বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির মৌসুম শুরু হয় জুলাই/আগস্ট মাস থেকে; চলে পরবর্তী বছরের মার্চ/এপ্রিল পর্যন্ত। এমনিতেই ছাত্রছাত্রীদের জীবন থেকে একটি বছর নষ্ট হয়ে যায়; তার ওপর রয়েছে প্রশ্নফাঁস বিড়ম্বনা, একই দিনে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা আর পরীক্ষার ফর্ম ও ভর্তির টাকা। সাধারণ বা দরিদ্র পরিবারের ছেলেমেয়েদের জন্য এটি অত্যন্ত দুঃসহ হয়ে ওঠে। এর সঙ্গে রয়েছে যাতায়াতের ভাড়া, ধকল ও দুর্ঘটনার সম্ভাবনা, আবাসনের অসুবিধা, ছাত্রীদের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকি আর তাদের অভিভাবকদের দুশ্চিন্তা। মঙ্গলবার (২৮ মে) দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়। নিবন্ধটি লিখেছেন এস এইচ এম মাগফুরুল হাসান আব্বাসী।
বিগত কয়েক বছরে দেখা গেছে একই দিন ও সময়ে একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হতে, কোনোটি আবার আলাদা শহরে। অনেক জায়গায় ছোটাছুটি করতে গিয়ে আর এত এত পরীক্ষার টেনশনে অনেক ছাত্রছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা দিতে না পারার কারণ হয় এটি। মেরিট থেকে ভর্তির পর ওয়েটিং লিস্ট থেকে যেভাবে ছাত্র ভর্তি করানো হয় সেটিও খুব স্বচ্ছ নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এর পিছনে রয়েছে স্বেচ্ছাচারিতা, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের ব্যর্থতা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও ফ্যাকাল্টিগুলোর বাণিজ্যিক মনোভাব।
ব্যতিক্রম অবশ্য রয়েছে যাদের সাধুবাদ জানাতে হয়, যেমন মেডিক্যাল কলেজগুলোর পরীক্ষা অনেক আগে থেকে একইসঙ্গে একই প্রশ্নপত্রে বিভিন্ন জেলায় গ্রহণ করা হয়ে থাকে এবং এবার প্রথমবারের মতো কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো (সর্বমোট ৮টি) গুচ্ছ পরীক্ষা গ্রহণ করতে যাচ্ছে। আশা করা যায়, এতে ছাত্রছাত্রীদের হয়রানি কিছুটা হলেও লাঘব হবে। একইভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলো একদিনে পরীক্ষা নিয়ে পছন্দ আর মেধা অনুযায়ী ছাত্রছাত্রী ভর্তি করানো যেতে পারে। অনুরূপভাবে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, জগন্নাথ, জাহাঙ্গীরনগরের মতো সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইউনিটভিত্তিক গুচ্ছ পরীক্ষা নিতে পারে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেই সেশন জ্যামে পড়ার সম্ভাবনাও অনেকাংশে কমে যাবে। ওয়ান স্টপ সার্ভিস যদি আমরা বিশ্ববিদ্যালয় পাস করা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে আশা করি, তাদেরকে আগে সে সেবা দেওয়া প্রয়োজন যেটি শুরু হওয়া উচিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। আশা করি আমাদের বোধোদয় হবে।
লেখক: উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ভূরুঙ্গামারী, কুড়িগ্রাম