বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন - দৈনিকশিক্ষা

বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন

ড. সাইফুদ্দীন চৌধুরী |

২৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের আয়োজন করা হয়েছে। ১৯৫৩ সালে প্রতিষ্ঠিত দ্বিতীয় বৃহত্তম উচ্চশিক্ষার পাদপীঠ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের এটি দশম সমাবর্তন। 

দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দীর্ঘদিন পরপর সমাবর্তন হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষার্থী মূল সনদ পায় বিলম্বে। এ জন্য অনেকেই সমালোচনা করে থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের। মূল সনদপ্রাপ্তির এই অনুষ্ঠান এত বিলম্বে হবে কেন? অনুষ্ঠানে নিজ নিজ ক্ষেত্রে খ্যাতিমান ব্যক্তিরা 'সমাবর্তন বক্তা' হিসেবে সনদ প্রাপকদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তৃতা দেন। গ্র্যাজুয়েটরা সেখান থেকে ভবিষ্যৎ পথের সন্ধান খুঁজতে থাকেন। 

বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানে প্রতি বছরই সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়, সেখানে আমাদের দেশের চিত্র একেবারেই আলাদা। বাংলাদেশে বর্তমানে ৩৯টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং শতাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কথা বাদই দিলাম। দেশে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের চিত্রও করুণ। একটু ব্যতিক্রম কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮ পর্যন্ত প্রায় অর্ধশত সমাবর্তন অনুষ্ঠান হয়েছে। প্রথম সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় কার্জন হলে ১৯২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। ৩৯ জন গ্র্যাজুয়েটকে সনদ দেওয়া হয় ওই অনুষ্ঠানে। স্যার পি জে হার্টস তখন উপাচার্য এবং সমাবর্তন বক্তা ছিলেন স্যার এ জে আর বুলওয়ার লিটন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ নয় দশকের উল্লেখযোগ্য সমাবর্তন বক্তাদের মধ্যে ছিলেন জন এন্ডারসন, স্যার যদুনাথ সরকার, খাজা নাজিমুদ্দিন, স্যার জে এ হারবার্ট, স্যার ডেভিড হ্যারিসন, এ কে ফজলুল হক, ড. কুদরাত-এ-খুদা, অমর্ত্য সেন প্রমুখ। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৩৬ সালের সমাবর্তনে সর্বোচ্চ ছয়জনকে ডিলিট ডিগ্রি দেওয়া হয়। তাঁরা হলেন- বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, ঐতিহাসিক যদুনাথ সরকার, কবি আল্লামা মুহাম্মদ ইকবাল, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ও শিক্ষাবিদ স্যার এ এফ রহমান। নোবেল পুরস্কার বিজয়ী বাঙালি অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন সমাবর্তন বক্তা হিসেবে অভিভাষণ দেন ১৯৯৯ সালের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে, যেখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে 'ডক্টর অব লজ' ডিগ্রি দেওয়া হয়। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই বছরে গড়ে একবার করে সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হলেও দেশের অন্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এই চিত্র একেবারেই ভিন্ন। ১৯৫৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬১ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৬২ সালে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯৭০ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ওইসব বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনোটিই আমার জানামতে সমাবর্তনের সংখ্যা দশ অতিক্রম করেনি। স্বাধীনতা-উত্তরকালে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা আরও করুণ। 

১৯৭৩ সালে প্রণীত বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশে বলা আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে চিন্তার স্বাধীনতা ও মুক্তবুদ্ধিচর্চার পরিবেশ সংরক্ষিত হবে। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিরঙ্কুশ স্বশাসন প্রতিষ্ঠা করা, যা আমাদের মুক্তবুদ্ধিচর্চার পথ সুগম করবে। অধ্যাদেশের সেই অমিয় বাণী কি রক্ষিত হচ্ছে। 

মূল্যবোধ সংরক্ষণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন জাতীয় অনুষ্ঠানের গুরুত্ব অনেক। দেশ-বিদেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিরা সমাবর্তন বক্তৃতা দেন, যেখানে থাকে শিক্ষার্থীরা পায় ভবিষ্যৎ গড়ার দিকনির্দেশনা, স্বপ্ন গড়ার উপাত্ত-উপকরণ। খানিকটা ব্যয়বহুল হলেও এ ধরনের আয়োজন বৃথা যাওয়ার নয়। পাশ্চাত্য দেশগুলোর মতো প্রতি বছর না হলেও কয়েক বছর পরপর কিন্তু নির্ধারিত একটি সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেন সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন চলে, তার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের মাধ্যমে সরকার এই বিষয়টি মনিটরিং করতে পারে। বর্তমান সরকার শিক্ষার সংস্কারে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সেসব প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসনীয়। দেশে প্রথম গ্রহণযোগ্য শিক্ষানীতিও প্রণীত হয়েছে। সরকারের শিক্ষা সংস্কার পরিকল্পনার আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। স্বাধীনতা-উত্তরকালে বাঙালির আত্মউপলব্ধির প্রশ্নে, বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাদেশের প্রশ্নে এবং আমাদের অধ্যয়ন উপযোগী ক্যাম্পাসের স্বার্থেই তা করতে হবে। 

লেখক: অধ্যাপক ও ডিন, স্কুল অব লিবারেল আর্টস ও সোশ্যাল সায়েন্সেস, রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাক্তন অধ্যাপক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

সূত্র: সমকাল

অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন - dainik shiksha অভিভাবকদের চাপে শিক্ষার্থীরা আত্মকেন্দ্রিক হয়ে উঠছেন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি - dainik shiksha বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মামলা ১২ হাজারের বেশি শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে - dainik shiksha শিক্ষকদের অবসর সুবিধা সহজে পেতে কমিটি গঠন হচ্ছে শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ - dainik shiksha শিক্ষকদের শূন্যপদ দ্রুত পূরণের সুপারিশ ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল - dainik shiksha ইরানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালালো ইসরায়েল চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি - dainik shiksha চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিবের বিরুদ্ধে মাউশির তদন্ত কমিটি কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.0072450637817383