বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে স্বপ্নের কথা বলি - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে স্বপ্নের কথা বলি

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী |

সরকারিকরণ নিয়ে অনেক লিখেছি। কে শুনে কার কথা? ‘দৈনিক শিক্ষাডটকম’এর মতো সর্বাধিক প্রচারিত ও পঠিত শিক্ষা বিষয়ক অনলাইনে এতো লেখালেখির পরও যদি সরকারের কর্তাব্যক্তিদের একটু টনক না নড়ে, তবে কী আর করা? ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ খ্যাত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে এ বিষয়ে আন্তরিক বলে স্পষ্ট ঈঙ্গিত পাওয়া যায়, সেখানে সরকারের খেয়ে-দেয়ে সরকার প্রধানের সদিচ্ছাকে যারা অবজ্ঞা ও অবহেলা করা প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা বিরোধী কাজ। তারা বেসরকারি শিক্ষকদের কোনো কথা না শোনার জন্য মনে হয় কানে তূলা দিয়েছেন, তালা মেরে রেখেছেন। একারণে একদিন এদেরও কারো না কারো কাছে জবাবদিহি করতে হবে। হয়তো মানুষের কাছে। নয়তো সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর কাছে। 

আরও দেখুন: বিশ্ব শিক্ষক দিবস উদযাপন শুরু হলো যেভাবে (ভিডিও) 

বঙ্গবন্ধু তনয়া জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত দিয়ে একদিন বেসরকারি শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণ হবেই। যেমন তার বাবার হাত দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষকদের চাকরি সরকারিকরণ হয়েছিলো। কেন জানি দেশের আপামর বেসরকারি শিক্ষকরা অকপটে বুকের ভেতর এই বিশ্বাসটি লালন করে থাকেন। তাদের দুর্ভাগ্য এই যে, তারা বঙ্গবন্ধুকে আর ক’টা বছর পেলে আজ আর কষ্টের সাগরে সাঁতরাতে হতো না। তাদের সৌভাগ্য তারা শেখ হাসিনাকে পেয়েছেন। তাই সরকারিকরণের স্বপ্নটি আজো বেঁচে আছে। তাঁকে ঘিরে স্বপ্নের ডালাপালা হয়েছে। স্বপ্নটি এখন এক মহিরুহে পরিণত।

আজ বিশ্ব শিক্ষক দিবস। বাংলাদেশের শিক্ষকদের বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষকদের সৌভাগ্য এই যে, তাদের অন্তত একটা নিজস্ব দিন আছে। সরকারিভাবে দিবসটি পালিত না হলেও এদিন তাদের সুখ-দুঃখ নিয়ে কেউ একটু ভাবলেও ভাবতে পারে। তাদের বর্তমান ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা চাইলে শিক্ষকের জন্য শ্রদ্ধা নিবেদন করতে পারে। দিবসটি উপলক্ষে শিক্ষকদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন করতে পারে। ভিন্নভাবে একটু খোঁজ খবর নিতে পারে। ইউনেস্কো এ দিনটিকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করার স্বীকৃতি দিলেও অনেক দেশ অন্য কোনো দিনকে বিশ্ব শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারতের কথা বলা যায়। এভাবে আরও কিছু দেশ আছে। তবে বেশিরভাগ দেশ এ দিনটিকেই পালন করে থাকে।

তবু যাই হোক, অন্তত শিক্ষকদের সম্মান ও মর্যাদা দেবার জন্য অভিন্ন দিবসে হলেও বিশ্ব শিক্ষক দিবসের গুরুত্ব প্রায় সবাই মেনে নিয়েছেন। সুশীল সমাজ বিনির্মাণে শিক্ষকরাই দক্ষ কারিগর; বিশ্ববাসী অন্তত এদিনে অকপটে এ সত্যটি মেনে নয়।

বাংলাদেশে নামকাওয়াস্তে বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করা হয়। জানি না, দেশে ক’জন মানুষ এ দিবসটির কথা জানেন? ক’জন শিক্ষকই বা বলতে পারেন বিশ্ব শিক্ষক দিবসের কথা? ইদানীং দুই-চার বছর থেকে শিক্ষক সমিতিগুলোর মাধ্যমে কোনো কোনো জেলা পর্যায়ে বিশ্ব শিক্ষক দিবসে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের খবর শোনা যায়। দিবসটি আরও বিস্তৃত করতে অন্তত উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত উদযাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা যেত। সরকারি উদ্যোগে জেলা কিংবা উপজেলায় কোনোদিন বিশ্ব শিক্ষক দিবস পালন করতে দেখিনি। এদিনে সকল ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের বিশ্ব শিক্ষক দিবস সম্পর্কে জানানো যেত। 

আমাদের দেশে কতো দিবস কতোভাবে পালন করা হয়। হেন দিবস, তেন দিবস ইত্যাদি নানা দিবস পালনের জন্য কত টাকা বেহুদা খরচ হয়। কিন্তু বিশ্ব শিক্ষক দিবসে ‘কার গরু, কে দেয় ধোঁয়া’। এ দিনটি নিয়ে মাতামাতি কমই হয়ে থাকে। এদিন স্কুলের স্বাভাবিক পাঠদানের বাইরে শিক্ষার্থীদের সাথে বিশ্ব শিক্ষক দিবস নিয়ে আলোচনা করা যেতো। কোনো খ্যাতিমান শিক্ষককে তাদের সামনে সম্মাননা দেয়া যেতো। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করা যেতো। সুশীল সমাজ গঠনে শিক্ষকের ভূমিকা ও ত্যাগ তিতীক্ষা নিয়ে আলোচনা করা যেতো। শিক্ষক সমাজের মর্যাদা একেবারে তলানিতে নেমে যাবার কারণ খুঁজে বের করা যেতো।

শিক্ষকের মর্যাদা সমুন্নত রাখার জন্য বিশ্ব শিক্ষক দিবসের অবতারণা। মানসম্মত শিক্ষা ও মেধাবীদের শিক্ষকতা পেশায় টেনে আনা বিশ্ব শিক্ষক দিবসের অন্তর্নিহিত কথা। এছাড়া আর কিছু হতে পারে না।

১৯৯৪ খ্রিষ্টাব্দে ইউনেস্কো ৫ অক্টোবরকে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের মর্যাদা দেয়। এতোদিনে আমাদের দেশে বিশ্ব শিক্ষক দিবস কতটুকু মর্যাদার সাথে পালিত হয়ে আসছে? সকল শিক্ষকের মর্যাদা কতটুকু সমুন্নত রাখা গেছে? এদিনে শিক্ষকের অধিকার ও মর্যাদা আদায়ে তারা নিজেরা কতটুকু সোচ্চার হয়েছেন?

বিশ্ব শিক্ষক দিবসের প্রাক্কালে বাংলাদেশের শিক্ষকরা কেমন আছেন? এ প্রশ্নটির উত্তর নিশ্চয় সুখকর হবে না। প্রাথমিকের শিক্ষকরা বেতন বৈষম্যের শিকার। সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ। সহকারীরা প্রধান শিক্ষকের একধাপ নীচের বেতন গ্রেড চান। প্রধান শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মকর্তাদের বেতন গ্রেড চান।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সবচেয়ে উতাল-পাথাল অবস্থা। বৈষম্যের পাহাড়। কেউ সরকারি, কেউ বেসরকারি। কেউ এমপিওভুক্ত, কেউ নন এমপিও। টাইমস্কেল নেই। পদোন্নতি নেই। বদলি নেই। বিনা বেতনে বছরের পর বছর অনেক শিক্ষকতা করে আসছেন। ম্যানেজিং কমিটি আর গভর্নিং বডির দৌরাত্ম্যে কতো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাকাল অবস্থা। শিক্ষার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ দুটো স্তরে বৈষম্যের পাহাড় আর পাহাড়।

শিক্ষার্থীদের শাসন করা যাবে না। এরা এখন শিক্ষকদের উল্টো শাসায়। শাসনের অধিকার না থাকায় শিক্ষকের সোহাগ দিনে দিনে হেরে যাচ্ছে। শিক্ষার মানের অধঃগতি। কে রুখবে? শিক্ষকের ষোল আনা অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি। সামাজিক ও আর্থিক মর্যাদায় ঘাটতি। তাই সর্বাগ্রে শিক্ষকের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

সিলেবাস ও কারিকুলামের দিকে কারো খেয়াল আছে বলে মনে হয় না। সিলেবাস ও কারিকুলাম শিক্ষকের হাতিয়ার। অস্ত্র ভালো না থাকলে সুনিপুণ যোদ্ধাও যুদ্ধে পারঙ্গমতা প্রদর্শন করতে পারেন না। শিক্ষকদের হয়েছে তাই।

দেশ এখন দূর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বটে।  শিক্ষকদের ন্যায্য অধিকারগুলো মিটিয়ে দিলে সে এগিয়ে যাওয়া আরও টেকসই হবে। তা না হলে আমরা কোনো প্রশিক্ষিত জাতির মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হতে পারবো না। আর সরকারিকরণ তো এখন সময়ের শ্রেষ্ঠ দাবি। বেসরকারি শিক্ষক সমাজের একান্ত মৌলিক অধিকার। রাষ্ট্র ও সরকারের এটি গুরু দায়িত্ব বটে। তাই এবারের বিশ্ব শিক্ষক দিবসের সেরা স্লোগান হোক, ‘সরকারিকরণ শিক্ষকের অধিকার। শিক্ষা বাঁচাতে সরকারিকরণ। শিক্ষক বাঁচালে শিক্ষা বাঁচবে, বাঁচবে দেশ ও জাতি।’

অধ্যক্ষ মুজম্মিল আলী : অধ্যক্ষ, চরিপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়, কানাইঘাট, সিলেট এবং দৈনিক শিক্ষার নিজস্ব সংবাদ বিশ্লেষক।         

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0035340785980225