কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থায় বড় পাঁচ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সাড়া না দেয়ায় এবার গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান। তবে এর পরও প্রশ্ন রয়ে গেছে, এ সিদ্ধান্ত কি মেনে নেবেন সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য? উল্লেখ্য, সম্প্রতি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইউজিসি। শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) যুগান্তর পত্রিকায় প্রকাশিত সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, বলা হয়েছিল, আগামী মাসেই শুরু হবে এ ব্যবস্থায় ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতির কার্যক্রম। তাই আমরা আশা করেছিলাম, আগামী ১ এপ্রিল যে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে, সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণরা এবার কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার মাধ্যমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারবে। কিন্তু বড় কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এ ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তের কথা জানাতে গড়িমসি করায় বিষয়টি চূড়ান্ত করা যায়নি।
ভর্তির ভোগান্তি কমাতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা দীর্ঘদিন ধরে সমন্বিত বা কেন্দ্রীয় ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থার দাবি করে আসছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদও এ ব্যবস্থার পক্ষে তার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। বস্তুত বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনাগ্রহের কারণেই বিষয়টি আটকে আছে।
অভিযোগ আছে, এর পেছনের কারণ হল বিদ্যমান ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বড় অঙ্কের অর্থ আয়। ভর্তি বাণিজ্য ও কোচিং-গাইড বাণিজ্যের জন্য অনেকেই সমন্বিত পদ্ধতির বিরোধিতা করেন। এ পদ্ধতিতে
ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলে এ ধরনের অনৈতিক ব্যবসা নিরুৎসাহিত হবে। সেটা অনেকেই চান না।
তবে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু হলেও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকাংশে লাঘব হবে। সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি, সব প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি, সব কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি, সব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একটি- এভাবে আলাদাভাবে গুচ্ছভিত্তিক ভর্তি পরীক্ষা নেয়া হলেও শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি অনেকটা সহনীয় হবে।
বর্তমানে শুধু মেডিকেল কলেজগুলোতে গুচ্ছভিত্তিক পরীক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে। অনেক আগে বাংলাদেশ ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজির অধীনে কুয়েট, চুয়েট ও রুয়েটে (সে সময় যথাক্রমে বিআইটি খুলনা, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী নামে এগুলো পরিচিত ছিল) একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সমন্বিত পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করা হলেও পরে তা বাতিল হয়ে যায়।
আমরা মনে করি, ইউজিসি পাঁচটি বা ছয়টি গুচ্ছ পরীক্ষার মাধ্যমে তাদের নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পথে অগ্রসর হতে পারে। আশা করব, দেশের সব ধরনের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এ পদক্ষেপ মেনে নেবে। জানা গেছে, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বৈঠক হবে।
আমরা প্রত্যাশা করছি, সেই বৈঠক থেকে একটি ইতিবাচক ফলাফল বেরিয়ে আসবে। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের স্বার্থে সমন্বিতই হোক বা গুচ্ছভিত্তিক, এ ধরনের ভর্তি পদ্ধতি চালু হওয়াটা জরুরি হয়ে পড়েছে। আশা করি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যরা এটি অনুধাবন করবেন। পরবর্তী সময়ে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকেও এ পথেই এগোতে হবে।