আমাদের দেশে প্রতি বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হলেই দেশে নানা নামে, নানা চাকচিক্যপূর্ণ বিজ্ঞাপনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতিমূলক বিভিন্ন কোচিং সেন্টারের আবির্ভাব ঘটে। একজন শিক্ষার্থী স্বভাবতই তখন কোচিং সেন্টারের দিকে আগ্রহী হয়ে ওঠে। এ সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা শত শত কোচিং সেন্টার। যত্রতত্র এসব কোচিং সেন্টার নানাভাবে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের কাছ থেকে লাগামহীন ফি আদায়সহ বিভিন্ন অজুহাতে বিপুল টাকা আদায় করে নেয়। কোচিং সেন্টারগুলোতে সাধারণত সচ্ছল পরিবারের সন্তানেরাই ভর্তি হয়। কথা হলো, যেই ভর্তি হোক না কেন অযৌক্তিকভাবে টাকা আদায় কিংবা শিক্ষার নামে অরাজকতা ও বাণিজ্য কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
দেশে যত্রতত্র কোচিং সেন্টার যাতে গড়ে না ওঠে এবং কোচিং সেন্টারগুলো যাতে স্বেচ্ছাচারী হয়ে উঠতে না পারে, সেদিকে সরকারের যথেষ্ট নজর দেওয়া উচিত। পাশাপাশি পাঠ্যবইয়ের মধ্য থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন করা হলে শিক্ষার্থীদের ধারণা বদলে যেতে পারে। অনেক শিক্ষার্থীই মনে করে, কোচিংয়ের দেওয়া শিট বা প্রশ্নগুলো থেকেই ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। অনেকেই মনে করে, কোচিং না করলে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়া সম্ভব হবে না। শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ব্যাপারে যে ভীতি কাজ করে, তা দূর করতে হবে। ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কঠিন এক যুদ্ধ’ শিক্ষার্থীদের মনে এমন ভীতিকর ধারণার জন্ম দেয় কোচিং সেন্টারগুলো। এর ফলে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা কেবল কোচিং সেন্টারকেই তাদের বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির জন্য একমাত্র নির্ভরযোগ্য ও প্রাধান মাধ্যম মনে করে।
কোচিং সেন্টারে শুধু সচ্ছল পরিবারের সন্তানরাই নয়, একজন দিনমজুর বা একজন রিকশাচালকও তাঁর সন্তানকে একটি সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় কোচিং সেন্টারে ভর্তি করান। সচ্ছল বা অসচ্ছলতা বলে কিছু নেই, যে পরিবারের সন্তানরাই ভর্তি হোক, কোচিং সেন্টারগুলো তো তাদের ইচ্ছেমতো চলতে পারে না। আমাদের প্রচলিত ধারা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে। একজন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে কোচিং সেন্টারকে নয়, যেন তার মেধা, দক্ষতা ও পরিশ্রমকেই প্রধান মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে—সেটা তার মধ্যে জাগ্রত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির ক্ষেত্রে যে সমস্ত ভীতি ছড়ানো হয়, তা বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে নানা জটিলতার সৃষ্টি যাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা না হয়, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে।
লেখক : শিক্ষক, কারমাইকেল কলেজ, রংপুর