বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ২২ হাজার পরীক্ষা করোনায় আটকা - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ২২ হাজার পরীক্ষা করোনায় আটকা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে দেশের উচ্চশিক্ষা কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুধু পাঠদান বন্ধ নয়, একের পর এক বাতিল হয়েছে বিভিন্ন বর্ষের পরীক্ষাও। কোভিড সংকট কাটিয়ে ওঠার পর কীভাবে উচ্চশিক্ষার এ জট কাটানো যাবে তা এখনো নিরূপণ করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

অপরদিকে, কোভিড পরবর্তী দিনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার গতিপথ নির্ধারণে তৎপর হলেও উচ্চশিক্ষা নিয়ে ততটা সরব নয় শিক্ষা প্রশাসন। তাদের এই নীরবতার কারণেই কোভিডে ক্ষতবিক্ষত উচ্চশিক্ষার আপাতত ‘উপশমের’ কোনো লক্ষণ পাওয়া যাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার (১ অক্টোবর) ভোরের কাগজ পত্রিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা যায়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য।

প্রতিবেদনে আরও জান যায়, সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, দেশে ৪৬টি সরকারি এবং ১০৬টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে। বিশেষ করে চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের সংকট বেশি। কারণ তারা হয়তো শিক্ষাগ্রহণ পর্ব শেষে চাকরির বাজারে ঢুকে যেতেন। কিন্তু কোভিড তাদের জীবনের চলার পথই উল্টে দিয়েছে।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ২৯ লাখ শিক্ষার্থী। মাস্টার্স শেষ পর্ব, ডিগ্রি, অনার্স ৩য় বর্ষ ও অনার্স ৪র্থ বর্ষসহ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোর্সের প্রায় ৪০০ পরীক্ষা স্থগিত হয়েছে। আনুমানিক এক হিসেবে দেখা গেছে, কোভিডের ছোবলে দেশের ৪৬ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কোর্সের ২০ থেকে ২২ হাজার পরীক্ষা স্থগিত করতে হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থগিত হওয়া পরীক্ষার সংখ্যাও খুব একটা কম নয়। অথচ কোভিড পরবর্তী সময়ে এসব পরীক্ষা কিভাবে নেয়া হবে তার রূপরেখা এখনও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সুস্পষ্টভাবে জানাতে পারেনি। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় শুধু বলছে, ক্রাশপ্রোগ্রাম নিয়ে দ্রুত এসব পরীক্ষা নেয়া হবে।

সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, মাস দুয়েক আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস করার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু বেশির ভাগ সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সেটি সফল হয়নি। যদিও টেলিটক মোবাইল ফোন উচ্চশিক্ষায় অনলাইনে পাঠদানের জন্য ‘বিডিরেন’ নামে একটি প্লাটফর্ম খুলে তাদের কি কি সহযোগিতা থাকবে তা জানিয়ে লিফলেট বিতরণ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘টেলিটকের ফ্রি ইন্টারনেটে পড়বে সবাই শিখবে সবাই’।

টেলিটক বলছে, বিডিরেনের আওতাধীন সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ১০০ টাকা রিচার্জ করে অনলাইন ক্লাসের সুবিধা পাবে। তবে টেলিটকের এই সুবিধা কাজে লাগিয়েও অনলাইনে পাঠদান করাতে পারেনি বহু বিশ্ববিদ্যালয়। অনলাইন ক্লাসের ক্ষেত্রে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এগিয়ে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়। প্রতিষ্ঠানটি অনলাইনে সব শ্রেণির পাঠদান প্রায় শেষ করে এনেছে। ফলে কোভিডের ছোবলেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট পড়বে না।

গতকাল বুধবার শিক্ষাবিটের সাংবাদিকদের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি অনলাইনে যে মতবিনিময় সভা করেন তাতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষার বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার খবর শুনেই পক্ষ-বিপক্ষ সৃষ্টি হয়। এরফলে অনলাইনে উচ্চশিক্ষার পাঠদানে তখন জোর না পেলেও এখন সংখ্যাটি ধীরে ধীরে বাড়ছে। এর কারণ সম্পর্কে সচিব বলেন, অনেকেই বলেছিলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট খরচ কে দেবে? পরে সরকার টেলিটকের সঙ্গে আলোচনা করে। টেলিটক নামমাত্র মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস সম্প্রচারের সুযোগ দেয়। অন্য অপারেটররাও এখন কমমূল্যে প্যাকেজ ঘোষণার অপেক্ষায় আছে। ফলে উচ্চশিক্ষায় অনলাইন পাঠদান ফলপ্রসূ হবে বলে মনে করছেন তিনি।

কোভিডের ছোবলে উচ্চ শিক্ষায় যে সংকট তৈরি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের উপায় জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আক্তারুজ্জামান বলেন, বৈশ্বিক এই সংকটকে মেনে নিতে হবে। আগে বাঁচতে হবে, তারপরে পরীক্ষার কথা ভাবা যাবে। কোভিড পরবর্তী দিনে উচ্চশিক্ষার গতি কী হবে, আটকে যাওয়া পরীক্ষাগুলোর কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠান খোলার পর কিছু পদ্ধতি, নীতি লাগবে যাতে কম সময়ে বেশি কাজের বাস্তবায়ন করা যায়। তবে তিনি এও বলেন, হতাশাগ্রস্ত হয়ে দিন কাটানো যাবে না। সুদিন আসলে দুর্দিনের কষ্ট ভাগাভাগি করে নেয়ার দৃষ্টিভঙ্গি থাকলে সহজেই সংকট কাটানো যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার ছোবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার বিষয় নিয়ে যেভাবে ঘনঘন বৈঠক করেছে শিক্ষা প্রশাসন; সেভাবে উচ্চশিক্ষার সংকট কাটাতে বৈঠকই করেনি। উচ্চ শিক্ষার সংকট কাটাতে উপাচার্যদের সঙ্গে আলোচনার কথা বলা হলেও সেটি এখনো হয়ে ওঠেনি। ফলে সংকট কাটানোর কোনো উপায়ও বেরিয়ে আসেনি।

জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুনাজ আহমেদ নূর বলেন, সংকট কাটাতে এখনই উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলে দেয়া হোক। কারণ প্রতিটি ঘরের সবাই বাইরে বের হচ্ছেন, অফিস করছেন। এই অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের ঘরে থাকার মানে কী? তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য ‘এডুকেশন বাবল’ করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে পুরো পরিস্থিতি আয়ত্তে আনা সম্ভব। কোভিড পরবর্তী সময়ে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের পথচলার একটি রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন বলেও জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনলাইনের মাধ্যমে পাঠদান শুরু করা হলেও পরীক্ষার ব্যাপারে এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পরীক্ষার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার ওপর। তবে করোনার মধ্যেই কয়েকটি বর্ষের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, যদি নভেম্বর/ডিসেম্বরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু করা যায় তবুও জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরীক্ষা জট অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ক্রাশপ্রোগ্রাম করে জট কাটিয়ে ওঠার আভাসও দিয়েছেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। কয়েকদিন আগে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হারুন অর রশিদ বলেছেন, ছাত্রদের উদ্দেশে বলব, তারা যেন বাড়িতে বসে পড়ালেখা করে। এজন্য যে, এই দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠার পর আমরা একের পর এক পরীক্ষা নিতে থাকব। আগে যেমন আমরা ক্রাশপ্রোগ্রাম করে ওভারকাম করেছি, সেই রকম মেথড এখানেও অ্যাপ্লাই করতে হবে।

হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য - dainik shiksha হাইকোর্টের আদেশ পেলে আইনি লড়াইয়ে যাবে বুয়েট: উপ-উপাচার্য প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ: তৃতীয় ধাপের ফল প্রকাশ হতে পারে আগামী সপ্তাহে ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা - dainik shiksha ভূমির জটিলতা সমাধানে ভূমিকা রাখবেন নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক - dainik shiksha সর্বজনীন শিক্ষক বদলি চালু হোক ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি - dainik shiksha ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের বিএসসির সমমান দিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কমিটি রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার - dainik shiksha রায় জালিয়াতি করে পদোন্নতি: শিক্ষা কর্মকর্তা গ্রেফতার কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.015618085861206