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর চারজনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়। তারা পাঠদান কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন দীর্ঘ ২০ বছর ধরে। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে ১২০ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার পর থেকে টিনশেডের স্কুল ভবনটি অর্থাভাবে আর সংস্কার করা হয়নি। ঘরটি ভাঙাচোরা। ফলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পাঠদান কার্যক্রম চালানো কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এছাড়া বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রের চরম সংকট। চেয়ার-টেবিল-বেঞ্চগুলো নড়বড়ে। শিক্ষার্থীদের জন্য নেই সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের ব্যবস্থা। এমনকি নেই বিদ্যুৎ সংযোগও। অধিকাংশ শিক্ষার্থী আশ্রয়ণ প্রকল্পের হতদরিদ্র পরিবারের হলেও সরকারি উপবৃত্তি থেকে বঞ্চিত। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পপি আক্তার জানায়, ‘বৃষ্টি হলে পানি পড়ে বইপত্র ভিজে যায়। জোরে বাতাস শুরু হলে স্যারেরা আমাদের ছুটি দিয়ে দেন।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা আবুল বশর বলেন, ‘পোলাপানরে স্কুলে পাঠিয়ে আমরা চিন্তায় থাকি।’ তিনি জানান, ‘আশপাশে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় আমার ছেলেমেয়েরা এ বিদ্যালয়ে পড়ে। শিক্ষকরা ভালো পড়ান। কিন্তু বিদ্যালয়ের ভাঙাচোরা ঘর এবং টিউবওয়েল ও পায়খানা নেই।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা জান্নাতুল মোকাম জানান, ২০ বছর ধরে সম্পূর্ণ বিনা বেতনে এ বিদ্যালয়ে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান করে আসছি। বিদ্যালয়ের নানাবিধ সমস্যার মাঝেও পাঠদান অব্যাহত রেখছি। জাতীয়করণের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইমাম উদ্দিন বলেন, সরকারি নিয়মনীতি অনুসরণ করে এ বিদ্যালয়টি পরিচালিত হয়ে আসছে। বিদ্যালয়ের আশপাশে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান না থাকায় এটি জাতীয়করণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।