বিনয়ের আড়ালে ভয়ঙ্কর রূপ - দৈনিকশিক্ষা

বিনয়ের আড়ালে ভয়ঙ্কর রূপ

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

নতুন বই দেবে স্কুলে। ছয় বছরের শিশুটি নতুন বই পাওয়ার আনন্দ বুঝতে না পারলেও বাবা-মায়ের উৎসাহের কমতি ছিল না। জীবন শুরুর নতুন বই পাওয়ার এই দিনটিকে ফ্রেমে বন্দী করে রাখতে বাবা তার মোবাইল ফোন ক্যামেরায় ছবি তুলে রাখেন  মেয়ের। নিজেদের সঙ্গেও ছবি তোলেন নানাভাবে। বাবা ভাবেন, মেয়েটি একদিন বড় হবে। মানুষের মতো মানুষ হবে। তখন ছবিটি তাকে দেখিয়ে বলব, মা দেখ, তুই আজ কত বড় হয়েছিস। মানুষের মতো মানুষ হয়েছিস। আজকের এ সময়ের শুরুর দিনের ছবি তোর এটা। প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির পর নতুন বই আনতে স্কুলে যাওয়ার আগে তোর ছবিটা তুলে রেখেছিলাম। ছবিটা  দেখে মেয়ে আমার চমকে যাবে। খুশি হবে। এমন সব ভাবতে ভাবতে আনমনে হয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পাশ  থেকে স্ত্রীর কথায় তার ভাবনায় ছেদ পড়ে। কী ভাবছ! স্কুলে যাবে মেয়ে। নানা কথাবার্তার পর মা তার শিশুকে রেডি করে। বাবা বাইরে চলে যান। স্কুল তাদের বাসার পাশেই। শনিবার (১২ অক্টোবর) বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন মির্জা মেহেদী তমাল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, মা তার সন্তানকে নিয়ে বাসা থেকে বের হওয়ার আগেই স্কুলের হেডমাস্টার রফিকুল ইসলাম তাদের বাসার সামনে হাজির। স্যার খুব বিনয়ী স্বভাবের। স্কুলের পাশেই বাড়ি হওয়ার সুবাদে পারিবারিক সখ্যও ছিল।  হেডমাস্টার এসেছেন শুনে শিশুটির মা বাইরে আসেন  দেখা করতে। পেছনে তার শিশু সন্তান।

নতুন বই দেয়ার কথা বলে শিশুটিকে কোলে তুলে  নেন হেডমাস্টার। নিয়ে যান স্কুলে। মা ভাবেন, কত ভালো হেডমাস্টার। স্নেহভরে তার সন্তানকে কোলে করে নিয়ে গেলেন। মা ভাবেন, তিনি একটু পরই যাবেন স্কুলে। কিছুক্ষণ পরই হেডমাস্টারের কক্ষ থেকে শিশুটির আর্তচিৎকার। পাশের মাঠে খেলছিল কয়েকজন। তারাও শুনতে পেল। প্রথমে খুব একটা আমল দেয়নি। পরে কৌতূহলী কেউ একজন লক্ষ্য করে অফিস কক্ষের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ। এরই মধ্যে  দেরি হওয়ার কারণে অফিসের সামনে চলে আসেন শিশুটির মা। এবার মায়ের কানেও ভেসে আসে শিশুটির  গোঙানির শব্দ। নিশ্চিত তার সন্তানের সঙ্গে ‘খারাপ কিছু হচ্ছে’ এমনটা ভেবে দরজায় ধাক্কাতে থাকেন তিনি। মিনিট কয়েক পর দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন সেই  হেডমাস্টার। প্রচ- রাগী চোখে হেডমাস্টার বলেন, ‘কী হয়েছে? এত দরজা ধাক্কানোর কী আছে? এত বদমাইশ  মেয়ে! কোনো কথা শোনে না! যান নিয়ে যান’। অফিসের ভিতর ভয়ার্ত চোখে গুটিশুটি মেরে বসেছিল শিশুটি। মায়ের কোলে আসতেই প্রচণ্ড শব্দে কাঁদতে শুরু করে। শিশুটিকে নিয়ে বাসায় ফেরেন মা। এই সুযোগে স্কুলের তালা বন্ধ করে সটকে পড়েন  হেডমাস্টার। পরে বাসায় এসে শিশুটির শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঁচড়ের চিহ্ন দেখতে পান মা। অবোধ শিশুটি কিছু বলতে না পারলেও মায়ের বুঝতে বাকি থাকে না কী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল তার মেয়ে। হাসপাতালে পাঠানো হয় মেয়েটিকে। নিষ্পাপ শিশুটি জানেই না কী হতে যাচ্ছিল বা কী হয়েছে তার সঙ্গে। হঠাৎ থমকে যাওয়া চঞ্চল শিশুটি সেই ঘটনার আকস্মিকতায় সবার দিকে তাকায় ভয়ার্ত চোখে। জীবনের শুরুতেই ভয়ঙ্কর বিকৃত লালসার শিকার হয়ে তাকে হাসপাতালের বেডে শুয়ে থাকতে হয়।

ঘটনাটি খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার উত্তরগঞ্জপাড়ার একটি স্কুলের। কিছুদিন আগের। এ ঘটনায় মেয়েটির মা বাদী হয়ে খাগড়াছড়ি সদর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের করেন। রাতেই অভিযান চালিয়ে ছয় বছর বয়সী ওই শিশুকে ধর্ষণ  চেষ্টার মামলায় অভিযুক্ত লম্পট শিক্ষককে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাবা-মায়ের ভাষ্য মতে, তাদের শিশু সন্তানকে ভীষণ ‘স্নেহ’ করতেন ওই শিক্ষক। দুঃস্বপ্নেও  কোনোদিন ভাবেননি এমন বিনয়ী স্বভাবের  হেডমাস্টারের ভিতরে লুকিয়ে আছে এমন ভয়ানক নরপশু।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, সন্তানের নিরাপত্তা বাবা-মাকে দিতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের উদাসীনতা, মানুষের ওপর অহেতুক বিশ্বাস সন্তানদের ওপর বিপদ বয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে শিশু সন্তানদের কোনোভাবেই অন্যের কাছে রাখা বা তুলে দেয়াটা মানেই হলো ভয়ঙ্কর বিপদ ডেকে নিয়ে আসা। সে কারণে সবাইকে সচেতন হতে হবে।

এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ - dainik shiksha এমপিও কোড পেলো আরো ১৪ স্কুল-কলেজ নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী - dainik shiksha নারীদের আইসিটিতে দক্ষ হতে হবে: শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু - dainik shiksha হিটস্ট্রোকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র তূর্যের মৃত্যু পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ - dainik shiksha পরীক্ষার নাম এসএসসিই থাকবে, ওয়েটেজ ৫০ শতাংশ ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী - dainik shiksha ফরেনসিক অডিটে ফাঁসছেন দশ হাজার জাল সনদধারী কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ - dainik shiksha প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি - dainik shiksha সাংবাদিকদের ঘুষ বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও, ইরাব কোনো বিবৃতি দেয়নি জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন - dainik shiksha জড়িত মনে হলে চেয়ারম্যানও গ্রেফতার: ডিবির হারুন সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0073180198669434