‘বাংলাদেশে অধ্যাপক হওয়া সবচেয়ে সহজ’ শিরোনামে গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত শীর্ষ খবরটি দেশের সচেতন মহলকে রীতিমতো নাড়া দেওয়ার মতো। খবরে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র ১২ বছর শিক্ষকতা করলেই অধ্যাপক হওয়া যায়। দেশের একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদই কালের কণ্ঠকে বলেছেন, এখনকার শিক্ষকদের আগের মতো অভিজ্ঞতা ও প্রকাশনা লাগে না। জ্ঞানচর্চায়ও সেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। অথচ এই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই একসময় অধ্যাপক পদটা খুবই সীমিত ছিল। এ জন্য সাধনা করতে হতো। প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগেই শিক্ষকের চেয়ে অধ্যাপকের সংখ্যা বেশি। অধ্যাপক পদে ২৯ বছর থাকলেও প্রকাশনার বাধ্যবাধকতা নেই। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয়টি হচ্ছে, বিশ্বের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে মর্যাদা নেই বাংলাদেশের শিক্ষকদের। রোববার (২৯ ডিসেম্বর) কালের কণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে এ তথ্য জানা যায়।
সম্পাদকীয়তে আরও জানা যায়, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণা হয় না এমন অভিযোগ অনেক পুরনো। শিক্ষকরাও নিয়মিত ক্লাসে আগ্রহী নন বলে অভিযোগ আছে। ইউজিসি তাদের বার্ষিক প্রতিবেদনে কয়েক বছর ধরেই বলছে, অনেক শিক্ষক নিয়মিত ক্লাস নেন না বা শিক্ষার্থীদের নোটিশ না দিয়ে ক্লাসে অনুপস্থিত থাকেন। একজন শিক্ষককে প্রতি সপ্তাহে কত ঘণ্টা ক্লাস নিতে হবে—এ ব্যাপারে নিজস্ব নিয়ম থাকলেও এর বাস্তবায়ন হয় না। অনেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের চেয়ে ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিক সময় ব্যয় করেন। মৌলিক গবেষণা ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশনা কমে যাওয়ায় প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে দেশের উচ্চশিক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখন শুধু ডিগ্রি প্রদান প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থা আরো করুণ।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঠদান, জ্ঞানচর্চা এবং নতুন জ্ঞানের আবিষ্কার—এই তিনটি বিষয়কে বৈশিষ্ট্য হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু পাঠদান, জ্ঞানচর্চা হলেও নতুন জ্ঞানের আবিষ্কার বা মৌলিক গবেষণা কতটা হচ্ছে বা মৌলিক গবেষণার সংস্কৃতি কি আছে? একটি বিশ্ববিদ্যালয় কোন মানের তার অনেকটা নির্ভর করে গবেষণার ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিমাণ গবেষণাকেন্দ্র আছে, সে তুলনায় এতে কাজ করার মতো গবেষকের সংখ্যা কম। তা ছাড়া গবেষণাকেন্দ্রগুলোতে যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় সেটাও তুলনামূলক কম বলা চলে। অনেক গবেষক আবার বাইরের প্রতিষ্ঠানের জন্য গবেষণা কাজ পরিচালনায় ব্যস্ত থাকেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ে সে অর্থে কোনো গবেষণা কাজ হচ্ছে না। আবার বাংলাদেশের প্রধান প্রধান পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণায় যে বরাদ্দ রাখে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল পরিচয় হচ্ছে, ওই বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা ও প্রকাশনায় কতটা সমৃদ্ধ।
পেশায় আসার পর একজন শিক্ষক যেমন নিজেকে গড়ে তুলবেন, তেমনি তাঁর প্রতিষ্ঠানও তাঁকে গড়ে উঠতে সাহায্য করবে। কিন্তু শিক্ষকতাকে ব্রত হিসেবে নেওয়ার মানসিকতা কি আজকের শিক্ষকদের আছে?