বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং করতে চায় ইউজিসি - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং করতে চায় ইউজিসি

নিজস্ব প্রতিবেদক |

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান রক্ষায় সেগুলোর র‌্যাংকিং করতে চায় বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। তারা এ কাজে বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলকে সঙ্গে নিতে চায়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিংয়ে জোর দিয়ে ইউজিসি দ্রুত এ কাজটি করার জন্য সুপারিশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপতির কাছে। একই সঙ্গে দেশে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিস্তার ঘটায় ইউজিসির সক্ষমতা বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়েছে। দেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দেখভালকারী প্রতিষ্ঠান ইউজিসি তাদের সদ্য প্রকাশিত ৪৫তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব সুপারিশ করেছে। ২৯ ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতির কাছে ইউজিসির চেয়ারম্যান ও সদস্যরা এ প্রতিবেদন জমা দেন।

প্রতিবেদনের সুপারিশ অংশে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সরকারের কাছে মোট ২৯টি সুপারিশ করা হয়েছে। এ বছর সুপারিশমালার শীর্ষে রয়েছে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং ও ইউজিসির সক্ষমতা বৃদ্ধির তাগিদ। র‌্যাংকিংয়ে গুরুত্ব দিয়ে ইউজিসি বলেছে, কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার গুণগত মানোন্নয়নের জন্য পদ্ধতিগত র‌্যাংকিং অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। র‌্যাংকিং পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের উচ্চতর ডিগ্রি অর্জন, সঠিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন, আর্থিক সুবিধা অর্জন, নতুন গবেষকদের গবেষণা কর্মকাণ্ড পরিচালনে সহায়তা এবং প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে গঠনমূলক প্রতিযোগিতা গড়ে তুলতে সহায়তা করে থাকে। তাই সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য এবং আন্তর্জাতিক মানের র‌্যাংকিং পদ্ধতি চালু করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে ইতোমধ্যে গঠিত বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল ও ইউজিসি একত্রে কাজ করতে পারে।

এ কাজে একটি নীতিমালা প্রণয়নের প্রস্তাব করে সুপারিশে ইউজিসি বলেছে, আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং নির্ধারণে যে সূচকগুলো, যেমন- মানসম্পন্ন শিক্ষক, শিক্ষকদের উচ্চতর গবেষণায় নিযুক্তি, শিক্ষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নালে প্রকাশনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল হালনাগাদ তথ্য সংবলিত ওয়েবসাইট ও ডাটাবেজ তৈরি, গ্র্যাজুয়েটদের  চাকরির বাজারে গ্রহণযোগ্যতা, গবেষক ও শিক্ষকদের  বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যকর সহযোগিতা ইত্যাদি বিষয়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। তথ্য ও ডকুমেন্টেশন ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ প্রদান করতে হবে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়কে। সময়মতো আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিং কর্তৃপক্ষ ও ইউজিসির কাছে পেশ করতে হবে এসব তথ্য। এ কাজে এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠিত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি (ইন্টারন্যাশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল) দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দেওয়ার ওপর জোর দিয়ে ইউজিসি দেশে একটি 'ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি' প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব করেছে। এতে বলা হয়, শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের প্রধান শর্ত হিসেবে শিক্ষকদের পাঠদান সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য আন্তর্জাতিক মানের 'ইউনিভার্সিটি টিচার্স ট্রেনিং একাডেমি' প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেলক্ষ্যে সরকারের দিকনির্দেশনা পেলে ইউজিসি উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।

সুপারিশে আরও বলা হয়, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি গবেষকদের সংক্ষিপ্ত জীবনবৃত্তান্ত সংবলিত একটি ডিরেক্টরি তৈরি করা গেলে তাদের গবেষণা কাজে সম্পৃক্ত করা যাবে। এ বিষয়ে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল যাতে দ্রুততার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুণগত মান নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করতে পারে, সেজন্য 'ন্যাশনাল কোয়ালিফিকেশন ফ্রেমওয়ার্ক' (এনকিউএফবি)-এর খসড়াটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে অনুমোদন করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারে। এর বাইরে, অন্য সুপারিশে বলা হয়, উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পৃথক বেতন স্কেল ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা প্রদান করার বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সান্ধ্যকালীন কোর্স বন্ধে জোর দিয়ে ইউজিসি বলেছে, অনেক সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সান্ধ্য কোর্স চালু রয়েছে, যা শিক্ষার সার্বিক গুণগত মানকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এসব সান্ধ্য কোর্স অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

ইউজিসি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ বিষয়ে দৃষ্টিপাত করেছে। ইউজিসি এ বিষয়ে তাদের সুপারিশে বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থী কিংবা কর্মকর্তা-কর্মচারী যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গনে বাংলাদেশের সংবিধানের মূলনীতির পরিপন্থি কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে না পারে, সেজন্য সকলকে নজরদারিতে রাখার ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

এদিকে দৈনিক শিক্ষার অনুসন্ধানে জানা গেছে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর র‌্যাংকিং করতে চায় ইউজিসি সেই কাউন্সিলই পুরোপুরি কাযকর নয়। কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. মেসবাহ উদ্দিন আহমদ আহমেদ সম্প্রতি এক নিবন্ধে কাউন্সিলের করুন চিত্র তুলে ধরে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। 

তিনি লিখেছেন, ‘সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় সরকার কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। যার বাস্তবায়নকাল ২০১৬ থেকে ২০২১ খ্রিষ্টাব্দে পর্যন্ত। এর আসল উদ্দেশ্য হলো, কলেজ শিক্ষকদের মালয়েশিয়ার নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকরা দেশে ফিরে অন্যান্য কলেজ শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেবেন। তবে যে গতিতে বা যে সংখ্যক শিক্ষক নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে, তাতে শিক্ষার মানোন্নয়ন বেশ দুরূহ হয়ে দাঁড়াবে। এ জন্য পাশাপাশি দেশে নব্য প্রতিষ্ঠিত অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলকে লোকবল ও অন্যান্য সহযোগিতা দিয়ে দ্রুত কার্যকর, বেগবান করতে হবে। উচ্চশিক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে, মানসম্মত শিক্ষা দিয়ে আমাদের মানবসম্পদ উন্নয়ন করতে পারলে দেশ দ্রুত উন্নয়নের পথে অগ্রসর হবে। অদূর ভবিষ্যতে জাপানকে ছাড়িয়ে যাওয়া অসম্ভব হবে না আমাদের পক্ষে। এখন আমাদের দরকার মানসম্মত, কর্মমুখী শিক্ষা নিশ্চিত করা এবং এ জন্য অবিলম্বে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলকে পরিপূর্ণভাবে কার্যকর করা।’

 

ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন - dainik shiksha ছুটি না বাড়ালে বাড়ি যেতে হতে পারে ঈদের দিন হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে - dainik shiksha জালিয়াতি করে পদোন্নতি শিক্ষা ক্যাডার গ্যাঁড়াকলে রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা - dainik shiksha রুয়েটের সাবেক উপাচার্য-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে মামলা উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি - dainik shiksha প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে সতর্কীকরণ বিজ্ঞপ্তি উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় - dainik shiksha উপবৃত্তির জন্য সংখ্যালঘু কোটার তথ্য চেয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী - dainik shiksha হাইস্কুলে কমেছে দশ লাখের বেশি শিক্ষার্থী please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0068509578704834