একটি দেশের তরুণ সমাজই দেশের ভবিষ্যৎ। কিন্তু সেই তরুণ সমাজই অদক্ষ হয়ে গড়ে উঠলে সেই দেশের ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
বর্তমান তরুণ সমাজ গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেই ছোটে বিসিএস-এর দিকে। আবার অনেকে আছে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েই ক্লাসের পড়া কম পড়ে বিসিএস-এর প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করে। আবার অনেকে আছে আরও ২-৩ বছর আগে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করেছে কিন্তু এখনো কোনো চাকরি হয়নি—কারণ তাদের কোনো বিশেষ দক্ষতা নেই কোনো বিষয়ে। তাই তারা অন্য কোনো সেক্টরে যেতে চায় না। তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ যে বিসিএস ক্যাডারই হবে। এভাবে প্রতিবছর এদেশে বেকারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। বিশ্বব্যাংক মনে করে, সরকার কম দেখালেও প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এই মোট বেকারের মধ্যে ৩৯ শতাংশই এমন শিক্ষিত বেকার। অন্যদিকে যারা পড়াশোনা করতে পারেনি, মোট বেকারের মধ্যে তাদের হার সবচেয়ে কম, মাত্র ১১ দশমিক ২ শতাংশ। যদি এই সংখ্যা বাড়তে থাকে তাহলে একসময় এই শিক্ষিত বেকারের হার অনেক বেশি হয়ে যাবে। যা এদেশের জন্য একসময় হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
সরকার যদি এই প্রত্যেকটা তরুণ-তরুণীর জন্য বিশেষ বিশেষ খাতে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে তাহলে তারা দক্ষ হয়ে উঠবে। এর ফলে তারা অন্য তরুণ-তরুণীদের চাকরি দিতে পারবে। আলীবাবার প্রতিষ্ঠাতা জ্যাক ম্যা বলেছিলেন, আপনি যদি একটি বানরের সামনে একটি ১০০ ডলারের নোট এবং একটি কলা ফেলে দেন তাহলে বানরটি কলাটিকেই বেছে নেবে কারণ বানর জানে না যে ১০০ ডলার দিয়ে আরও অনেক বেশি কলা কেনা যায়। ঠিক তেমনিভাবে আমাদের যুবসমাজের সামনে চাকরি আর ব্যবসাকে বেছে নিতে বলা হলে তারা চাকরিকে বেছে নেয় কারণ তারা এটা বুঝতে পারে না যে, ব্যবসার মাধ্যমে আরও অনেক চাকরি দেওয়া যায়।
বর্তমান তরুণ সমাজ এটা ভাবে যে তাদের যদি কোনো একটি বিসিএস ক্যাডারে হয়ে যায় তাহলে তাদের জীবন খুব সুন্দরভাবে চালাতে পারবে। কিন্তু তাদের এই ধারণা যে কতটুকু সত্য তা বলা কষ্টকর। সরকারকে অনেক বেশি চেষ্টা করতে হবে তরুণ সমাজকে এই বিসিএসের ঘোর থেকে রক্ষা করতে। এজন্য কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। যেমন গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার পর সরকার তাদেরকে তাদের পছন্দানুযায়ী নির্দিষ্ট খাতে ফ্রি ট্রেনিং দিতে পারে। এরপর একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ ঋণ দিতে পারে। যেটা তারা বিনিয়োগ করবে। এই বিনিয়োগ তাদেরকে উদ্যোক্তা হতে সহায়তা করবে। এর ফলে আশা করা যায়, আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এদেশের এই শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে। সরকারকে এ ব্যাপারে দৃষ্টি দেওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সৌজন্যে: ইত্তেফাক