বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও তরুণ শিক্ষকের অবস্থান - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ব শিক্ষক দিবস ও তরুণ শিক্ষকের অবস্থান

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

আজ ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষকতা পেশায় সৃজনশীল তরুণদের অবস্থান তৈরির লক্ষ্যে ইউনেস্কো এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করেছে : ‘তরুণ শিক্ষকরাই পেশার ভবিষ্যৎ’। সে সঙ্গে তথ্যবহুল একটি ধারণাপত্র প্রকাশ করেছে। ইতোমধ্যে দিবসটি উপলক্ষে ইউনেস্কো মহাপরিচালক মিস অদ্রে আজুলে, আইএলও মহাপরিচালক গাই রাইডার, ইউনিসেফের কার্যনির্বাহী পরিচালক হেনেরিটা এইচ ফোর, ইউএনডিপির প্রশাসনিক কর্মকর্তা এচিম স্টেইনার ও এডুকেশন ইন্টারন্যাশনালের সাধারণ সম্পাদক ডেভিড এডওয়ার্ডসের যৌথ বাণী প্রকাশিত হয়েছে। ধারণাপত্র ও বাণী দুটোরই প্রধান অংশজুড়ে আছে বিশ্বব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থার অব্যাহত ক্ষয়রোধে নতুন শক্তি ও উদ্যম কাজে লাগানোর প্রসঙ্গ। স্বাভাবিকভাবে এসেছে পুরোনো, গতানুগতিক ধারার পরিবর্তে শিক্ষা ব্যবস্থার ধমনীতে নতুন রক্ত সংযোজনের, প্রচলিত সীমাবদ্ধতা থেকে উত্তরণে শিক্ষায় তরুণের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা প্রসঙ্গ। নতুন প্রজন্মের শিক্ষক ছাড়া কারও পক্ষে এ দুরূহ কাজটি সম্পন্ন করা যে সম্ভব নয় তা মেনে নিয়ে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো উল্লেখ করেছে, আগামী দশকে বিপুল সংখ্যক শিক্ষকের অবসরে যাওয়ার কথা, কিন্তু তাদের স্থান পূরণে তরুণদের আগ্রহ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কিন্তু ২০৩০ সালের মধ্যে ৬৯ মিলিয়নের বেশি শিক্ষক নিয়োগ দেয়া না হলে এসডিজি লক্ষ্য পূরণ অসম্ভব হয়ে পড়বে। সে জন্য ৪৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন নতুন শিক্ষক নিয়োগের বিকল্প নেই। কিন্তু নতুন শিক্ষক যে শিক্ষকতায় আসতে আগ্রহী হবে তার নিশ্চয়তা কোথায়? এসডিজির প্রত্যাশা পূরণ ও লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের শিক্ষকতায় যোগ দানের আগ্রহ বৃদ্ধি ও অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করা না গেলে বিরাজিত শিক্ষক স্বল্পতা ও শিক্ষায় সৃজনশীল, বৈচিত্র্যপূর্ণ দক্ষতার সংকট মোচনের আর কোন বিকল্প পন্থা নেই। এ বাস্তবতা উপলব্ধি করেই নির্ধারিত হয়েছে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের এ বারের প্রতিপাদ্য। রোববার (৬ অক্টোবর) সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধে আরও বলা হয়-

শিক্ষকতায় অনীহা

দেশ বিদেশের তথ্য পরিসংখ্যানে এখন এটা স্পষ্ট যে, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরের কথা বাদ দিলে পেশা হিসেবে শিক্ষকতা তরুণ, এমন কি মধ্য বয়সীদের খুব একটা আকর্ষণ করে না। অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক উন্নত দেশেই তরুণদের কাছে পেশা হিসেবে শিক্ষকতা তাদের অগ্রাধিকার তালিকায় নেই। এমন কি তরুণদের একটা উল্লেখযোগ্য অংশই এ পেশা ছেড়ে দেয়ার পক্ষে। যুক্তরাজ্যে বেশি কাজ ও কম বেতনের কারণে যাদের বয়স ৩৫ বছরের কম তাদের প্রায় অর্ধেক সংখ্যক শিক্ষক আগামী ৫ বছরের মধ্যে শিক্ষকতা ছেড়ে দিতে পারেন বলে ন্যাশনাল ইউনিয়ন অব টিচার্সের এক জরিপে জানা যায়। আমেরিকায় ৪১ শতাংশ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষকেরা পেশায় যোগদানের ৫ বছরের মধ্যে পেশা ত্যাগ করে বলে ইউনেস্কো বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০১৯ উপলক্ষে প্রকাশিত ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। সরকার থেকে বেতন ভাতা প্রাপ্তির জন্য যোগ্যতার সব শর্ত পূরণ সত্ত্বেও এমপিও না পেয়ে বেসরকারি মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক ও স্নাতক পর্যায়ে পাঠদানকারী শত শত শিক্ষক যেমন বাংলাদেশে অনিচ্ছা সত্ত্বেও পেশা ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন, একইভাবে একই যোগ্যতার অধিকারী অন্যান্য পেশায় কর্মরতদের থেকে বেতন ভাতা ও সামাজিক মর্যাদা কম হওয়ার কারণেও শিক্ষকতা থেকে দূরে চলে গেছেন।

বাংলাদেশের শিক্ষকদের অবস্থা

কেমন আছেন বাংলাদেশের শিক্ষকরা? প্রাথমিক বাদ দিলে পরবর্তী শিক্ষা স্তরগুলোর ৯০ শতাংশের বেশি বেসরকারি হলেও সেখানে পাঠরত শিক্ষার্থী ও কর্মরত শিক্ষক উভই বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার। সরকার আসে। কিন্তু অবস্থার খুব একটা হেরফের হয় না। তারপরও এ কথা স্বীকার করতে হবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যেটুকু ইতিবাচক অর্জন তার সিংহভাগই শেখ হাসিনার হাত দিয়ে হয়েছে। তবে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিধ্বস্ত বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু স্বাধীন দেশের উপযোগী শিক্ষানীতি (কুদরাত-এ খুদা) রিপোর্ট দিয়েই ক্ষান্ত থাকেননি। তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা-নির্দেশনাও দিয়ে যান। কিন্তু তাকে হত্যার পর ক্ষমতাসীন সরকারগুলো শিক্ষায় মৌলিক কোনো পরিবর্তনে হাত দেয়নি। কিছু তাৎক্ষণিক বা অ্যাডহক সিদ্ধান্ত নিয়ে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেই তাদের দেখা গেছে। সেজন্য প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারিকরণের পুরোটাই হয়েছে বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার হাত দিয়ে। শিক্ষা কারিকুলামে পরিবর্তন, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার, মূল্যায়ন ব্যবস্থায় পরিবর্তন, সরকারি কর্মচারীদের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকদের মূল বেতন বৃদ্ধি তার অন্যতম। তারপরও কথা থাকে। যেহেতু আজ দিনটি শিক্ষকদের জন্য নির্ধারিত একটি আন্তর্জাতিক দিবস সে জন্য কিছু কথা বলা দরকার। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে বড় পদোন্নতি আসছে। সহকারী অধ্যাপক, সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক- এ তিন পদেই বড় পদোন্নতির কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে এই ক্যাডারের সর্বোচ্চ স্তর অধ্যাপক পদে প্রায় পৌনে ৭০০ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে পদোন্নতির কার্যক্রম শুরু করেছে শিক্ষা প্রশাসন। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক ও সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতির কার্যক্রম শুরু হবে। কিন্তু বেসরকারি কলেজ শিক্ষকদের পদোন্নতির হাল আগে যে তিমিরে ছিল এখন ও সে তিমিরেই। সহকারী অধ্যাপকের পদই সেখানে শেষ কথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষা উপদেষ্টার নেতৃত্বে গঠিত এমপিও নীতিমালা প্রণয়ন কমিটিসহ একাধিক কমিটির সুপারিশ সত্ত্বেও রশি টানাটানির কারণে সহযোগী অধ্যাপক ও অধ্যাপক পদ সৃষ্টি হয়নি। এমন কি এমপিওভুক্ত বেসরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ উপাধ্যক্ষরা যথাক্রমে সরকারি কলেজের অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের মূল বেতন পেয়ে এলেও তাদের পর্যন্ত যথাযথ পদায়ন করা হয়নি। ১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে জমিরুদ্দিন সরকার শিক্ষামন্ত্রী থাকা কালে বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের বেতন অন্যায়ভাবে সরকারি প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে মূল বেতন নির্ধারণ করা হয়। এ বঞ্চনার এখনও অবসান হয়নি। অথচ প্রাথমিক পরবর্তী বেসকারি স্কুল কলেজের শিক্ষকরাই দেশে শিক্ষার ৯০ ভাগের বেশি দায়িত্ব পালন করে থাকেন। বেসরকারি স্কুল, ডিগ্রি কলেজ, অনার্স, মাস্টার্স কলেজ, মাদরাসা, কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যারা কর্মরত তাদের মধ্যে অনেকে হয় প্রতিষ্ঠান থেকে না হয় সরকার থেকে অথবা দুটো উৎস থেকেই বেতন ভাতা, পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত। কর্ম সন্তুষ্টি সে খানে অপ্রাসঙ্গিক। এদিকে সম্প্রতি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের সহকারী শিক্ষকরা বেতন-বৈষম্যের অবসান দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় নীতিগতভাবে তাদের দাবি মেনে নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠালে তা অনুমোদন না দিয়ে নাকচ করা হয়েছে। অবশ্য প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব আশ্বস্ত করেছেন যে, বিষয়টি নিয়ে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক করবেন। এ দিকে এবতেদায়ি মাদরাসা, বেসরকারি স্কুলের প্রাথমিক শ্রেণীগুলোর সঙ্গে সরকারি প্রাথমিক স্কুলের আর্থিক ও ব্যবস্থাপনাগত ব্যবধান দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ দৃষ্টিগোচর নয়। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণা কার্যক্রমের জন্য পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় স্থায়ী শিক্ষক জনবল নেই। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সুপারিশ দেয়ার বিধান আছে। সুপারিশ কার্যকরের ক্ষমতা নেই। এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ১০ লক্ষাধিক শিক্ষক বিশ্ব শিক্ষক দিবস ২০১৯ পালন করবেন। বঞ্চনা বুকে পুষে না রেখে তা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে, আত্মানুসন্ধানে ভর করে ও আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে আন্তর্জাতিক শিক্ষক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতির বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শিক্ষকতা পেশায় নবীনের আগমন নিশ্চিতে নেবেন সংগঠিত, সুচিন্তিত পদক্ষেপ। দল মতের ঊর্ধ্বে অতীতের মতো প্রত্যাশা পূরণে তারা আস্থা রাখতে চান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর।

আদর্শ শিক্ষকের সন্ধানে

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ গত বছর এশিয়াটিক সোসাইটি ‘আদর্শ শিক্ষকের সন্ধানে’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ পড়েছিলেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের কৈশোর বা ছাত্র জীবনের কথা স্মরণ করলে আমরা প্রত্যেকেই বোধহয় এমন এক বা একাধিক শিক্ষকের কথা মনে করতে পারব যারা আমাদের জীবনকে বিশেষভাবে স্পর্শ করেছিলেন। তারা আমাদের জীবন নিয়ে স্বপ্ন দেখতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন; তাদের আমরা আদর্শ মানুষ হিসেবে দেখতাম। ... সমাজে নানা পরিবর্তন সত্ত্বেও সমকালীন সমাজে শিক্ষকের একটি বিশেষ ভূমিকা বিলীন হয়ে যায়নি। শিক্ষক এখন মানুষ গড়ার কারিগর। বর্তমান প্রজন্মের শিশু, কিশোর, তরুণদের ভবিষ্যতের নাগরিক, কর্মী ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্বের জন্য গড়ে তোলার গুরু দায়িত্বে শিক্ষকের ভূমিকা প্রধান। শিক্ষকের এ ভূমিকাটি সমাজ জীবনের অন্য সব কাজের ক্ষেত্র ও পেশা থেকে ভিন্ন। এ সত্যটি আমরা উপলব্ধি করছি না। এ জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রকে বড় মূল্য দিতে হচ্ছে’। ড. মনজুরের বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে শিক্ষকদের একটি ক্ষুদ্রাংশের অবক্ষয়ের দিকটিও তুলে ধরা দরকার বলে মনে করি।

শিক্ষকের অবক্ষয়

সারা দেশে এখন আলোচনার বিষয়বস্তু ‘শিক্ষক’ নামধারী কতিপয় ব্যক্তির ক্ষমার অযোগ্য নৈতিক অবক্ষয় প্রসঙ্গ। এ কথা সত্য, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কোন সমাজবিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়। সে জন্য সমাজের অসঙ্গতি ও ক্লেদ তাকেও স্পর্শ করে। সেজন্য শিক্ষকদের পেশাগত বিভিন্ন দাবির যৌক্তিকতা মেনে নেয়ার পরও প্রশ্ন ওঠে, স্বভাবজাত অপরাধীরা শিক্ষকতায় আসে কীভাবে? আমার মতে, দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত এসব সমস্যার প্রতিকারে আশু পদক্ষেপ হিসেবে যা বিবেচ্য : ১) অনৈতিক কার্যকলাপে লিপ্ত ‘শিক্ষক’ নামধারী ব্যক্তিদের আইন অনুসারে অপসারণসহ দৃষ্টিন্তমূলক শাস্তিদানের লক্ষ্যে অবিলম্বে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ। ২) শিক্ষক নামধারীদের বিরুদ্ধে, শিক্ষা ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনার বিপক্ষে, অনুকূল শিক্ষা পরিবেশের পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি। ৩) শ্রেণীকক্ষে পাঠদানসহ শিক্ষকদের পেশাগত জবাবদিহি নিয়মিত মনিটরিংয়ের জন্য স্থায়ী কর্মপন্থা গ্রহণ ৪) শিক্ষার্থীদের নিবন্ধন কার্ড ও সনদপত্রে বাবার নামের সঙ্গে মায়ের নাম যুক্ত করার ধারাবাহিকতায় সন্তানের শিক্ষা কার্যক্রমে বাবা-মা উভয়ের পরিচর্যা ও সহায়ক ভূমিকা অধিকতর নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রচলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনা কমিটি পুনর্বিন্যাস।

এসব পদক্ষেপ সফল করতে শিক্ষকদের সমষ্টিগত প্রয়াস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

শিক্ষার মান

শিক্ষক ও সংগঠন আমাদের দেশে অতীতের ধারাবাহিকতায় বর্তমানেও সাধারণভাবে শিক্ষকদের মধ্যে, তাদের সংগঠনগুলোতে এবং শিক্ষকদের নিয়ে সরকার, নীতি প্রণেতা, অভিভাবক সবার মধ্যে প্রচলিত অবস্থানে শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষকদের অথবা তাদের সংগঠনগুলোর যে কোন ভূমিকা আছে বা থাকতে পারে তার স্বীকৃতি নেই। আবার শিক্ষার জন্যই যে শিক্ষকের প্রয়োজন, শিক্ষার প্রয়োজন মেটাতে না পারলে বা গুণগত মান নিশ্চিত করতে না পারলে শিক্ষক যে অপরিহার্য হয়ে ওঠেন না- শিক্ষকদের মধ্যে এ উপলব্ধিও বলা চলে ব্যাপকভাবে অনুপস্থিত। পেশাগত দাবি নিয়ে ধ্বনি উচ্চারণ ও দাবি আদায়ের কর্মসূচির বাইরে শিক্ষার উন্নয়নে, মান বৃদ্ধিতে শিক্ষক সংগঠনগুলোর প্রকাশ্য, ধারাবাহিক ভূমিকা কর্মসূচি গ্রহণের ইতিহাস সে জন্য কম বেশি সাম্প্রতিক। বড়জোর তিন দশকের। পাঠ্যক্রম অনুসারে শিক্ষক শ্রেণীকক্ষে যে পাঠদান করেন, শিক্ষার্থী তার কতটা অনুভবে নিতে পারল, আয়ত্ত করতে বা ধারণে সক্ষম হলো, তার মূল্যায়ন যথায়থ হচ্ছে কিনা অথবা কীভাবে হওয়া সম্ভব, তা নিয়ে শিক্ষক সংগঠনগুলোকে সম্মিলিতভাবে প্রস্তাব দিতে দেখা যায় মাত্র দুই দশক আগে। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ১৯৯৯ ও ২০০০ খ্রিষ্টাব্দে শিক্ষকদের পেশাগত ১৫ দফা দাবির সঙ্গে যুক্ত করে পরীক্ষা সংস্কারে ৭ দফা এবং পরবর্তীতে শিক্ষা জীবন সমাপনকারী শিক্ষার্থীদের কর্মসংস্থানের বিষয়টিও শিক্ষকদের দাবিনামার অন্তর্ভুক্ত করে। সে লক্ষ্যে শিক্ষা, অর্থ, পরিকল্পনা ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয় কমিটি গঠনের প্রস্তাব রাখা হয়।

১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দে আমি বাংলাদেশের শিক্ষকদের প্রতিনিধি হিসেবে ক্যানাডিয়ান শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করি। এ সময় শিক্ষক সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে আমার আগের অনেক ভাবনা ও ধারণা অনেকাংশে পরিবর্তিত হয়ে যায়। শিক্ষক সংগঠনের উদ্যোগে পেশাগত দাবি আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষকের দক্ষতা উন্নয়ন, বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতা অর্জন ও শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধিতে কিভাবে কর্মসূচি নিতে হয় সে সম্বন্ধে ধারণা লাভ করি। পরবর্তীতে আমেরিকান টিচার্স ফেডারেশনের সদস্যরা কীভাবে পাঠ্যপুস্তক রচনায় দক্ষ হয়ে ওঠে, শিক্ষার্থীদের পাঠ গ্রহণে দক্ষতা অর্জনে সহায়ক কর্মসূচি গ্রহণ করে, তার কিছুটা প্রত্যক্ষ করার অভিজ্ঞতা লাভ করি।

সংগঠন, ঐক্য ও আন্তর্জাতিক সংহতি

শিক্ষকদের যে সংগঠন করা দরকার, তাদের ঐক্য যে জরুরি, পেশাগত স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নে সংগঠিত উদ্যোগের যে বিকল্প নেই ১৯৬৬ ও ১৯৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ইউনেস্কো-আইএলও সনদ যে শিক্ষকদের রক্ষা কবচ, বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজ তা উপলব্ধি করে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবেন প্রয়াত অধ্যক্ষ একেএম শহীদুল্লাহকে যিনি আমৃত্যু ইউনেস্কো-আইএলও বিধানের কার্যকারিতার সপক্ষে এক প্রকার অভিযান চালিয়ে গেছেন। স্মরণ করবেন অকৃত্রিম শিক্ষক দরদি নেতাদের- অধ্যক্ষ কামরুজ্জামান, শেখ আমানুল্লাহ, হেনা দাস, ড. আক্তারুজ্জামান, প্রফেসর শরীফুল ইসলাম, চৌধুরী খুরশিদ আলম, অধ্যক্ষ নুরুন নবী সিদ্দিকী, অধ্যক্ষ আলী আকবর খান ডলার, উপাধ্যক্ষ আবদুর রব মিয়াকে। সত্য কথা বলতে গেলে তাদের অবর্তমানে বাংলাদেশের শিক্ষকদের সামনে এখন এক কঠিন সময়। আমি আশাবাদী বিশ্ব শিক্ষক দিবস সম্পর্কে শিক্ষক সমাজের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ, মুক্তি যুদ্ধের চেতনার সপক্ষে অবস্থান, ঐক্যবদ্ধতা এবং বিশ্ব শিক্ষক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সংহতি তাদের পথ চলায় আলো দেখাবে। শিক্ষকতায় তরুণের অধিকতর অংশ গ্রহণের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

অধ্যক্ষ কাজী ফারুক আহমেদ : শিক্ষা ও শিক্ষক আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক। জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ প্রণয়ন কমিটির সদস্য।

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0040440559387207