দেশের বাজারে অস্থিরতা কাটাতে বিদেশ থেকে কার্গো বিমানে করে প্রথম পেঁয়াজ আনা হয়েছে। পাকিস্তানের করাচি থেকে ৮২ টন পেঁয়াজ নিয়ে কার্গো বিমানটি সন্ধ্যা ৭টা ১৫ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের পরিচালক এএইচএম তৌহিদ-উল আহসান এ তথ্য জানান।
এদিকে পেঁয়াজের দাম কচ্ছপগতিতে কমছে। কার্গো বিমানে পেঁয়াজ আমদানির খবর ও বাজারে নতুন পেঁয়াজ আসতে শুরু করায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে পণ্যটির দাম কমতে শুরু করেছে। তবে ট্রাক ধর্মঘট চলায় পেঁয়াজের দাম আবারও বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মাশুল জনস্বার্থে মওকুফের ঘোষণা দিয়েছে।
ঢাকা কাস্টম হাউসের সহকারী কমিশনার সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আজারবাইজানভিত্তিক সিল্কওয়েজের উড়োজাহাজে পেঁয়াজের চালান এনেছে সাদ ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি কোম্পানি।
ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ার পর সেপ্টেম্বরের শেষদিক থেকে দেশে পেঁয়াজের দাম হু-হু করে বাড়তে থাকে। প্রতি কেজি পেঁয়াজের দর ৩০-৪০ টাকা থেকে ২৬০ টাকায় উঠে যায়। এ পরিস্থিতিতে সরকার মিসর, তুরস্কসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। জাহাজে আনতে দেরি হওয়ায় উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আনার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ঢাকার বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজের দাম পাইকারি বাজারে তুলনামূলক দ্রুত কমলেও খুচরা বাজারে দাম কমছে ধীরগতিতে। বুধবার পেঁয়াজের পাইকারি বাজার শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১৩০-১৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এখানে দাম কেজিপ্রতি ২৩০-২৪০ টাকায় উঠেছিল।
এদিন খুচরা বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বাজারভেদে ১৮০-২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহ আগে এ পেঁয়াজ ২৫০-২৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। শ্যামবাজারের পাইকারি বিক্রেতা মো. খোরশেদ বলেন, মঙ্গলবার রাত থেকে ভোর পর্যন্ত আমদানি করা অনেক পেঁয়াজ এলেও দেশের মুড়িকাটা পেঁয়াজ আসেনি। বাজারে নতুন আসা মুড়িকাটা পেঁয়াজ পাইকারিতে প্রতি কেজি ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ঢাকার খুচরা বাজারে এ পেঁয়াজ পাওয়া না গেলেও পাতা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এটি ৮০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর রামপুরা কাঁচাবাজারের বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, নতুন পাতা পেঁয়াজ এসেছে তবে পরিমাণে খুবই কম। এ পেঁয়াজ ১১০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মিয়ানমার, মিসর, তুরস্ক ও চীনের পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে ৯০-১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর খুচরা বাজারে ১১০-১৭০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের বাসিন্দা আইয়ুব হোসেন বলেন, পত্রপত্রিকায় ও টিভিতে বলা হচ্ছে পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছে। কিন্তু মহল্লার দোকানে এর তেমন প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। মহল্লার দোকানে ১৬০-২০০ টাকা কেজিতে এখনও পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, পাড়া-মহল্লার দোকানেও সরকারের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।
এদিকে ট্রাক ধর্মঘটে পেঁয়াজের দাম আবারও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিক্রেতারা। তারা বলেন, মুড়িকাটা পেঁয়াজ বাজারে আসায় দাম কমতে শুরু করেছে। তবে পরিবহন ধর্মঘটে পেঁয়াজবাহী ট্রাক বাজারে আসতে না পারলে দাম আবারও বাড়তে পারে। সাধারণত রাতে বিভিন্ন জেলা থেকে বিভিন্ন পণ্য ট্রাকে করে ঢাকার পাইকারি বাজারগুলোয় আসে। রাতের মধ্যে ধর্মঘট না কাটলে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন শাকসবজি ও পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে এবং দাম বাড়তে পারে।
আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানি মাশুলমুক্ত : আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মাশুল জনস্বার্থে মওকুফ করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড। বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ এ তথ্য জানান। সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী, আকাশপথে যে কোনো পচনশীল দ্রব্য পরিবহনের ক্ষেত্রে প্রতি কেজিতে ১৮ টাকা মাশুল দিতে হয়।
বিবৃতিতে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মুহিবুল হকের উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম স্থিতিশীল রাখতে যতদিন প্রয়োজন, ততদিন এভাবে পেঁয়াজ আমদানি করা যাবে। আকাশপথে পেঁয়াজ আমদানিতে ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।