অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হলেও সেখানে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। শুধু জাহাঙ্গীরনগর নয়, দেশের আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার প্রতিষ্ঠানে কেন এ অবস্থা? উপাচার্যরা কি একচ্ছত্র শাসন কায়েম করতে চাইছেন সেখানে? নাকি এর নেপথ্যে রয়েছে কোনো স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী? এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় কী? শনিবার (৯ নভেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত পাঠকদের মতামতে এ বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে। মতামতের বিস্তারিত-
► উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা এক দিনের বিষয় নয়। স্বাধীনতার পরই এ সমস্যার শুরু। অস্থিরতা উৎকট রূপ ধারণ করেছে। রাজনীতিবিদদের জন্য রাজনীতি কঠিন করে তুলব, টাকা কোনো সমস্যা নয়—বিগত একজন স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতির এ কথার পর শিক্ষাঙ্গন উত্তেজিত হতে শুরু করে। বর্তমানে তা প্রকট আকার ধারণ করেছে। উত্তরণের পথ জটিল, তবে সহজ পথও আছে। উপাচার্য নিয়োগে রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তিকে নিরুৎসাহী করে যথাযথ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিলে এবং ছাত্রসংগঠনগুলো ছাত্রদের সমস্যা সমাধানে ব্রতী হলে এমন অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তাদের গৌরব পুনরুদ্ধার করতে পারবে।
আসাদুল্লাহ মুক্তা : মহেশপুর, উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ।
► বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থীরা যে অভিযোগের ভিত্তিতে আন্দোলন করছেন, সেগুলো তদন্ত করে দেখতে হবে। যদি তাঁদের অভিযোগের সত্যতা থাকে, তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যদি ভিত্তিহীন অভিযোগের ভিত্তিতে আন্দোলন করেন, তাহলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সরকারের পচ্ছন্দমতো উপাচার্য নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। সরকারি উপাচার্যরা তাঁদের প্রকৃত দায়িত্ব বাদ দিয়ে সরকারকে খুশি রাখতেই তৎপর থাকেন। এমন অবস্থায় থেকে একজন উপাচার্য কখনোই তাঁর প্রকৃত দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে হলে সবার আগে সরকারি সিদ্ধান্তে ভিসি নিয়োগ বন্ধ করতে হবে।
এ কে এম আলমগীর : ও আর নিজাম রোড, চট্টগ্রাম।
► বিশ্ববিদ্যালয়ে ভবিষ্যতে ভিসি নিয়োগে শিক্ষক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্যানেলের মাধ্যমে সৎ ও যোগ্য ভিসি যেন নিয়োগ দেওয়া হয়। আমরা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগে নতুন করে ভাবতে হবে। শুধু রাজনৈতিক বিবেচনাই যেন প্রধান না হয়ে ওঠে। এ ছাড়া ছাত্রসংসদ চালু থাকতে হবে।
মো. মিজানুর রহমান : বানাসুয়া, কুমিল্লা।
► শিক্ষাঙ্গনের প্রধান উদ্দেশ্য শিক্ষা লাভ করা। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে নানা রকম কথা ও নীতির উল্লেখ করা যেতে পারে। তবে শিক্ষাঙ্গন রাজনীতিমুক্ত করতে পারলে সবচেয়ে ভালো হয়।
মো. রাশেদুল ইসলাম : ভাঙ্গুরা, পাবনা।
► উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য ও বাণিজ্য বাড়ছে। এটা একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত। এসব দূর করতে হবে। যেকোনো মূল্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসা ও নৈরাজ্য বন্ধ করতে হবে।
মো. জামরুল ইসলাম : দক্ষিণগাঁও, সবুজবাগ, ঢাকা।
► দেশের সব উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য ও দুর্নীতি বন্ধে করণীয়—সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে ভিসি হিসেবে নিয়োগ দিতে হবে, সিন্ডিকেট কর্তৃক পরিচালনা কমিটির সুপারিশ গুরুত্ব দিতে হবে, ভিসিকে সব ছাত্রকে একচোখে দেখতে হবে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সব অছাত্র দূর করতে হবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের হলে সিট বণ্টনে প্রভাব বিস্তার বন্ধ করতে হবে।
জাহাঙ্গীর কবীর পলাশ : শ্রীধরপুর, মুন্সীগঞ্জ।
► উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য বন্ধ করতে ছাত্রদের অযৌক্তিক বিষয়ে আন্দোলন করার মানসিকতা দূর করতে হবে। সব ধরনের অনিয়ম ও প্রভাব বন্ধ করতে যোগ্য ও সৎ ভিসি নিয়োগ দিতে হবে।
ফারুক আহমেদ : বাগমারা, রাজশাহী।
► বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা বা অসন্তোষ দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় ছাত্রসংগঠনগুলোরও উচিত কোনো ইস্যুতে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করে মাঠে নামা।
আব্দুর রহমান : দক্ষিণ বিজয়পুর, গৌরনদী, বরিশাল।
► জাতীয় রাজনীতিতে যখন মোটামুটি স্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করছে, ঠিক সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছোটখাটো ঘটনায় অস্থিরতা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের দলাদলি ও অভ্যন্তরীণ কোন্দলে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচিয়ে রাখতে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার বিকল্প নেই। সরকারপন্থী শিক্ষকদের প্রভাব, উপদলে বিভক্তদের নানামুখী চাপ এবং বিরোধী মানসিকতাসম্পন্নদের ক্রমাগত বিরোধিতা, সরকারদলীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের প্রত্যাশা— সব মিলিয়ে ত্রিশঙ্কু অবস্থা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে বাঁচাতে প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষকদের লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে উঠতে হবে।
আহসানুল করিম : চট্টগ্রাম।
► সন্তান উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর অভিভাবক গভীর চিন্তায় পড়ে যান—কিভাবে সন্তানকে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাবেন। সন্তান যখন ভর্তিযুদ্ধে উত্তীর্ণ হয়, তখন মা-বাবার মুখে স্বপ্নময় হাসির ফুল ফোটে। হাজারো সমস্যা থাকা সত্ত্বেও সন্তানের পড়ালেখার খরচ জোগাড় করেন তাঁরা। সন্তান যাতে ভালো থাকে, চিন্তামুক্ত মনে লেখাপড়া করে সে জন্য সংসারের অনেক ক্ষতিকে ক্ষতি মনে না করে লেখাপড়ার খরচ জুগিয়ে যান তাঁরা। সন্তানকে কখনো বিপথগামী দেখতে চান না কোনো অভিভাবক। কিন্তু সন্তান যখন মা-বাবার সুখ কেড়ে নিয়ে রাজনীতি করে, বিপথগামী হয় তখন তাঁদের বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। বাবার টাকা খরচ করে সন্তান কেন রাজনীতি করবে? রাজনীতি করে ছাত্রত্ব নষ্ট করে বিপথগামী হবে? হাজারো প্রমাণ মিলছে ছাত্ররাজনীতিতে জড়িয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ার। বিপথগামী হওয়া থেকে মুক্ত রাখতে চাইলে ছাত্ররাজনীতি বন্ধ করতে হবে।
মো. আজিনুর রহমান লিমন : চাপানিহাট, ডিমলা, নীলফামারী।
► শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। কিন্তু আজ মেরুদণ্ড সোজা রাখার দায়িত্বে যাঁরা নিয়োজিত তাঁরা স্বার্থসিদ্ধির জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে ব্যবহার করছেন। ছাত্ররাজনীতির নামে দলীয় রাজনীতির রাহু থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে মুক্ত করতে পারলে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার গৌরব ও ঐতিহ্য ফিরে আসবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা বাড়ছে। সংকট নিরসনে প্রয়োজন আইনের কঠোর প্রয়োগ। প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে করতে হবে নৈতিক শিক্ষার ব্যবস্থা। শিক্ষাঙ্গনে অপরাজনীতি বন্ধ করতে হবে, শিক্ষা বাণিজ্যিকীকরণ থেকে মুক্ত রাখতে হবে। ভিসি ও শিক্ষক নিয়োগে দলীয়করণ বন্ধ করতে হবে।
আবু সাঈদ দেওয়ান সৌরভ : মিরাপাড়া, রিকাবীবাজার, মুন্সীগঞ্জ।
► সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসে আন্তরিকতার সঙ্গে সমস্যা চিহ্নিত করে অনতিবিলম্বে সমাধান দিতে কর্তৃৎপক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে। শুদ্ধি অভিযানের এ পর্যায়ে সরকারকে মননশীলতার চর্চা করে সমস্যার গভীরে যেতে হবে এবং শিক্ষাঙ্গনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যত্নবান হতে হবে।
এইচ কে নাথ : আকবরশাহ, পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
► উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো যেখানে উচ্চশিক্ষা প্রদান ও গবেষণার ব্যবস্থা থাকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হলো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চিত্র ভিন্ন। এখানে এখন পড়াশোনার চেয়ে নোংরা রাজনীতিকে বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়ে থাকে। ছাত্র-শিক্ষক সবাই জড়িয়ে পড়ছেন এতে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সৃষ্টি হচ্ছে অস্থিতিশীলতা। পাঁচটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে চরম অস্থিরতা। এ অস্থিতিশীলতা দূর করতে হলে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করতে হবে।
মো. আব্দুস সালাম : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
► স্কুল, কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে পা রাখার উদ্দেশ্য একটাই—সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে জ্ঞান ও মেধার দ্বারা দেশ ও দশের সেবা করা। কিন্তু সেই অর্জনের আগেই শিক্ষার্থীদের শিকার হতে হয় নানা বিড়ম্বনার, কখনো হারাতে হয় জীবন। বর্তমানে দেশের পাঁচটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলছে এক অরাজক পরিস্থিতি। দুর্নীতি, সন্ত্রাস, র্যাগিং, টর্চার সেল, গণরুম—বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিকল্প নাম হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে এ ধরনের অপকর্মে ছাত্রদের ব্যবহার করছে, যা কাম্য নয়। অথচ আমাদের ছাত্ররাজনীতির এক গৌরবগাথা রয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৮ সালের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যুত্থান, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাসংগ্রাম, ১৯৯০ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন এবং ২০১৮ সালের কোটাবিরোধী ও নিরাপদ সড়ক আন্দোলন—সবই ছাত্র আন্দোলনের ইতিবাচক দিক। লজ্জার ব্যাপার হলো, উপাচার্যের মতো সম্মানিত পদে যাঁরা আজ আসীন, তাঁরা নানা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন। আসুন আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে অপপ্রভাব থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষা করি।
মো. ইলিয়াছ হোসেন : খটখটিয়া, মহানগর, রংপুর।
► উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাঁরা পড়তে আসেন, তাঁদের সবাইকে আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে। তবেই সুন্দর পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব। এ জন্য শিক্ষার্থী ও ভিসিকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।
মোহনলাল দাস : কুলিয়ারচর, কিশোরগঞ্জ।
► বিচার বিভাগের তদন্তের মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে সংকট দূর হবে।
কামরুজ্জামান : কলাবাগান, ঝিনাইদহ।
► বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি-অনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়। তবে বর্তমানে সীমাহীন আর্থিক, প্রশাসনিক ও একাডেমিক দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ও সংশ্লিষ্টরা। সরকারি বিধি-বিধান না মেনে অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে অনেকেই আর্থিক ব্যবস্থাপনায় সৃষ্টি করেছেন নৈরাজ্য। রাজনৈতিক পরিচয় ও স্বজনপ্রীতির বাইরেও ঘুষের বিনিময়ে অযোগ্য শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ায় প্রশাসনে সৃষ্টি হচ্ছে বিশৃঙ্খলা; অন্যদিকে অযোগ্য ও মেধাহীন শিক্ষকের কারণে একাডেমিক ভবিষ্যৎও হুমকির মুখে পড়ছে। এর থেকে উত্তরণের উপায় খোঁজা জরুরি। ভিসিসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ শিক্ষক শিক্ষকসুলভ নীতি-আদর্শ ও কর্তব্যবোধ জলাঞ্জলি দিচ্ছেন। এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে।
শাহা আলম ইসলাম : আকবপুর, মিঠাপুকুর, রংপুর।
► বহির্বিশ্বের সবাই অবাক চোখে দেখছে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি। বিষয়টি ভালোমতো তদন্ত করে দেখা উচিত। ছাত্রী-ছাত্রীরা আবাসন সংকট, নিম্নমানের খাবার ও সেশনজট নিয়ে যদি আন্দোলন করেন সেটা তাঁদের ন্যায্য দাবি। এসব তাঁদের অধিকার। নতুন ভর্তির সিজনে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এমন অস্থিরতা মোটেও কাম্য নয়। সন্তানদের জন্য আমরা একটি সুন্দর শিক্ষা পরিবেশ চাই।
সাবিনা সিদ্দিকী শিবা : ফতুল্লা, নারায়ণগঞ্জ।
► দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যা চলছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন সংযত হলে এবং উপাচার্যসহ শিক্ষকরা রাজনৈতিকভাবে অতিমাত্রায় তৎপর না হলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পরিস্থিতি আরো ভালো হতো বলেই মনে করি। প্রায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অবস্থা চলছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়, তা কি তাঁরা স্মরণে রাখেন। আমরা চাই উপাচার্যরা সৎ ও আন্তরিক হবেন এবং তাঁদের ব্যক্তিত্বের আলোতে শিক্ষাঙ্গন আলোকিত হবে। তাহলেই শিক্ষাঙ্গন থেকে অস্থিরতা দূর হবে।
মো. তৈয়ব আলী : ফরিদগঞ্জ, চাঁদপুর।
► বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চলমান সংকট নিরসনে দরকার দক্ষ প্রশাসনিক আচরণ, সুশিক্ষা, নীতি-নৈতিকতার চর্চা। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে আন্দোলন হতে পারে। তবে ক্লাস বর্জন করে নয়। আন্দোলনের বিকল্প পদ্ধতির সন্ধান করা উচিত। নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীরা যাতে দুর্ভোগের শিকার না হন, সেই দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে।
নিমাই কৃষ্ণ সেন : বাগেরহাট।
► বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে মুক্তবুদ্ধি চর্চার লালনক্ষেত্র। কিন্তু ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতির বেপরোয়া লেজুড়বৃত্তির কারণে মুক্তচিন্তা ও চর্চা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উন্নত বিশ্বের কোথাও কিন্তু এ রকম লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নেই। সেই সব দেশে ছাত্ররাজনীতি নেই, তবে মুক্তবুদ্ধির চর্চার জন্য ছাত্রসংগঠন আছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি শাহাবুদ্দীন তো অনেক আগেই লেজুড়ভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির বিরোধিতা করে গেছেন। কিন্তু কোনো রাজনৈতিক দলই তাঁর কথা শোনেনি। ছাত্ররাজনীতি এতটাই কলুষিত, ভয়ংকর ও বেপরোয়া হয়ে গেছে যে প্রায়ই কোনো না কোনো মায়ের বুক খালি হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ ও জাতি। কলুষিত হচ্ছে গোটা শিক্ষাব্যবস্থা। গোটা জাতিকে মেধাশূন্য করার সবচেয়ে বড় পদ্ধতি হচ্ছে ছাত্ররাজনীতির নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, যৌন হয়রানি, ইভ টিজিং, শিশু অপহরণ করা ইত্যাদি। ছাত্ররাজনীতি বন্ধ হলে অনেক অন্যায়, অপরাধ আর সন্ত্রাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে কমে যেত! লেজুড়ভিত্তিক ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি এখনই বন্ধ হওয়া উচিত।
মো. জিল্লুর রহমান : সতীশ সরকার রোড, গেণ্ডারিয়া, ঢাকা।
► উচ্চতর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সুযোগ সন্ধানী কিছু শিক্ষার্থীর কাজ হচ্ছে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। কথায় কথায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী স্লোগান দিয়ে আসছেন—ভিসির পদত্যাগ চাই। আসলে এই স্লোগানধারী বা আন্দোলনকারীরা পড়াশোনা করতে আসেন না, ফাঁকফোকর দিয়ে দেখতে আসেন ভিসি কী কী করেন? সত্যিকার অর্থে যাঁরা শিক্ষার্থী তাঁরা এসব আন্দোলনে নেই। তবে তদন্ত দরকার। তদন্তে যদি দেখা যায়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি দুর্নীতিবাজ, তাহলে বিচার হবেই হবে। আর ভিসি যদি নির্দোষ প্রমাণিত হন, তাহলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের নামে অস্থিতিশীলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরতর শাস্তি দাবি করছি।
লিয়াকত হোসেন খোকন : ঢাকা।