বিশেষ বিবেচনায় নিয়োগ মূল্যায়ন হচ্ছে না দক্ষতার - দৈনিকশিক্ষা

বিশেষ বিবেচনায় নিয়োগ মূল্যায়ন হচ্ছে না দক্ষতার

জামাল উদ্দীন |

সরকারি দপ্তর, রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংক কিংবা স্বায়ত্বশাসিত সংস্থায় নিয়োগের ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাচ্ছে না দক্ষতা ও কারিগরি জ্ঞান। বিশেষ বিশেষ পদ কিংবা খাতগুলোতে সংশ্লিষ্ট কাজে অভিজ্ঞদের কিংবা একই বিষয়ে পড়াশোনা বিবেচনায় নেওয়ার বিষয়টি ক্রমেই কমে যাচ্ছে।

ফলে, সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা কর্মসম্পাদন নির্বিঘ্ন ও সুষ্ঠু হচ্ছে না। এমনকি কোন কোন বিশেষায়িত মন্ত্রণালয়ের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটছে। প্রকৌশল কিংবা ব্যবহারিক জ্ঞান প্রযোজ্য, এমন পদে সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিতদের বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে গুরুত্ব পাচ্ছে তার লবিং কিংবা যোগাযোগ। এই পরিস্থিতি কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নয়ন কর্মকান্ড বাধাগ্রস্ত করছে। খোদ সচিব পদমর্যাদার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও বিষয়টি অবহেলিত হওয়ায় সঠিক তদারকি হচ্ছে না। যা গুণগত মান নষ্ট করছে বলেও মনে করছেন ওয়াকিবহালমহল।

তাদের মতে, খাতভিত্তিক মন্ত্রণালয় কিংবা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কাজও ভিন্ন। যেমন, প্রকৌশল খাতে যদি অপ্রকৌশলী দেওয়া হয়, তাহলেই সমস্যা দেখা দেয়। বাণিজ্যিক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বাণিজ্যিক ব্যাকগ্রাউন্ডের লোকদের নিয়োগ দিলে তিনি যেভাবে কাজ এগিয়ে নিতে পারবেন, অন্যদের ক্ষেত্রে তা সহজ নাও হতে পারে। যে কারণে প্রায়শই দাবি উঠে যে, নিয়োগের ক্ষেত্রে ঐ খাতে বিশেষজ্ঞদের গুরুত্ব দেওয়া উচিত। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তা হচ্ছে না। এমনকি কোথাও কোথাও নিয়োগের পর হাতে-কলমে কাজ শেখা কিংবা দেশে—বিদেশে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্তরা। এরপর তাকে বদলি করে অন্য দপ্তরে দেওয়া হচ্ছে।

শুধু মন্ত্রণালয় কিংবা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানেই নয়, বরং স্পর্শকাতর ‘ব্যাংক’ খাতের অবস্থাও একই। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ব্যাংকিং খাতে হলমার্ক, বিসমিল্লাহ, বেসিক ব্যাংক, জনতা ব্যাংক কেলেংকারির যেসব ঘটনা ঘটছে তা পরিচালনা দক্ষতার অভাবেই ঘটেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো। রাষ্ট্রীয় মালিকানার ব্যাংকগুলোতে চেয়ারম্যান—পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও দক্ষতার বিচারের চেয়ে অন্য বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। এতে অভিজ্ঞ ব্যাংকারদের সংখ্যা খুবই নগন্য। ফলে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি, খেলাপি ঋণের ভারে জর্জরিত। ঋণ অনিয়মের কারণে সবচেয়ে আলোচিত জনতা ব্যাংকের ১০জন পরিচালককের মধ্যে ৭ জনই ব্যাংক খাতের বাইরের। এ ব্যাংকের চেয়ারম্যান লুনা শামসুদ্দোহা আইটি খাতের। পরিচালক সেলিমা আহমেদ এমপি ব্যবসায়ী।

দুইজন অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব ও দুইজন অতিরিক্ত সচিব রয়েছেন। একজন রয়েছেন যুগ্ম সচিব (পিআরএল)। সোনালী ব্যাংকেও সাতজন পরিচালকের মধ্যে রয়েছেন অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফজলুল হক। এ ব্যাংকের চেয়ারম্যান আশরাফুল মকবুল সাবেক সচিব। একইভাবে রাষ্ট্রীয় অন্যান্য ব্যাংকের রয়েছেন সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব পর্যায়ের ব্যক্তিরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, ব্যাংকিং খাতে অব্যাংকারদের নিয়োগ দেওয়া অযৌক্তিক। তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রায়ত্ব ব্যাংক স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার ছয়জন ম্যানেজিং ডিরেক্টর আছেন। এ ব্যাংকের শাখা সংখ্যা ২৪ হাজার। যেসব ব্যাংকার সুনামের সঙ্গে অবসর নিয়েছেন তাদের ঐ ব্যাংকের ব্যাংকিং বোর্ড সদস্য হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ওখানে কোন সেক্রেটারিকে সরকার নিয়োগ দেন না। যার কারণে ওই ব্যাংকটি ভাল চলছে। বাংলাদেশেই একমাত্র ব্যতিক্রম দেখা যায়, এখানে সচিবরা বোর্ডে আসেন। এতে সমস্যা হয়। যারা ব্যাংক থেকে সুনামের সঙ্গে চাকরি শেষ করেছেন তাদের বোর্ড সদস্য হিসাবে নিয়োগ দেওয়া যায়।

শুধু ব্যাংক কেন, ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা কেন্দ্রীয় ব্যাংকেও একই অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্ষদ সদস্য সাতজন। এরমধ্যে তিনজনই সচিব। তারা হলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান ও জ্যেষ্ঠ সচিব মোশাররফ হোসেন ভূইঁয়া, অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব আবদুর রউফ তালুকদার।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিষ্ঠানগুলো কোন প্রকৃতির তা বিবেচনায় রেখে নিয়োগ প্রদান করলে কাজের গতি যেমন বাড়ে, তেমনি মনিটরিংয়ের কাজটিও সহজ হয়। তাতে সার্বিক উন্নয়ন কর্মকান্ডের গতি বৃদ্ধিসহ টেকসই অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন সহজতর ও দ্রুত সম্ভব হবে।

 

সৌজন্যে: ইত্তেফাক

উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সব অ্যাকাউন্ট নগদে রূপান্তরের নির্দেশ কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা - dainik shiksha সপ্তম শ্রেণিতে শরীফার গল্প থাকছে, বিতর্কের কিছু পায়নি বিশেষজ্ঞরা জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন - dainik shiksha জাতীয়করণ আন্দোলনের শিক্ষক নেতা শেখ কাওছার আলীর বরখাস্ত অনুমোদন ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো - dainik shiksha ১৭তম ৩৫-প্লাস শিক্ষক নিবন্ধিতদের বিষয়ে চেম্বার আদালত যা করলো দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা - dainik shiksha তিন স্তরে সনদ বিক্রি করতেন শামসুজ্জামান, দুদকের দুই কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ - dainik shiksha স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণ ও ‘বিশ্ব বই দিবস’ শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে - dainik shiksha শিক্ষার মান পতনে ডক্টরেট লেখা বন্ধ জার্মান পাসপোর্টে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0039081573486328