২০১৮ সালে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যের বই নিয়ে নানামুখী জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ কারণে যথাসময়ে সব বই পাওয়া নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তাও। পাঠ্যবই তদারকির দায়িত্বে থাকা জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, এক শ্রেণির প্রেস মালিকদের সিন্ডিকেট ও অসাধুতার কারণে পাঠ্যবই নিয়ে এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের মত।
আগামী শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য ৩৫ কোটি ১৩ লাখ ২৬ হাজার ২০৭টি বই বিতরণের কথা রয়েছে। বই ছাপা এবং মাঠ পর্যায়ে বিতরণের ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় এবার অনেক পিছিয়ে রয়েছে। যদিও এনসিটিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, মাধ্যমিকের বই ২০ শতাংশ মাঠ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। প্রাথমিকের বইও যথাসময়ে পৌঁছে যাবে। ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে শতভাগ বই পৌঁছে যাবে বলে তিনি জানান।
তবে এনসিটিবির চেয়ারম্যানের বক্তব্য ও বাস্তবচিত্র ভিন্ন। গত বছর সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে প্রাথমিক স্তরের প্রায় আড়াই কোটি মাঠ পর্যায়ের পৌঁছে। কিন্তু এবার এখন পর্যন্ত কাজই শুরু করেনি প্রেস মালিকরা। নবম ও ১০ শ্রেণির ১২টি পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য করা বইগুলোর কার্যাদেশ প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয়নি। এছাড়া প্রেস থেকে চাহিদা অনুযায়ী কাগজ না পাওয়ায় মাধ্যমিকের বই ছাপার কাজও বিলম্ব হচ্ছে বলে প্রেস মালিকরা জানিয়েছেন। নতুন প্রযুক্তিতে বই বাঁধাই নিয়েও সংকট তৈরি হয়েছে। যথাসময়ে কভারের কাগজ না পাওয়ায় ছাপার কাজ শেষ হলেও বই বিতরণ করা যায়নি।
সূত্র জানিয়েছে, চলতি বছর দেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির মাধ্যমে নবম ও দশম শ্রেণির ১২টি পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করে সুখপাঠ্য, আকর্ষণীয় ও সহজবোধ্য করা হয়। এই বইয়ের টেন্ডার দেওয়া হলেও কোন প্রতিষ্ঠান বই ছাপার কাজ পাবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি এনসিটিবি। ফলে যথাসময়ে এসব বইনিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। তবে এনসিটিবি থেকে প্রেস মালিকদের জানানো হয়েছে দ্রুতই কার্যাদেশ দেয়া হবে।
প্রেস মালিকরা জানিয়েছে, প্রাথমিকের বই কার্যাদেশ আগে পেলেও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গাফলতির কারণে বই ছাপার কাজ শুরু করা যায়নি। কারণ হিসেবে তারা বলেন, বই ছাপার পূর্বে কাগজের মান দেখার নিয়ম রয়েছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের (ডিপিই) নিয়োগ করা একটি মান যাচাই প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর মান যাচাইয়ের ওই প্রতিষ্ঠান নিয়োগে বিলম্ব করে। এভাবে ডিপিই এক মাস সময় নষ্ট করেছে। এ কারণে যথাসময়ে বই ছাপা যাচ্ছে না। তবে চলতি সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু হয়ে যেতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে।
এছাড়া মাধ্যমিকের কাগজ নিয়ে সংকটের কথা জানান কয়েকজন প্রেস মালিক। তারা বলেন, আমাদের চাহিদা অনুযায়ী কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। একদিন কাগজ পেলে পরের দিন কাগজ পাওয়া যাচ্ছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রেস মালিক এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, আমি সাড়ে ৩ কোটি টাকা কাগজ কেনার জন্য একটি কাগজ মিলে অর্ডার দিয়েছি। এখন পর্যন্ত মাত্র ১ কোটি টাকার কাগজ পেয়েছি। মিলগুলোর উত্পাদন ক্ষমতা কম থাকায় এই সমস্যা হয়েছে বলে তিনি জানান।
সূত্র জানিয়েছে, কিছু প্রতিষ্ঠান প্রতিবছরই নিম্নমানের বই ছাপে। কালো তালিকাভুক্ত হয়। আবার তারা পরবর্তীতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই ছাপার কাজও পায়। এনসিটিবির সাথে অনৈতিক লেনদের কারণে এসব সুবিধা নিয়ে থাকেন তারা। এসব প্রেস মালিক এনসিটিবিকে বইয়ের দরপত্র প্রকাশে বিলম্ব, কার্যাদেশে বিলম্ব করার ক্ষেত্রে পরামর্শ দিয়ে থাকে। এর কারণে হিসেবে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, বই ছাপার জন্য প্রেস মালিকদের কম সময় দেয়া হলে কম সময় থাকার অজুুহাতে নিম্নমানের বই ছাপলেও তা যাচাইয়ের সময় পায় না এনসিটিবি। এ কারণে নিম্নমানের বই ছাপলেও পার পেয়ে যান তারা।