বিশ্ববিদ্যালয় পথ হারিয়েছে? - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয় পথ হারিয়েছে?

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

উন্মুক্ত চিন্তা-চেতনার উন্মেষ, মেধা বিকাশ ও বুদ্ধিভিত্তিক চর্চা প্রয়োগের উৎকৃষ্ট কেন্দ্র হলো বিশ্ববিদ্যালয়। নতুন নতুন জ্ঞান এবং ধারণা সৃষ্টি ও বিতরণ, গবেষণা ও সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের দ্বার উন্মোচন করা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃত লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। বিশ্ববিদ্যালয় একটি দেশের দিকনির্দেশক হিসেবে ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। বাংলাদেশ সৃষ্টির ইতিহাস অন্তত তাই বলে। ১৯৪৭-এ ভারত বিভক্তি, ৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ৬৬-এর ছয় দফা, ৭০-এর সাধারণ নির্বাচন, ৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রাম ও ৯০-এর দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে বাংলাদেশকে পথ দেখিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, বিশেষত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার (১০ অক্টোবর) সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।

সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে মারার দৃশ্য দেখতে হয়েছে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসগুলো উত্তাল। সর্বদিক থেকে দলীয়করণ নামক ভূত যেদিন থেকে রাজনৈতিক দলগুলোতে চেপে বসেছে, সেদিনই এ সংকটের শুরু হয়েছে। এক সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ করা হতো ব্যক্তির পাণ্ডিত্য, দক্ষতা, নৈতিকতা ও সততা বিবেচনায়। অনেকের উপাচার্য হওয়ার প্রস্তাব ফিরিয়ে দেওয়ার ইতিহাসও এ দেশে বিরল নয়। এখন আর সে অবস্থা নেই।

এর আগে বিভিন্ন অনৈতিক অভিযোগের কারণে পদচ্যুত হয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতা। তাদের বিরুদ্ধে কোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা তাদেরকে এ দুই পদে আসীন করেছিলেন। অল্প দিনের ব্যবধানে তিনিই তাদেরকে দৈত্য হিসেবে অভিহিত করেছেন। দেশব্যাপী ছাত্রলীগ নেতারা কী করছেন, তা কারোই অজানা নয়। ছাত্রলীগের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এবং বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক খন্দকার নাসিরউদ্দিন। ডাকসুর কলুষিত নির্বাচন, চিরকুটে ভর্তির সুপারিশসহ বিভিন্ন কারণে বিতর্কিত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান। সম্প্রতি শিক্ষার্থীরা তার পদত্যাগ দাবিতে ঝাড়ূ মিছিল করেছেন, চিরকুট ভিসি হিসেবে নামকরণ করেছেন। অন্যদিকে, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে আর্থিক কেলেঙ্কারির খবর পরিবেশিত হয়েছে। এ সংক্রান্ত একাধিক ফোনকলের অডিও ভাইরালও হয়েছে। যেখান থেকে উপাচার্যকে নিষ্পাপ ভাবার কোনো উপায় নেই। একজন উপাচার্যের বিরুদ্ধে ছাত্রনেতাদের কোটি টাকা প্রদানের অভিযোগ। উপাচার্য নাসিরউদ্দিনকে অবশেষে পদত্যাগ করতে হয়েছে।

বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। তাদের অপসারণের জন্য আন্দোলন হয়েছে; মাসের পর মাস ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থেকেছে। এর পরও বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দৃশ্যত কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কোনো উপাচার্যকে অপসারণ করা বা কারও বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। উপরন্তু কাউকে আবার দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগ দিয়ে তাকে আরও অনিয়ম করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার মান কেমন, তা নিয়ে রয়েছে নানা প্রশ্ন। দেশে প্রায় অর্ধশত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে একটিও স্থান পায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে যে নতুন জ্ঞান ও ধারণা সৃষ্টি এবং বিতরণের কথা, তা আজ বহুলাংশে অকার্যকর। ক্যাম্পাসগুলো ক্রমেই অস্থির হচ্ছে, সহিংসতা বাড়ছে। আবরারের ঘটনা তার সাম্প্রতিকতম সংযোজন। সেখানে সহনশীলতার লেশমাত্র নেই। এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। এতে হয়তো কোনো পক্ষ ক্ষণিকের জন্য উপকৃত হচ্ছে। এর ফল কিন্তু বইতে হবে গোটা জাতিকে। আজ যারা এ পরিস্থিতি থেকে সুবিধা পাচ্ছে, একদিন তাদেরও মাশুল দিতে হবে। তাই সময় থাকতে বৃহত্তর স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দিকে নজর দেওয়া দরকার। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গতিশীল থাকলে দেশ গতিশীল থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সমৃদ্ধ হলে দেশ সমৃদ্ধ হবে। পণ্ডিত নেহরু যথার্থই বলেছিলেন, 'দেশ ভালো হয়, যদি দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো হয়।'

সাইফুল ইসলাম : সাংবাদিক

মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি - dainik shiksha মাধবীলতা নয়, স্কুলের নাম কচুগাড়ি পুনর্বহালের দাবি খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! - dainik shiksha খুদে শিক্ষার্থীর হাতে অস্ত্র কেনো! এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ - dainik shiksha এইচএসসির ফরম পূরণ শুরু আজ মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে - dainik shiksha মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা হতে পারে জানুয়ারিতে মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা - dainik shiksha মুজিবনগর দিবসে সব স্কুল-কলেজে আলোচনা মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! - dainik shiksha মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষক নিবন্ধন সনদের ফটোকপি পোড়ানো কেমন প্রতিবাদ! কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0033881664276123