বিরুদ্ধ মত সহ্য না করার সংস্কৃতি - দৈনিকশিক্ষা

বিরুদ্ধ মত সহ্য না করার সংস্কৃতি

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদের হত্যাকাণ্ডকে ঘিরে দেশে আলোচনার ঝড় বইছে। আপাত নিরীহ, তুচ্ছ অথবা কোনো কারণ ছাড়াই জীবনহানির নজির আজকাল খুব একটা বিরল নয়। মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

নিবন্ধে আরও জানা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে, বিশ্ববিদ্যালয় হল বিশ্বজনীন মানস গঠনের সৃজনভূমি। অথচ বিদ্যার সে তীর্থপীঠ যখন হিংসা, লোভ ও ক্ষমতা চর্চার চারণভূমিতে পরিণত হয়- ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে সম্ভাবনাময় এ দেশটির জন্য তখন তা নিঃসন্দেহে একটি অশনিসংকেত।

সবচেয়ে বড় কথা- শিক্ষার্থীর মনোজগতে বিকৃতি, হিংস্রতা ও তীব্র জাগতিক লালসা যখন শিক্ষাঙ্গনের মতো বিশুদ্ধ পরিসরে নির্বিঘ্ন পরিচর্যার সুযোগ পায়, তখন সভ্যতার পরিবর্তনশীল অনুশীলনে নতুন সংকট যুক্ত হয়ে যায়।

আবরার হত্যার তাৎক্ষণিক কারণ ও হত্যার ধরন যথেষ্ট উদ্বেগজনক এবং অপরাধ সংঘটনের প্রক্রিয়া কিছুতেই নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হতে পারে না যদি কিনা এমন অসুস্থ ও বিকৃত চর্চা সুরক্ষিত ছাত্রাবাসে নিরাপদে চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ দীর্ঘদিন বলবৎ না থাকে।

নিঃসন্দেহে এটি একটি দায়মুক্তি পাওয়া বর্বর লিগ্যাসি; কখনও আদর্শ, কখনও মত-পথ, কখনও ধর্ম, কখনও বা রাষ্ট্রকে বাঁচানোর অজুহাতে এ নিষ্ঠুরতা চলে আসছে, যাকে সমাজ কিংবা রাষ্ট্র প্রশ্রয় দিয়েছে কি না বোঝা যায় না। তবে অস্বীকারের সুযোগ নেই, আবরার হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্তদের দ্রুততার সঙ্গে আইনের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে এবং যথাযথ বিচারিক প্রক্রিয়া জারি আছে; যা অতীতে খুব কমই দেখা গেছে।

তবে জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের বিভিন্ন উত্তাল পর্বে উচ্চনৈতিক চেতনায় ঋদ্ধ এ দেশের যে ছাত্র-জনতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্রের অভ্যুদয় সম্ভব করে তুলেছিল, তারা কীভাবে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মূল্যবোধের অবক্ষয়, বিচ্যুতি আর বিভ্রান্তির কুয়াশায় অধঃপতিত হল তা নিশ্চয়ই আলোচনার দাবি রাখে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই আমরা দেখেছি- দেশের উচ্চশিক্ষাঙ্গন কীভাবে চরম প্রতিক্রিয়াশীল, আগ্রাসী পাকিস্তানি বাহিনীর লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।

শুধু বিরুদ্ধ মত নয়, গণতান্ত্রিক দাবি উত্থাপনের সুযোগ চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার জন্য নিরীহ বুদ্ধিজীবী, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সাংবাদিক, শিল্পী-সাহিত্যিকদের হত্যা করার যে পৈশাচিক নজির পাকিস্তানি হায়েনারা স্থাপন করেছিল তা মানবসভ্যতার ইতিহাসে বিরল।

ড. জি সি দেব, ড. মুনীর চৌধুরী, ড. মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী, ড. আনোয়ার পাশা, ড. রশীদুল হাসান, ড. ফজলে রাব্বী, ড. আলীম, ড. জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, ড. মনিরুজ্জামান অথবা জহির রায়হান বা সিরাজুদ্দিন হোসেনের মতো দেশের আরও অনেক শ্রেষ্ঠ সন্তান যারা রাজনীতির সঙ্গে কোনোভাবেই যুক্ত নন, পার্থিব জীবনে নিরাসক্ত, জ্ঞানের সাধনায় মগ্ন, নিবেদিত, নির্লোভ তারকাতুল্য এমন বরেণ্যব্যক্তিরা টর্চার সেলে অমানুষিক নির্যাতনের পর ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যার শিকার হয়েছিল। ‘টর্চার সেল’- শব্দবন্ধটির সঙ্গে হয়তো তখন থেকেই এ দেশের মানুষের পরিচয় হয়েছিল।

আবরার হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সময় বা বিগত কয়েক বছর একটা বক্তব্য ক্রমাগত প্রতিষ্ঠা পেয়েছে- তা হল বিরুদ্ধ মত, ভিন্ন কণ্ঠকে জায়গা দেয়া হচ্ছে না।

ভুললে চলবে না- শুধু বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নয়, পনেরো বা একুশ আগস্ট নয়, কেবল মতপ্রকাশের ভিন্নতাকে রুখে দিতে মৌলবাদী পৈশাচিকতায় প্রাণ হারিয়েছে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা।

ড. হুমায়ন আজাদ, ড. ইউনুস বা ড. রেজাউল করিম সিদ্দিকীর মতো বিদগ্ধ শিক্ষকসহ প্রায় দেড় শতাধিক ছাত্র প্রাণ হারিয়েছে, অসংখ্য ছাত্রের অঙ্গহানি ঘটেছে, পাশবিকভাবে রগ কাটার মতো ঘটনা ঘটেছে বর্বর উল্লাসে।

রাষ্ট্র ও সমাজ এ নারকীয়তার শুধু সাক্ষী হয়নি- এ বর্বরতাকে সহ্য করেছে। ভিন্নমত, গণতন্ত্র, ভিন্ন আদর্শকে সহ্য করার কথা রাজনৈতিক বা সামাজিক মঞ্চে অথবা টিভি টকশোতে সুশীলসমাজ বা মানবাধিকার কর্মীদের কণ্ঠে বারবার শোনা গেছে।

অন্যদিকে একের পর এক জনাকীর্ণ পরিসরে ব্লগার হত্যা, ভিন্ন ধর্ম বা মতের ধর্মযাজক, পুরোহিত, সুফি, বাউল অথবা বিদেশি নাগরিকের হত্যাকাণ্ড দেখেছে দেশ। অনেক কবি, সাহিত্যিক বা বিদগ্ধ মুক্তমনা লেখককে দেশ ছাড়তে হয়েছে মুক্তিযুদ্ধস্নাত এ আধুনিক বাংলাদেশে।

এসব নির্বাসনের মধ্য দিয়ে আমাদের সমাজের যে চেহারাটা উন্মুক্ত হয় তা কখনোই মুক্তবুদ্ধি, স্বাধীনসত্তা বা মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। কখনও রাষ্ট্র, কখনও সমাজকে অতি সক্রিয় মনে হয়েছে, কখনও নির্লিপ্ত, উদাসীন। সমাজের অভ্যন্তরে কেন এ পরিবর্তন, কেন এ অসহিষ্ণুতা বা মনোজাগতিক বৈপরীত্য- সমাজতাত্ত্বিকরা হয়তো একসময় এ মনোভঙ্গি বিশ্লেষণ করবেন বা এমন অসহনশীলতা পরিপার্শ্বকে কলুষিত করেছে কিনা তা-ও এক সময় নির্ধারিত হয়ে যাবে।

সমকালীন সমাজের আরও একটি বৈশিষ্ট্য হল স্বার্থগত দ্বন্দ্ব ও আচরণগত স্ববিরোধ। বিশ্বের নানা প্রান্তে, বিশেষ করে, আমাদের পরিপার্শ্বে, জীবনাচরণে নিয়তই আমরা দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ লক্ষ করি, কখনও তা ঘটে রাজনীতি, কখনও আদর্শ, কখনও বা ধর্মের ছদ্মাবরণে।

বাম কিংবা ডান, ধর্মাশ্রয়ী কিংবা ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির সব ধারাতেই কর্তৃত্ব বা দখলদারির মনোভাব মনোজগতে আধিপত্য বিস্তার করে চলে।

বিরুদ্ধস্বর সহ্য করার আপ্তবাক্য রাজনৈতিক মঞ্চে শোভা পেলেও আমরা দেখেছি- দিল্লির জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় বা কলকাতার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বামপন্থীরা ভিন্ন মতাবলম্বীদের বলপূর্বক ঢুকতে দেয়নি।

ভিন্ন কণ্ঠকে থামিয়ে দেয়া, ভিন্ন মতাবলম্বীকে পুড়িয়ে মারা- এসব কাণ্ডে বাম ও ধর্মীয় মৌলবাদীদের মধ্যে এক ধরনের আচরণগত সাযুজ্য দেখা যায়। বিভিন্ন আদর্শের নামে এরা ঘৃণা ছড়িয়েছে, মানুষের চিরায়ত মূল্যবোধ ধ্বংস করেছে, নিজেদের মতকে জোর করে অন্যদের ওপর চাপিয়েছে।

আবার এরাই অন্যদের বলেছে- ওরা ফ্যাসিস্ট। শ্রেণিশত্রু খতম করার নামে একইভাবে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে যেভাবে এক বিভীষিকাময়, আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল বামপন্থী নামধারী দুর্বৃত্ত-চাঁদাবাজরা- তা-ও একদিন হয়তো গবেষণার উপজীব্য হবে।

আগে মনে করা হতো, শুধু মাদ্রাসাভিত্তিক শিক্ষার্থীরা আর্থ-সামাজিক পশ্চাৎপদতার কারণে মনস্তাত্ত্বিকভাবে বদলে যাচ্ছে। কিন্তু দেখা গেছে, উচ্চবিত্তের, ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষিত এবং সর্বোপরি উচ্চশিক্ষিত প্রতিষ্ঠিত ছেলেমেয়েরা মৌলবাদ, জঙ্গিবাদ, চরমপন্থায় অনুপ্রাণিত হয়েছে।

শুধু তাই নয়, এরা চূড়ান্ত নৃশংসতা, নির্মমতার আশ্রয় নিয়ে একদম নিরীহ, ধর্মযাজক, বিদেশি বা ভিন্নমতের সাধারণ বা অসাধারণ মেধাবীদের ঠাণ্ডামাথায় হত্যা করেছে প্রকাশ্যে, নজিরবিহীন বর্বরতায়। দেশ তার সাক্ষী হয়েছে। বুয়েটও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মনোবিজ্ঞানী, সমাজবিজ্ঞানীরা এসব হিংস্রতা দেখে আঁতকে উঠেছে।

কেন এ হিংসা, উন্মত্ততা- উদ্দেশ্যই বা কী- উত্তর এখনও সম্পূর্ণ না মিললেও কিছু প্রতিবাদ আমরা লক্ষ করেছি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর এবং বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এ তথাকথিত সমাজতান্ত্রিক ও ঘোষিত মৌলবাদীদের উদ্দেশ্যমূলক ন্যারেটিভ কার্যত সমাজে ঘৃণা ও বিভাজনের রাজনীতিকে উসকে দিয়েছে।

ইতিহাসকে বিকৃত করে নিজের পছন্দমাফিক যে কোনো ঘটনাকে নেতিবাচকভাবে বিশ্লেষণ করে যে জনমত সংগঠনের তারা চেষ্টা করেছে তা প্রগতিশীলতা, মুক্তমত ও মুক্তচিন্তার বিরুদ্ধে।

একশ্রেণির বামপন্থীর এ আদর্শিক কপটতা বা রাজনৈতিক সুবিধাবাদ একদিকে যেমন তাদের রাজনৈতিকভাবে কোণঠাসা করেছে, অন্যদিকে জঙ্গিবাদ পরিচর্যার জন্য এদের কার্যকলাপ মৌলবাদীদের পরোক্ষভাবে জায়গা করে দিয়েছে।

আবরার হত্যাকাণ্ড এমনই মর্মান্তিক, অযৌক্তিক ও দাম্ভিক লিগ্যাসির বহমানতা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীদের আশ্রয়; সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে- প্রথমত, নিপীড়নকারীরা কোনো আগ্নেয়াস্ত্র বা মারণাস্ত্রে সজ্জিত ছিল না। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলেছে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন।

আজ যে শিক্ষার্থীরা রাজপথে মিছিল করে শাস্তির দাবি করছে বা রাজনীতি নিষিদ্ধ করার আওয়াজ তুলছে- তারা সে সময় কেন নির্বিকার, নির্লিপ্ত থাকল?

শিক্ষকদের করুণ অসহায়ত্বের কথা না হয় বাদই দিলাম। সাম্প্রতিক সময়ের সব থেকে বড় ব্যাধি নির্লিপ্ততা, আত্মকেন্দ্রিকতা। অপরের সমস্যা থেকে নিজেকে কৌশলে সরিয়ে রাখা। নিস্পৃহ সমাজের একটা মারাÍক নিষ্ক্রিয় ঔদাসীন্যের চেহারা প্রকটভাবে ভেসে উঠছে, মহানগর থেকে মফস্বল- প্রায় একই চিত্র। সামর্থ্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে আমরা কি সামাজিকতাবোধ বা বিবেকের শক্তিকেও হারিয়ে ফেলছি? দায় শুধু পুলিশ বা সরকারের?

দেখা যায় সাক্ষীও পাওয়া যায় না প্রয়োজনে। মানববন্ধন, ব্যানার আর ফেসবুক- সমাজের এ-ও এক অবক্ষয়, দেউলিয়াত্ব- যা দু’দশক আগেও আমরা দেখিনি।

দ্বিতীয়ত, আবরার হত্যার বেনিফিশিয়ারি কে বা কারা অথবা এ অমানবিক চর্চার প্রয়োজন কেন দেখা দিল- তা বোধগম্য নয়।

বাংলাদেশে অনেক ঘটনাপ্রবাহকে বেশ রহস্যজনক মনে হয়। শেখ হাসিনার সরকার দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সব মানদণ্ডে অতুলনীয় উচ্চতায় আসীন। ভিন্নমতকে জায়গা দেয়ার মতো ঔদার্য, বিচক্ষণতা তার আছে বা বাস্তব প্রেক্ষাপট- সবটাই তার নিরঙ্কুশ অনুকূলে।

তার কোনো নীতিগত সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে একজন খুদে পড়–য়ার সঙ্গে বিবাদে লিপ্ত হওয়ার জন্য একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুটিকয়েক তরুণকে কেন দায়িত্ব নিতে হল- তা কোনোভাবেই যুক্তির নাগালে আসে না।

ছাত্রলীগ তো কোনো চরমপন্থী সংগঠনও নয়। অন্যদিকে, ফেসবুক পোস্টের কারণে সহিংসতার ইতিহাস এ দেশে খুবই পরিচিত, ভুয়া পোস্টের মাধ্যমে সংখ্যালঘু মন্দির বা জানমালের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা এ দেশে খুব বিরল নয়। কিন্তু যে ছাত্রলীগ নামধারী কর্মীরা রাজনৈতিক অনুশীলনে উগ্র মৌলবাদী কিংবা তথাকথিত বামপন্থীদের অনুসরণ করে, বৈষয়িক লোভের মোহে নিয়ত মত্ত থাকে, এমন নেতাকর্মীরা অন্তত বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হতে পারে না, আর নেতৃত্বের এমন আকাল অন্তত এখন ক্ষমতাসীন দলে থাকার কথা নয়।

কিন্তু বর্তমান রাজনীতির ট্রেন্ড এমনই নৈরাজ্যকর দলীয় কাঠামো তৈরি করেছে যা হয়তো একটা সর্বাত্মক শুদ্ধি অভিযানের যথার্থতাকেই প্রতিপন্ন করছে প্রতি মুহূর্তে। আশা করি, চলমান শুদ্ধি অভিযান দলকে, দেশকে এ আত্মঘাতী স্খলন থেকে মুক্তির দিশা দেখাবে।

কোনো রকম রাজনৈতিক প্রভাব বা বিত্ত-পেশির আনুকূল্যে মোহগ্রস্ত না হয়ে এ পর্যন্ত সংঘটিত সব অপরাধের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার সম্পন্ন করে দুর্বৃত্তদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

ছাত্র রাজনীতিকে নিষিদ্ধ করার দাবি কেন করা হচ্ছে- বুঝি না। একদিকে গণতন্ত্র, নাগরিকের মৌলিক অধিকার, মুক্তসমাজের আকুতি চারপাশ ছাপিয়ে যাচ্ছে। তাহলে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ কেন?

‘রাজনীতি’ শব্দটি হয়তো পথ হারিয়েছে। অর্থ বদলে গেছে। রাজনীতি মানেই তো সেবা, ত্যাগ, বিশুদ্ধতা, প্রজ্ঞা, দেশপ্রেম; স্বার্থপর না হওয়ার সংকল্প, লোভকে জয় করার দৃঢ়তা, অন্যায়কে প্রতিরোধ করার ঋজুতা- সেখানে রাজনীতিবিমুখতা কেন? রাজনীতিকে ভয় পাবে দুর্বৃত্ত, অশুভ শক্তি।

আমরা কি সমষ্টিগতভাবে তাহলে পেছনের দিকে হাঁটছি? আর যদি আমরা ছাত্র রাজনীতিকে কলুষমুক্ত করতে না পারি, তবে মূলধারার রাজনীতির কী হবে? মূল রাজনীতি যদি আদর্শনির্ভর, নিয়মতান্ত্রিক, মূল্যবোধ নির্ণায়ক হয়- তাহলে ভয় কিসের? ছাত্ররাই দেশের ভবিষ্যৎ, আগামী দিনের নেতৃত্ব, পথপ্রদর্শক।

এরাই গোটা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে একটি ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার গৌরবের অংশীদার হয়েছে। বহু ঘটনার ঐতিহাসিক সাক্ষী। সাম্প্রতিককালেও তাদের মেধা ও সক্ষমতার প্রমাণ পেয়েছে গোটা জাতি। প্রয়োজন হল- ভবিষ্যতের উপযোগী করে তাদের মানসিকভাবে গড়ে তোলা, জ্ঞান-বিজ্ঞানে, সংস্কৃতি-ঐতিহ্যে বিকশিত করা, দেশপ্রেমিক নাগরিক হতে উদ্বুদ্ধ করা।

দেশের অযুত সম্ভাবনার ডালিকে এদের সামনে মেলে ধরা। কোনো রাজনৈতিক দলের পদলোভী, ক্ষমতালোভী না হয়ে ত্যাগের মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হওয়া।

আর মৌলবাদকে রুখে দেয়ার জন্য শুদ্ধ আদর্শিক ও সাংস্কৃতিক অনুশীলনের পরিসর নিশ্চিত করা যাতে করে মেধাবী সন্তানরা কোনো বিকৃত দর্শনে প্রভাবিত হয়ে আত্মহননের পথে পা না বাড়ায়। অবশ্যই রাজনীতি থাকবে। আদর্শ থাকবে।

অন্যায় ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। বিশ্বের সবখানেই আছে। ভয়ের কারণ নেই। দরকার হল- আইনের শাসন। দোষী ব্যক্তির নিশ্চিত শাস্তি। সবাই মিলে রাষ্ট্র, সমাজ, রাজনীতি এবং সর্বোপরি নিজেকে শুদ্ধ করার চেষ্টায় আমরা যদি নিষ্ঠার পরিচয় দেই তাতেই দেশ ও সমাজ লাভবান হবে।

আর একটি কথা ভুললে চলবে না, সাতচল্লিশে দ্বিজাতি তত্ত্বের দার্শনিক অসারত্ব প্রমাণ করেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের সৃষ্টি।

পাকিস্তান রাষ্ট্রের কোনো লিগ্যাসি আমরা গ্রহণ করিনি বলেই একটি অপার সম্ভাবনার আত্মপ্রকাশ ঘটেছে বিশ্ব মানচিত্রে। নতুন প্রজন্ম যেন কোনো পরিকল্পিত ও বিকৃত ইতিহাসের অপব্যাখ্যায় বিভ্রান্ত হয়ে বিদ্বেষ, বিভাজন ও ঘৃণার সংস্কৃতিতে জারিত না হয় সে লক্ষ্যে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সব নাগরিককে সজাগ ও ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

অমিত রায় চৌধুরী : সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0087668895721436