বিসিএস গাইডে মগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা - দৈনিকশিক্ষা

বিসিএস গাইডে মগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

দৈনিকশিক্ষা ডেস্ক |

একাডেমিক নয়, চাকরির গাইড বই মুখস্থ করতে ব্যস্ত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা। নেই আগ্রহ গবেষণা বা ভালো ফলাফলে। বিজ্ঞান বা কৃষির শিক্ষার্থীরা উদ্ভাবনী গবেষণা বাদ দিয়ে মুখ গুঁজে মুখস্থ করছেন বিসিএস গাইড বা ব্যাংক জব সল্যুশন। চাকরি নামের সোনার হরিণের পেছনে ছুটতে গিয়ে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি হতে না হতেই হাতে তুলে নিচ্ছেন বিভিন্ন চাকরির গাইড বই। শিক্ষাজীবনেই কেউ কেউ ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন বিসিএস ভর্তি কোচিংয়ে। পরীক্ষার আগে কোনোরকমে নোট মুখস্থ করে শেষ করছেন একাডেমিক শিক্ষা। ফলে উচ্চশিক্ষা শেষ করলেও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানটা থেকে যাচ্ছে ভাসা ভাসা। দেশের ছয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, মাস্টার্সে অধ্যয়নরত ৯০ ভাগের বেশি শিক্ষার্থী চাকরির প্রস্তুতি নিতেই অধিক সময় ব্যয় করছেন। স্নাতক তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষে এ সংখ্যা ৭০ শতাংশের ওপরে। অনেকে প্রথম বর্ষ থেকেই পড়ার টেবিলে রাখছেন বিসিএস গাইড বা ব্যাংক জব সল্যুশন। শিক্ষার্থীরা বলছেন, চাকরির পরীক্ষায় ৪-৫ বছরের একাডেমিক শিক্ষা কোনো কাজেই আসছে না। এখানে ভালো রেজাল্টেরও গুরুত্ব নেই। নিয়োগ পরীক্ষায় কে কত নম্বর পেল, কার তদবির কত শক্তিশালী সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। তাই শিক্ষাজীবন থেকেই চাকরির প্রস্তুতি নিতে শুরু করছেন তারা। শুক্রবার (১২ জুলাই) বাংলাদেশ প্রতিদিনে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়। প্রতিবেদনটি লিখেছেন শামীম আহমেদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ জ্ঞান অর্জন করবে এবং গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান উদ্ভাবন করবে। সেটা না করে চাকরির পেছনে ছুটতে গিয়ে শিক্ষার মারাত্মক ক্ষতি করছে। এজন্য শিক্ষার্থীদের দোষ দেব না। শিক্ষিত বেকারের তুলনায় সরকারি কর্মসংস্থান খুবই সীমিত। বেসরকারি খাতেও সেভাবে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়নি। এছাড়া বিসিএসকে এমন একটা লোভনীয় অবস্থানে রাখা হয়েছে যে, সবাই এর পেছনে ছুটছে। অপূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান নিয়ে ক্যাডার সার্ভিসে যোগ দিচ্ছে। যারা প্রতিযোগিতায় টিকছে না তারা হতাশায় পড়ছে। অপূর্ণাঙ্গ প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞানের কারণে তারা অন্য কোথাও নিজের দক্ষতা প্রমাণ করতে পারছে না। এভাবে চলতে থাকলে রাষ্ট্রযন্ত্র একসময় বিকল হয়ে পড়বে।’ শিক্ষার্থীদের চাকরিমুখী না হয়ে উদ্যোক্তা হওয়ার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি তিনি বলেন, উদ্যোক্তা তৈরি করতে সরকারকেও সব ধরনের প্রণোদনা দিতে হবে। উদ্ভাবনী কর্মকা-কে পুরস্কৃত করতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীরা এতে আগ্রহী হন।

শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, নবাব সিরাজউদ্দৌলা হলের ৭৯০ শিক্ষার্থীর ৪৮১ জন বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছেন। মাস্টার্সে অধ্যয়নরত প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থীর টেবিল সাজানো চাকরির গাইড বইয়ে। পাঠাগারের টেবিলগুলোয় ছড়িয়ে আছে চাকরির বই। তাতে মুখ গুঁজে আছেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, প্রতি বছর নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির পরপরই কোচিং সেন্টারগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারের আয়োজন করে। এগুলো দেখে প্রথম বর্ষ থেকেই অনেকে বিসিএস বা অন্য চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেন। মাস্টার্স রিসার্চ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সন্দ্বীপ বিশ্বাস বলেন, পরিবার আমাকে অনেক কষ্ট করে পড়াচ্ছে। পরিবারকে মুক্তি দিতে দ্রুত চাকরি পেতে চাই। আমি ডিপার্টমেন্টে ফার্স্ট-সেকেন্ড নই, তাই শিক্ষক হওয়ার সুযোগ নেই। আমার লক্ষ্য বিসিএস ক্যাডার। এটা পাওয়া খুবই চ্যালেঞ্জিং। একাডেমিকে দৈনিক ছয় ঘণ্টা সময় না দিলে বিসিএসে দিতে পারব না। তাই একাডেমিকে যতটুকু না দিলেই নয় ততটুকুই দিচ্ছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলে বৈধ শিক্ষার্থী ১ হাজার ৮৮৪ জন। তবে থাকছেন প্রায় চার হাজার। অধিকাংশই কোনো না কোনো চাকরির প্রস্তুতি নিচ্ছেন। বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছেন এমন শিক্ষার্থীই বেশি। বাংলা বিভাগের মার্স্টাসের শিক্ষার্থী প্রিন্স আহমেদ বলেন, প্রথম শ্রেণির চাকরির মধ্যে বিসিএসের নিয়োগ প্রক্রিয়া তুলনামূলক স্বচ্ছ। এখানে ক্ষমতা চর্চার একটা সুযোগও পাওয়া যায়। তাই সবাই বিসিএসের দিকেই ঝুঁকছেন।  টেলিভিশন, ফিল্ম ও ফটোগ্রাফি বিভাগের শিক্ষার্থী রুবাইয়াত মুরসালিন বলেন, চাকরির নিরাপত্তা, আকর্ষণীয় বেতন, ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগ, চাকরি শেষে আকর্ষণীয় পেনশন, অবসর ভাতা- এসব কারণ শিক্ষার্থীদের দারুণভাবে বিসিএসমুখী করেছে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি লাইব্রেরি। উন্মুক্ত লাইব্রেরিতে ৫০০ জনের বসার ব্যবস্থা আছে। আসনগুলো সব সময় পরিপূর্ণ থাকে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী যায় চাকরির প্রস্তুতি নিতে। এখানে চাকরির গাইড, বিভিন্ন গবেষণা বই, পত্রিকা- সব আছে। বাইরে থেকেও বই নিয়ে যাওয়া যায়। অন্যদিকে একাডেমিক লাইব্রেরিতে বিভিন্ন ডিপার্টমেন্টের একাডেমিক বই থাকে। ৩০০-৪০০ জন বসার ব্যবস্থা থাকলেও পরীক্ষার আগ মুহূর্ত ছাড়া কখনোই এখানে ৫০-৬০ জনের বেশি শিক্ষার্থী থাকেন না।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, মাদার বখশ হলে আবাসিক শিক্ষার্থী ৫৮৪ জন। হলটিতে এক জরিপে দেখা যায়, ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থীই একাডেমিক পড়াশোনার চেয়ে চাকরির পড়াকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। তৃতীয় বর্ষ থেকে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা একাডেমিক পড়াকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বললেই চলে। ২১০ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, সরকারি চাকরির যে বাজার তাতে টিকে থাকতে ছাত্রাবস্থায় চাকরির পড়াশোনার বিকল্প নেই। একাডেমিকে যা পড়ানো হয়, সেগুলো চাকরির পরীক্ষায় কোনো কাজে আসে না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারে সরেজমিন শতকরা ৯০ ভাগ শিক্ষার্থীকে চাকরির পড়াশোনায় ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে। বাকি ১০ ভাগ যারা একাডেমিক পড়াশোনা করছেন, তারাও ফাইনাল পরীক্ষা চলছে বলে পড়তে এসেছেন। ইতিহাসের এক শিক্ষার্থী বলেন, প্রতি বছর একটা ব্যাচের ৬০ জন ইতিহাস নিয়ে পড়াশোনা শেষ করছেন। সবাই তো ইতিহাসকেন্দ্রিক ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন না। বাধ্য হয়েই অন্য চাকরির পড়াশোনা করতে হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, আবদুর রব হলে ৫০৯ সিটের বিপরীতে বৈধ ছাত্র থাকেন তিনশর মতো। ১৫টি কক্ষে সরেজমিন দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি টেবিলেই আছে চাকরির একাধিক গাইড। ২৫ জনের সঙ্গে কথা বললে ২০ জনই বলেন, তারা বিসিএস প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ১৬ জন জানান, তাদের প্রথম লক্ষ্য বিসিএস ক্যাডার। অন্যরা জানান, যে কোনো চাকরি পেলেই তারা খুশি। এজন্য তারা বিসিএস গাইড পড়ছেন।

ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি - dainik shiksha ষষ্ঠ-নবম শ্রেণিতে ষাণ্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নের সূচি শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ - dainik shiksha অষ্টম পর্যন্ত অবৈতনিক শিক্ষায় সরকারকে সহযোগিতা করবে ইউএনএফপিএ ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র - dainik shiksha ইসরায়েলকে বোমা পাঠানো বন্ধ রাখছে যুক্তরাষ্ট্র ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে - dainik shiksha ভুইফোঁড় শিক্ষক সমিতি নেতাদের এমপিও বাতিল হতে পারে শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ - dainik shiksha শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবইয়ের সংশোধনী প্রকাশ ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! - dainik shiksha ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের জাপান টিকিট ৩০ লাখ! জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল - dainik shiksha জাল সনদধারী শিক্ষকের এমপিও বাতিল কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে - dainik shiksha কওমি মাদরাসা : একটি অসমাপ্ত প্রকাশনা গ্রন্থটি এখন বাজারে দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে - dainik shiksha দৈনিক শিক্ষার নামে একাধিক ভুয়া পেজ-গ্রুপ ফেসবুকে please click here to view dainikshiksha website Execution time: 0.014271020889282