বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবেন কী? - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ভেবে দেখবেন কী?

নিউটন মজুমদার |

২০১৭ সালের ডিসেম্বরে নাসার দুইজন বিজ্ঞানী ‘ড. জর্জ ল্যান্ড ও বেথ জার্মান’ মানুষের সৃজনশীলতার উপর একটি তথ্য প্রকাশ করেন। তাদের গবেষণালব্ধ তথ্যটি ছিল, চার/পাঁচ বছর বয়সে মানুষের সহজাত সৃজনশীলতাসম্পন্ন প্রতিভার হার ৯৮%। ১০ বছর বয়সে সহজাত সৃজনশীলতাসম্পন্ন প্রতিভার হার ৩০%। ১৫ বছর বয়সে সহজাত সৃজনশীলতাসম্পন্ন প্রতিভার হার ১২%। প্রাপ্তবয়স্কদের (গড় বয়স ৩১ বছর) সহজাত সৃজনশীলতাসম্পন্ন প্রতিভার হার মাত্র ২%।’ এক হাজার ৬০০ জন মানুষের উপর করা দীর্ঘ এই গবেষণার ফল দেখে স্বয়ং বিজ্ঞানীদ্বয় বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যান। অতঃপর তারা এর কারণ হিসেবে আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করেন!

এবার আসা যাক মূল আলোচ্য বিষয়ে, একজন শিক্ষক যদি একজন ছাত্রের নিকট পিতৃতুল্য হন, তাহলে ছাত্রও তার নিকট অবশ্যই সন্তানতুল্য। তবে কেন এ সম্পর্ক হবে চুক্তিভিত্তিক? তবে কেন একজন শিক্ষক লেনদেনের ভিত্তিতে একজন ছাত্রের বাসায় যাবেন, আর কেনই-বা আইন করে তাকে ক্লাসে উপস্থিত থাকতে বাধ্য করবেন? এটি কি আমাদের সমগ্র শিক্ষাগুরুদের জন্য লজ্জার নয়, এটি কি আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার জন্য অভিশাপ নয়? বাংলাদেশের শিক্ষা কাঠামোতে রয়েছে শিক্ষার্থীদের মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে দেওয়ার এক সুচতুর শিক্ষা-দর্শন। তন্মধ্যে উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থায় এটেন্ডেন্স সিস্টেম এবং এই এটেন্ডেন্সের উপর ভিত্তি করে একজন শিক্ষার্থীকে তার পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ প্রদান করা অন্যতম। শুধু তা-ই নয় এই এটেন্ডেন্সের উপর বণ্টন করা থাকে নির্দিষ্ট কিছু নম্বর, ক্লাসে নিয়মিত উপস্থিত শিক্ষার্থীবৃন্দই পেয়ে থাকেন উক্ত নম্বর। 

এখানেই শেষ নয়! এই এটেন্ডেন্সের মহিমাতেই একজন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারেন তার সেমিস্টার ফাইনাল কিংবা অ্যানিউয়্যাল পরীক্ষায়। ফলে অনেক শিক্ষার্থীই এই এটেন্ডেন্সের খাতায় অকৃতকার্য হয়ে হারিয়ে ফেলে তার জীবন থেকে মহামূল্যবান এক বা একাধিক শিক্ষাবর্ষ, মাঝে মাঝে প্রিয় জীবনটাকে! যার ধারাবাহিকতায় কিছুদিন 

আগেই এই মেরুদণ্ডহীন শিক্ষাব্যবস্থার কাছে নতি স্বীকার না করে, এদেশের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক ছাত্র তার প্রিয় জীবনটাকে উত্সর্গ করে এর প্রতিবাদ জানিয়ে গেল! তারপরও জেগে উঠলাম না আমরা, ঘুমিয়েই রইলাম নিশাতুর নয়নে।

যেহেতু শিক্ষার এ উচ্চস্তরে এটেন্ডেন্স প্রক্রিয়া ক্লাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত সেহেতু এর সঙ্গে শিক্ষকবৃন্দের সম্পর্ক সুস্পষ্ট। কারণ একজন শিক্ষক যদি প্রকৃতার্থে একজন দক্ষ এবং সৃজনশীল ব্যক্তি হন, তাহলে তাকে কখনোই ক্লাসে এটেন্ডেন্স খাতা বয়ে নিয়ে আসতে হয় না! আমাদের দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো এমন অনেক শিক্ষক আছেন, যাদের ক্লাস করতে বাইরে থেকেও শিক্ষার্থীরা ক্লাসে আসেন। আবার আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন শিক্ষকেরাও আছেন, যারা শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিত রাখতে এটেন্ডেন্সের উপর নম্বর কয়েকগুণ বাড়িয়েও দেন। ঠিক যেন কোচিং সেন্টারের ফ্রি ক্লাসে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি করতে দেওয়া বিভিন্ন সুযোগের মত। ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন তাদের জানার বা শেখার আগ্রহকে বর্জন করে ক্লাসে যেতে বাধ্য হচ্ছেন, তেমনি শিক্ষকবৃন্দও হারিয়ে ফেলছেন তাদের মর্যাদার আসন।

এ এটেন্ডেন্স বিড়ম্বনা বর্তমান সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রকট আকার ধারণ করেছে আমাদের দেশের নবীনতম বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। কারণ এ প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষকবৃন্দ যেমন নবীন, তেমনি আবার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নানা অনিয়মে আসছে অনেক অদক্ষ এবং অযোগ্যতা সম্পন্ন শিক্ষক। ফলে এটেন্ডেন্স খাতারই দৌরাত্ম্য! বর্তমান আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মাত্র একটি মৌখিক পরীক্ষার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়। ফলে এ প্রক্রিয়ায় একদিকে যেমন একজন অদক্ষ পছন্দের ব্যক্তিকে প্রশ্ন করে আকাশে তোলার সুযোগ থাকছে, আবার অন্যদিকে একজন দক্ষ ও যোগ্য ব্যক্তিকে প্রসঙ্গের বাহিরে প্রশ্ন করে ভুলুণ্ঠিত করাও হচ্ছে।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর ‘শিক্ষা-সংস্কার’ প্রবন্ধে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ত্রুটি সম্পর্কে সেই ১৩১৩ বঙ্গাব্দে লিখেছিলেন-‘মানসিক জড়তা সমস্ত দেশে ব্যাপ্ত হইয়া গেল। আইরিশভাষী ছেলেরা বুদ্ধি এবং জিজ্ঞাসা লইয়া বিদ্যালয়ে প্রবেশ করিল আর বাহির হইল পঙ্গু মন এবং জ্ঞানের প্রতি বিতৃষ্ণা লইয়া।’ তাই আজ দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠগুলোতে শতভাগ জ্ঞানের পরিবেশ সৃষ্টি করতে ‘বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন’-কে দক্ষ ও যোগ্য শিক্ষক নিয়োগে আরো কঠোর নিয়ম-কানুন প্রণয়ন করতে হবে।

 লেখক :শিক্ষার্থী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, গোপালগঞ্জ

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0037250518798828