বিশ্ববিদ্যালয়ে চাই বিশ্বমানের শিক্ষক - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ে চাই বিশ্বমানের শিক্ষক

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

শিক্ষা মানুষের দিগন্তকে প্রসারিত করে। দিগন্ত সম্প্রসারণের সর্বোচ্চ প্রাতিষ্ঠানিক সোপান বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয় হলো এমন একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে উচ্চশিক্ষা প্রদান করাসহ বিভিন্ন ধরনের গবেষণামূলক কাজকর্ম হয়ে থাকে। বিশ্ববিদ্যালয়কে বলা হয় জ্ঞান সৃষ্টি, আহরণ ও বিতরণ কেন্দ্র। দেশের সর্বোচ্চ মেধাবীরা নিজেদের সত্, যোগ্য, আদর্শবান ও দেশপ্রেমিক নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার অভিপ্রায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বারান্দাকে তাদের পদচারণায় মুখর করে তোলে। ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহেরু বলেছিলেন, ‘একটি দেশ ভালো হয়, যদি সে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ভালো হয়।’ সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ তথা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতি গড়ার নিপুণ কারিগর হচ্ছেন শ্রদ্ধেয় শিক্ষকরা। শিক্ষা যেমন একটি জাতির মেরুদণ্ড, তেমনি শিক্ষক হলেন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মেরুদণ্ড। সোমবার (১৮ নভেম্বর) ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ তথ্য জানা যায়।

প্রাথমিক পর্যায়ে মা-বাবা সন্তানের প্রথম শিক্ষক হিসেবে পরিগণিত হলেও পরবর্তীকালে প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে শিক্ষকরাই হয়ে ওঠেন তাদের দ্বিতীয় পিতামাতা,তাদের দীক্ষাগুরু। চীনের প্রাচীন দার্শনিক কনফুসিয়াস বলেছেন, ‘শিক্ষক হবেন জ্ঞান ও প্রজ্ঞার উত্স। তিনি হবেন একজন আদর্শ শাসক।’

শিক্ষকতা নিঃসন্দেহে একটি মহত্ পেশা এবং শিক্ষকদের সম্মান সবকিছুর ঊর্ধ্বে। শিক্ষকদের কাজ হলো প্রতিটি প্রাণে প্রাণে সত্যের-সুন্দরের আলো ছড়িয়ে দেওয়া। আলোর মশালবাহী যে মানুষটি প্রাণে প্রাণে আলোর স্পর্শ দেবেন, তাকে অবশ্যই হতে হবে একজন আলোকিত মানুষ। বিবেকের রাজ্যে তাকে হতে হবে সদাজাগ্রত। কারণ একজন ঘুমন্ত মানুষ কখনোই আরেকজন ঘুমন্ত মানুষকে জাগাতে পারে না। শিক্ষকের মর্যাদা কতো ঊর্ধ্বে তা আমরা কাজী কাদের নেওয়াজের ‘শিক্ষাগুরুর মর্যাদা’ কবিতাটি পড়ে অনুধাবন করতে পারি। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, শিক্ষকতার মতো মহান পেশাটি আজ লেজুড়বৃত্তির কবলে পড়ে মুখ থুবড়ে নতজানু হয়ে গেছে। অথচ শিক্ষকদের শির থাকার কথা ছিল চির উন্নত। বিশেষ করে দেশ গড়ার সূতিকাগার তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নৈতিকতার অবক্ষয়ে গোটা জাতি স্তম্ভিত। তাদের অনেকেরই নেই বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হবার ন্যূনতম যোগ্যতাটুকুও, তবে যেটা আছে তা হলো শিক্ষকতার পদবিটাকে লজ্জাজনকভাবে দখল করার ক্ষমতা। আর এই কতিপয় শিক্ষকের হাতেই অবলীলায় ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে মহান পেশার মর্যাদা। ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্কেরও চরম বিপর্যয় লক্ষণীয় পর্যায়ে। শিক্ষকদের ওপর থেকে উঠে যাচ্ছে ছাত্রদের শ্রদ্ধাবোধ। এটার জন্য ছাত্রদের নৈতিক অবক্ষয় যেমন দায়ী, তেমনি এর দায়বদ্ধতা অস্বীকার করতে পারবে না শিক্ষকদের বিবেকবর্জিত হীন কর্মকাণ্ড।

আদর্শ শিক্ষক পেতে হলে সংস্কার সাধন করতে হবে চলমান প্রথার। ফলে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষকরা আদর্শ শিক্ষক, গবেষক ও দক্ষ প্রশাসক হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির পাশাপাশি থাকতে হবে পিএইচডি ডিগ্রি। আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণাকর্মও বাধ্যতামূলক করতে হবে। জোর দিতে হবে শিক্ষকের চারিত্রিক গুণাবলির ওপরও। কথায় আছে, দুর্জন বিদ্বান হলেও পরিত্যাজ্য। দুর্জন ব্যক্তি শিক্ষক হলে লাভের চাইতে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি থাকে। একজন দুর্জন শিক্ষকের পক্ষে দেশকে সুনাগরিক উপহার দেওয়া শুধু কষ্টসাপেক্ষই নয়, বরং অসম্ভব ব্যাপারও বটে।

আমাদের দেশে এখনো এমন অসংখ্য শিক্ষক আছেন যাদের দেখলে শ্রদ্ধায় মাথা অবনত হয়ে আসে, দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাওয়ার স্পৃহা জেগে ওঠে, সর্বোপরি যারা শিক্ষার্থীদের জন্য আদর্শ, সেই সব শিক্ষকও আজ কতিপয় শিক্ষক নামধারীদের জন্য অপমানবোধ করে থাকেন।

সময় এখন ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনার। দেশে গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক, পরিবারতান্ত্রিক, স্বজনপ্রীতি, লেজুড়বৃত্তির প্রথা প্রতিহত করে যোগ্য ব্যক্তিকে যোগ্য আসনে আসীন করতে হবে। তবেই সম্ভব হবে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ করা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মহান উক্তি :‘আমলা নয়, মানুষ তৈরি করুন।’ শিক্ষক সমাজের নৈতিক অবক্ষয়ের দিকে দৃষ্টিপাত করে আজ আপসোসের সঙ্গে বলতে হচ্ছে, মানুষ গড়ার কারিগরদের মানুষ করবে কে?

লেখক : সুমনা মৃধা, শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি - dainik shiksha দেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ - dainik shiksha আকাশে তিনটি ড্রোন ধ্বংস করেছে ইরান, ভিডিয়ো প্রকাশ অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী - dainik shiksha আমি সরকার পরিচালনা করলে কৃষকদের ভর্তুকি দিবই: প্রধানমন্ত্রী বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0067131519317627